ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদকে নিয়ে আলোচনা সভা

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১০
আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদকে নিয়ে আলোচনা সভা

বাংলাদেশের মধ্যযুগের সাহিত্য নিয়ে সারা জীবন গবেষণা করেছেন যিনি, তিনি আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ। তার ৫৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ৩০সেপ্টেম্বর ২০১০ বিকেল ৪:০০টায় একাডেমীর সেমিনার কক্ষে প্রবন্ধ পাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এতে ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নির্মাণে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের ভূমিকা’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন ড. মুহম্মদ আবদুল জলিল।

আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক আহমদ কবির ও জনাব তারেক রেজা। স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

স্বাগত ভাষণে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘বাংলা সাহিত্য এবং বাঙালি সংস্কৃতির েেত্র এককভাবে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ নিবিষ্ট চিত্তে যে ভূমিকা পালন করেছেন তা তুলনারহিত। দীর্ঘকাল ধরে অত্যন্ত অভিনিবেশ সহকারে তিনি পুথি সংগ্রহের চেষ্টা করেছেন এবং পুথি সংগ্রহের মধ্য দিয়ে জাতির আত্মার অনন্য প্রকাশ ঘটেছে। বাংলার অন্তজ সমাজে পুথি সাধারণ মানুষের সাহিত্য-পিপাসা নিবৃত্ত করেছে। আমাদের সাহিত্যের ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় যে তথ্য-ফারাক তার ঘুচিয়ে দিতে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ পুথি সংগ্রহ ও সম্পাদনার মাধ্যমে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন। সেজন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ’

প্রাবন্ধিক ড. মুহম্মদ আবদুল জলিল বলেন, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ছিলেন একজন খাঁটি বাঙালি। মধ্যযুগ থেকে শুরু করে ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন পর্যন্ত মুসলমানের আত্মপরিচয় ‘বাঙালি’ না ‘মুসলমান’ এ নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল।   তিনি সে দ্বন্দ্বের শিকার হননি। তিনি প্রকৃতপক্ষে এ সম্পর্কে ছিলেন সপ্তদশ শতাব্দীর কবি আবদুল হাকিমের যোগ্য উত্তরসূরী। তিনি বলেন, আমাদের জাতীয়তার মূল ভিত্তি ভাষা; ধর্ম নয়। আমরা সবাই বাংলাভাষী, তথা বাঙালি। এর বাইরে আমাদের পরিচয় আর কিছুতেই নয় - এই সত্যকে হৃদয়ে লালন করেই আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ সাহিত্য সাধনা করেছেন।

আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ছাড়াও অনেকেই পুথি সংগ্রহ করেছেন। তবে অন্যসব পুথি সংগ্রাহকের সঙ্গে তাঁর গুণগত পার্থক্য ছিল। তিনি শুধু পুথি সংগ্রাহকই ছিলেন না, ছিলেন এর সুযোগ্য বিচার-বিশ্লেষক। নতুন কোনো পুথি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার পাঠোদ্ধার ও মূল্যায়ন করে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশে সচেষ্ট হতেন।

তিনি আরও বলেন, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ দেশ, জাতি, মাটি ও মানুষের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা থেকেই বাংলা সাহিত্যের সঠিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে আজীবন কাজ করে গেছেন।

তারেক রেজা বলেন, আজকাল পুথি-সাহিত্যের চর্চা খুব একটা ল্ক্ষ্য করা যায় না। শেকড় সন্ধানের জন্য পুথি সাহিত্যের চর্চা অত্যন্ত জরুরি। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ এ বিষয়ের পথিকৃৎ। তিনি বলেন, সংস্কৃতি সম্বন্ধে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের ভাবনা ছিল আধুনিক এবং প্রাগ্রসর। তিনি বিশ্বাস করতেন ঐতিহ্যকে অস্বীকার করা মানে নিজের ভিত্তিকে অস্বীকার করা।

অধ্যাপক আহমদ কবির বলেন, বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা যে বাংলা এটা আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের পূর্বে কোনো মুসলমান লেখক দৃঢ়ভাবে বলেননি। বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা সৃষ্টিতে তাঁর ভূমিকা অনন্য। তিনি সাহিত্য ইতিহাসের নির্মাতা নন, উপকরণ সৃষ্টির রূপকার।

সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ছিলেন অসাম্প্রদায়িক অখণ্ড সাহিত্যের আধুনিক চিন্তাবিদ। তিনি তৎকালীন সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতাকে অতিক্রম করতে পেরেছিলেন। রাজনীতি সচেতন আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ দ্বিজাতিতত্ত্বের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, যিনি বাংলায় কথা বলেন কেবলমাত্র তিনিই বাঙালি নন, বাংলাকে যিনি ভালোবাসেন তিনিও বাঙালি।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় : ১৯২৮, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।