ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

২২২ মিলিয়নেও ভুলতে পারছেন না লোকসানের অর্থ

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১৭
২২২ মিলিয়নেও ভুলতে পারছেন না লোকসানের অর্থ বাবার সাথে নেইমার

রেকর্ড ট্রান্সফার ফি নিয়ে এতদিন খবরের শিরোনামে নেইমার ছিলেনই। সঙ্গে ছিল বার্সার তাকে ছাড়তে না চাওয়ার নানান কৌশল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিশাল ট্রান্সফার ফি দিয়ে বার্সা থেকে নেইমারকে তুলে নিয়েছে পিএসজি। পাঁচ বছরের চুক্তিতে বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে সই করেছেন নেইমার। সেখানে ১০ নম্বর জার্সিতে দেখা যাবে ব্রাজিলের এই আইকনকে।

পিএসজিতে নাম লেখানোয় ব্রাজিল তারকা বার্সা থেকে কোনো বোনাসের অর্থ পাবেন না। সেটা স্বীকার করেছেন এজেন্ট হিসেবে কাজ করা নেইমারের বাবা।

সিনিয়র নেইমারের বক্তব্যে জানা গেল, পিএসজিতে যাওয়ায় তাদের লোকসান ২৬ মিলিয়ন ইউরো।

বার্সা থেকে প্রাপ্য বোনাস না পাওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে সিনিয়র নেইমারের। তারপরও ছেলের ভালোর কথা ভেবে নেইমারের পিএসজি যাওয়া ঠেকাননি বাবা। বোনাসের অর্থ পেতেই নেইমারের বাবা ছেলেকে বার্সায় থেকে যেতে বলেছিলেন। বাবার কথা না শুনে নেইমার চলে যান পিএসজিতে।

কাতালান ক্লাবটির সাথে হওয়া গত বছরের নবায়নকৃত চুক্তি অনুযায়ী এই বছরই ২৬ মিলিয়ন ইউরো বোনাস পেতেন নেইমারের বাবা। তিনি জানান, ‘আমি ছেলেকে বার্সায় থাকতে বলেছিলাম। কিন্তু, সে শোনেনি। আমি তাকে রাজি করাতে পারিনি। পরে, বার্সার বোর্ডের মানসিকতা দেখে আমি মত বদলে ফেলি। এই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা নেইমারের জন্য কঠিন ছিল বটে। বাবা হিসেবে আমি নিজের অবস্থানে থেকেছি। নেইমার নেইমারের জায়গায়। বাবা হিসেবে নিজেকে ওই জায়গায় নিয়ে দেখুন। ছেলে যখন মনস্থির করে ফেলে, তখন আপনার কি করার থাকে?’

নেইমারের বাবা আরও জানান, ‘আমি কি নেইমারকে বার্সায় থেকে যেতে জোর করতাম? না। কারণ, সে একসময় আমার মুখের ওপর বলতো, তুমিই তো আমাকে যেতে দাওনি। সে খেলে আর আমি তার ক্যারিয়ারের দেখাশুনা করি। ’

২০১৩ সালে সান্তোস থেকে বার্সেলোনায় এসেছিলেন ব্রাজিলের আইকন নেইমার। বার্সা অধ্যায়ে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে ১০৫ গোল করা নেইমার বার্সার জার্সিতে দুটি লা লিগা, তিনটি কোপা দেল রে ও একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগসহ মোট আটটি শিরোপা জিতেছেন। তারপরও কথিত আছে মেসির ছায়া থেকে বের হয়ে বিশ্বসেরা ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নে নেইমার পিএসজিতে চলে গেছেন। ২০১৪-১৫ মৌসুমে বার্সার ‘ট্রেবল’ জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন নেইমার। ২০১৫ সালের বর্ষসেরা ফুটবলার হওয়ার লড়াইয়ে মেসি ও রোনালদোর পিছনে থেকে তৃতীয় হন ব্রাজিলের এই ফরোয়ার্ড।

নেইমারের বাবার কণ্ঠেও একই সুর, ‘মেসি সবসময় বার্সার প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে থাকবে। চীন সফরের পর পরই নেইমার তার একক সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। তাতে, ২৬ মিলিয়ন ইউরো বোনাসের অর্থ আমরা পাচ্ছি না। চুক্তিতে ছিল ক্লাবের সাথে আগে থেকেই দলবদলের আলাপ সেরে রাখা। সেটা আমরা করার সুযোগ পাইনি। তাই বার্সাও আমাদের বোনাসের অর্থ দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এটা আমাদের লোকসানের একটি অংশ। ’

ফুটবলের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম মার্কায় এই প্রতিবেদন প্রকাশ হলে আবারো নেইমারের বাবাকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। অনেকের মতে, নেইমারের বাবা বার্সা থেকে ছেলের পিএসজিতে যাওয়ার সব বন্দোবস্ত করেছেন শুধুই অর্থের লোভে। নেইমারের এজেন্ট হিসেবে বার্সা থেকে পিএসজিতে ট্রান্সফারের বিনিময়ে মোটা অঙ্কের কমিশন পাবেন তিনি। সেই আশাতেই তিনি ছেলেকে উৎসাহিত করেন বার্সা থেকে পিএসজিতে যেতে। ২৬ মিলিয়ন ইউরো লোকসানের যে আক্ষেপ তা নেইমারের নতুন চুক্তির (২২২ মিলিয়ন ইউরো) কাছে কিছুই না।

পাঠকদের জন্য নেইমারের বাবাকে ‘লোভী’ হিসেবে পরিচয় করানো নয়, অতীতের কিছু তথ্য দেওয়া যাক। ২০১৩ সালে স্বদেশী ক্লাব সান্তোস ছেড়ে বার্সায় যোগ দেন নেইমার। সে সময় ছেলেকে বার্সায় সই করতে দেয়ার বদলে যৌনকর্মীদের সঙ্গ দাবি করেছিলেন নেইমারের বাবা। সেই দাবি নাকি লিখিতভাবে চুক্তিতেও রাখা হয়েছিল! যাবতীয় অভিযোগ তুলেছিলেন নেইমারের শৈশবের ক্লাব সান্তোসের সাবেক প্রধান লুই রিবেরো। নেইমারের চুক্তিপত্রে নাকি লেখা ছিল, চুক্তি অনুযায়ী তার বাবা সব রকমের সুবিধা পাবে। বিনামূল্যে খাবার খাওয়া থেকে শুরু করে নেইমারের চুক্তিতে ছিল তার বাবা লন্ডনের পিকাডিলি হোটেলে যৌনকর্মীদের সঙ্গে রাত কাটাতে পারবেন।

নেইমারের বাবার ২০১৪ সালে বলা কিছু কথা পড়া যাক। জনপ্রিয় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানে তিনি বলেছিলেন, ‘অর্থ কখনো মূর্খতাকে ক্ষমা করে না। অর্থের মোহ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হয়। এ কারণেই আমি আমার ছেলের যত্ন নিয়েছি সচেতনতার সঙ্গে। আমি তাকে স্বাধীনতা দিয়েছি যাতে সে সফল হতে পারে। আমলাতন্ত্র অবলম্বন করেছি যেন সে তার ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারে। এটা কোনো লোভ ছিল না, ছিল দায়িত্ব (সংগৃহীত তথ্যসূত্র)। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, ০৭ আগস্ট ২০১৭
এমআরপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।