ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

চীনা টিকার ট্রায়াল অনিশ্চয়তার নেপথ্যে

রেজাউল করিম রাজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২০
চীনা টিকার ট্রায়াল অনিশ্চয়তার নেপথ্যে প্রতীকী ছবি

ঢাকা: বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি) নৈতিক অনুমোদন দিলেও চীনের সিনোভেক কোম্পানির তৈরি করোনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ (ট্রায়াল) অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।  

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, নৈতিক অনুমোদন যথেষ্ট নয়।

টিকা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত দেবে সরকার। তবে কবে নাগাদ এ টিকার ট্রায়াল শুরু হবে তা মন্ত্রণালয় বা গবেষকেরা বলতে পারছেন না।

সম্প্রতি সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, চীনের টিকা দেশে প্রয়োগ হবে কি না কিংবা হলেও তা কবে নাগাদ হবে, সে ব্যাপারে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করেই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

এর আগের দিন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান বলেছিলেন, টিকার ট্রায়াল দুটি রাষ্ট্রের বিষয়। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একটু সময় লাগবে।  
 
করোনা প্রতিরোধে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির একজনের কাছে টিকা ট্রায়ালের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ বিষয়ে আপনারা সরকারকে প্রশ্ন করেন। তারা তো বলেছে, টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।  
 
ভ্যাকসিন ট্রায়ালের বিষয়ে আপনাদের সঙ্গে পরামর্শের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে সম্ভাব্য কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। পরামর্শক কমিটির সভাপতিকে কল দিয়েছিলাম, তিনি ধরেননি।

চীনের করোনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল বৃহৎ পরিসরে বাংলাদেশে হওয়ার কথা ছিল। এই ট্রায়ালে প্রায় ৪ হাজার ২০০ জন স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক এবং নার্সকে পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হতো। এই টিকার টেকনিক্যাল বিষয়গুলো দেখাশোনা করছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি)।
 
টিকার ট্রায়াল বিষয়ে আইসিডিডিআরবির জনসংযোগ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন।

সংশ্লিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চীনের করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, এটা যদি অক্সফোর্ড বা আমেরিকার মর্ডানার ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে হতো না। এখানে আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় ভূরাজনৈতিক বিষয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ।   
 
কবে নাগাদ চীনের টিকার ট্রায়াল শুরু হতে পারে জানতে চাওয়া হলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে এখনও কোনো নির্দেশনা আসেনি। আশা করছি দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি কনভেনশনে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, একটা ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা হবে তা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাথাব্যথা কেন? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চক্রান্তকারীদের প্রবেশ ঘটেছে। ভ্যাকসিন গবেষণা করার জন্য সম্মতি দেওয়ার মালিক বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)। তারা অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এটা স্থগিত করায় প্রমাণ হয়, চক্রান্তে এদের অংশগ্রহণ রয়েছে। ঠিক যেভাবে দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক ওষুধ কোম্পানিসহ পুঁজিবাদের ধারকরা তৃতীয় বিশ্বের কণ্ঠরোধ করে রেখেছে।  

তিনি বলেন, আইসিডিডিআরবি বিভিন্ন কোম্পানির পক্ষে অতীতেও গবেষণা করেছে, কই তখন তো কোনো আপত্তি ওঠেনি। আপত্তির কারণ এই ভ্যাকসিনে ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যবসা রয়েছে। আজকে আমাদের এই আন্তর্জাতিক চক্রান্তকে রুখে দাঁড়াতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে হয়তো বাংলাদেশে ওষুধের উৎপাদনই বন্ধ হয়ে যাবে।  
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, চীনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এটা যথাযথ পদ্ধতিই অনুসরণ করেই হচ্ছিল। গাইডলাইন যেটা আছে তা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত। কোনো টিকা ট্রায়ালের জন্য বিএমআরসি যদি তিন মাসের মধ্যে অনুমোদন না দেয়, তাহলে তা সরাসরি ডিরেক্টর জেনারেল অব ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ডিজিডিএ) কাছে কাছে চলে যেতে পারে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য ন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি রয়েছে। ন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটির ট্যাকনিক্যাল পরামর্শ মোতাবেক ট্রায়ালের অনুমোদন দেওয়া হয়। ট্রায়াল অনুমোদন হলে ওষুধ এবং ডিভাইসের জন্য দুটি আলাদা আলাদা রেজিস্ট্রেশন কমিটি রয়েছে। তারা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখে গবেষণার ফলাফল দেবেন। এটা আন্তর্জাতিক মানের পদ্ধতি। ট্রায়ালের বিষয়ে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের গাইড লাইনের কোথাও বলা নেই যে, সরকার বা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে।
 
করোনা প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য তার ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২০
আরকেআর/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।