ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাংলার প্রাণের কাছে

গাইবান্ধায় লুপ্ত ধুয়াগান, কীর্তনে মজে কদাচিৎ

মাহবুব আলম, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৬
গাইবান্ধায় লুপ্ত ধুয়াগান, কীর্তনে মজে কদাচিৎ ছবি: নূর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গাইবান্ধা ঘুরে: এখনও ঘণ্টা বাজে মন্দিরে, প্রায় সন্ধ্যায় বসে কীর্তনের আসর। লোকজ শিল্পীদের রামলীলায় মুগ্ধ হন ভক্তরা।

তবে আসর বসে না গাইবান্ধা জেলার খেটে খাওয়া নারী-পুরুষের প্রাণের সংগীত জগের গান, যোগীর গান, কাদাখচা গান, মোনাই যাত্রা, ভাসান যাত্রা, ছোকরা নাচ, মালশি গান, বারোমাসি গান, পালা কীর্তন, বিয়ের গীত, বৌ বশ করা গানের।

এর মধ্যে বেশি জনপ্রিয় ‘ধুয়া গান’, যা এখন ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, বাঙ্গালী, ঘাঘট বিধৌত এ জনপদে নেই বললেই চলে!

সদর উপজেলার দরিয়াপুর বাজারের বাসিন্দা প্রবীণ রহমত আলীর ভাষ্য, ‘এ অঞ্চলে নদী ভাঙন-বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষের জীবনাচরণ ও লোকজ সংস্কৃতি এক ভিন্ন আঙ্গিকে গড়ে উঠেছে। এর প্রভাব রয়েছে সংস্কৃতিতেও। তবে যুগের সঙ্গে পরিবর্তনও এসছে। যারা এসব গান ধারণ করে আছেন, তারা খুবই দরিদ্র। অভাবের মধ্যেও ভালোবেসে কেউ কেউ গান করেন, তবে অধিকাংশই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন’।

দরিয়াপুর রজনীগন্ধা ভাওয়াইয়া একাডেমির সহ-সভাপতি চণ্ডী চরণ বর্মণ বাংলানিউজকে বলেন, মন্দিরে এখন প্রতি সন্ধ্যায় কীর্তন হয়। কৃষ্ণলীলাসহ সনাতন ধর্মের নানা সংকীর্তন গাওয়া হয়। তবে গ্রামগঞ্জের জনপ্রিয় লোকগীত হারিয়ে যাচ্ছে। জীবনের তাগিদেই এ পেশা ছেড়ে অন্য কাজে যোগ দিচ্ছেন অনেক শিল্পী।

কাহিনীভিত্তিক ‘ধুয়া গান’ সমবেতকণ্ঠে গাওয়া হয়। একজন মূল গায়েন থাকেন। যিনি মাথায় গামছা বেঁধে, হাতে আরেকটি গামছা নিয়ে নেচে নেচে গান করেন। মূল গায়েন সুর ছাড়ার পরে অন্য শিল্পীরা গোল হয়ে মাটিতে বসে কণ্ঠ মেলান।

কেবল গানেই নয়, গামছা হাতে মূল গায়েনের অঙ্গভঙ্গিতে আনন্দিত হন শ্রোতারা।

সাধারণত ধুয়া গান রচনা ও সুর করেন শিল্পীরা নিজেই। গ্রামীণ প্রচলিত কোনো প্রেম, গল্পগাথা এবং কিসসা কাহিনী নিয়ে ধুয়া গান তৈরি করা হয়। এ গানের সুর অন্য সব লোকগীতের চেয়ে আলাদা।

উত্তরবঙ্গের কৃষিপ্রধান জেলা কুড়িগ্রামে অগ্রহায়ণ মাসে ধান কাটা শেষে বেশ অবসর পান কৃষাণ-কৃষাণীরা। মূলত তখনই ধুয়া গানের আয়োজন করা হয়ে থাকে।

আক্ষেপের স্বরে দরিয়াপুর বাজারের ৮৫ বছর বয়সী রহমত আলী বলেন, শিক্ষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ এসব গানকে বাদ দিচ্ছে। এখন সেসব মধুর সুর আর শোনে না। হাঠৎ মাঝে মাঝে হয়, তবে তা খুবই কম।

‘লাঠিখেলা, জারিগানও গাওয়া হয়, হয় মাহফিলও। কিন্তু সেই জৌলুস নেই’।

তবলচি চণ্ডী চরণ বর্মণ বলেন, এখন যৎসামান্য গানের চর্চার সুযোগ হয়। নিজস্ব কৃষ্টি-কালচার টিকিয়ে রাখতে শত বঞ্চনার পরও চেষ্টা করে যাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৬
এমএ/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বাংলার প্রাণের কাছে এর সর্বশেষ