বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (এনআইসিভিডি) হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় ফিরে যায় নূপুর।
নূপুরের মিনিমাল ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জারি (এমআইসিএস) টিমের প্রধান ডা. আশ্রাফুল হক সিয়াম বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
নূপুরের অপারেশনে অংশ নেওয়া মেডিক্যাল টিমের পক্ষ থেকে নূপুরকে একটি লাল জামা উপহার দেওয়া হয়। এই জামা গায়ে দিয়ে হাসিমুখে বাসায় ফেরে সে।
অপারেশনের পর নূপুর খুব দ্রুত বাসায় ফিরে যেতে সক্ষম হওয়ায় খুশি ডা. সিয়াম।
তিনি বলেন, একজন ওপেন হার্ট সার্জারির রোগী এত দ্রুত হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় ফিরতে পারছে এটা দারুণ লাগছে।
ডা. সিয়াম বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে ওপেন হার্ট সার্জারির পর রোগীকে পোস্ট অপারেটিভ অবজারভেশনে সিসিইউতে সাধারণত ৮/১০ দিন থাকতে হয়। সেখানে মিনিমাল ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জারির (এমআইসিএস) পর নূপুর তিনদিনের মাথায় বাসায় ফিরে যেতে সক্ষম হয়েছে।
নূপুর গতকালই হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় ফিরে যেতে পারতো বলেও জানান তিনি।
এর আগে রোববার (২৫ আগস্ট) প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনো সরকারি হাসপাতালে বুকের হাড় না কেটেই হার্টের (হৃদযন্ত্র) সফল অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (এনআইসিভিডি) হাসপাতালে ডা. আশ্রাফুল হক সিয়ামের নেতৃত্বে এ মিনিমাল ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জারি (এমআইসিএস) করা হয়।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ হাসপাতালে ১২ বছরের মেয়ে নূপুরের এ অস্ত্রোপচারে মোট ১০ জন চিকিৎসক অংশ নেন।
নূপুর অ্যাট্রিয়াল সেপটাল ডিফেক্টের (এএসডি) রোগী। তার হার্টের ওপরের দু’টি চেম্বারে ছিদ্র ছিল বলে বাংলানিউজকে জানান ডা. সিয়াম।
এমআইসিএস হলো কার্ডিয়াক সার্জারির সবচেয়ে আধুনিক চিকিৎসা। এ প্রক্রিয়ায় বুকে ওপেন হার্ট সার্জারির পরিবর্তে ছোট একটি ছিদ্রের মধ্য দিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা বুকের হাড় অর্থাৎ স্টানার্ম না কেটে দু’টি হাড়ের (রিবস) মধ্য দিয়ে অস্ত্রোপচার করেন। এতে ব্যথা কম লাগে, রোগীও দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।
ডা. আশ্রাফুল হক সিয়াম বাংলানিউজকে বলেন, বুকের পাঁজরের তিন বা চার নম্বর রিবসের মধ্যে দিয়ে আমরা ছোট্ট একটি ছিদ্র করি, দুই ইঞ্চির মতো আড়াআড়িভাবে কেটে তারপর অপারেশন করি। ফুসফুসকে চাপা দিয়ে কাজটি করা হয়।
তিনি বলেন, লেপারোস্কোপি সার্জারি সম্পর্কে অনেকেই জানেন। এটিকে হার্টের লেপারোস্কোপি সার্জারি বলতে পারেন। খুব ছোট্ট একটি ছিদ্র করে এ কাজ করা হয়। এতে সাধারণত ইনফেকশনের ঝুঁকি কম থাকে, রক্তক্ষরণের ঝুঁকিও কম, অস্ত্রোপচার পরবর্তী অস্বস্তি কম হয়, ক্ষত দ্রুত সারে, রোগী তাড়াতাড়ি হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় যেতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ডা. সিয়াম বলেন, আমরা সরকারি হাসপাতালে এ অস্ত্রোপচার শুরু করেছি। এটি অনেক চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল। সরকারি হাসপাতালে চাইলেই সব কিছু করা যায় না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে জেনে আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। ওনার জন্যই এটি শুরু করা গেছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ হাসপাতালকে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া ও এ বিশেষ অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানির কারণেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান ডা. আশ্রাফুল হক সিয়াম।
নূপুরের হার্টের অস্ত্রোপচারে প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় নেন চিকিৎসকরা। সে এখন সুস্থ আছে ও তিন ধাপে পর্যবেক্ষণ পর তাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় যাওয়ার জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হবে বলে জানান ডা. সিয়াম।
তিনি বলেন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ হাসপাতাল নিয়মিত এ ধরনের অস্ত্রোপচার করতে পারবে। এজন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি রয়েছে ও চিকিৎসকদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
নূপুরের অস্ত্রোপচারের সময় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্ডিয়াক সার্জন অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ ও ডা. প্রশান্ত কুমার চন্দ উপস্থিত ছিলেন।
দেশে এ ধরনের অস্ত্রোপচার প্রথম করা হয় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৯
এমইউএম/এএ