ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

কে এই গালিব?

রবাব রসাঁ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১০
কে এই গালিব?

এই উপমহাদেশে উর্দুভাষী নন, এমন অনেক মানুষের কাছেও ‘গালিব’ শব্দটি উচ্চরণ করলে উর্দু সাহিত্যের মহীরুহ মির্জা গালিবের নামটিই প্রথমে মনে আসে। কেননা, এই অঞ্চলে তিনি কবিদেরও কবি।

গীতিকারদের প্রেরণা।

তাই প্রতিবাদ জানিয়ে লেখকদের কলম ধরতে হয় যখন খোদ গালিবের জন্মস্থান ভারতের আগ্রা শহরেই কেউ প্রশ্ন করে বসেন, ‘কে এই গালিব’?

অতি সম্প্রতি ঘটনাটি ঘটেছে মির্জা গালিবের জন্মস্থান আগ্রার কালা মহলে। একজন পাকিস্তানি পর্যটক এই মহল্লায় এসেছিলেন গালিবের জন্মস্থান পরিদর্শনে। এই শহরেই গালিব জন্মেছিলেন ১৭৯৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর। তাই স্বাভাবিক কারণেই পর্যটক ভদ্রলোক তার গাইডকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘গালিব কোথায় জন্মেছিলেন?’

এমন প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে স্বয়ং গাইড জানতে চান, ‘কে এই গালিব?’

সাহিত্য-সমালোচকদের দৃষ্টিতে, ইংরেজি সাহিত্যে শেক্সপিয়ার যেমন অবদান রেখেছিলেন, তেমনি উর্দু সাহিত্যে অবদান রেখেছিলেন মির্জা আসাদুল্লাহ বেগ খান। কলমীনাম গালিব। প্রধান পরিচিতি মির্জা গালিব নামে।

গত ২৫ ডিসেম্বর ‘গালিব : দ্য ম্যান, দ্য টাইমস’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এর লেখক ও বিশিষ্ট ভারতীয় কূটনীতিবিদ পবন কে. ভার্মা অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে দিল্লিতে মন্তব্য করেন, ‘গালিবকে ভুলে যাওয়ার অর্থ হলো (ভারতের) ইতিহাসকে ভুলে যাওয়া। ’ তিনি বিশ্বাস করেন, দিল্লি যেমন ভারতের রাজধানী, তেমনি গালিব হলেন সেই রাজধানীর প্রাণ। আর এ কথা সাহিত্যরসিক মাত্রই জানেন, গালিব ছাড়া উর্দুসাহিত্য প্রাণহীন দেহমাত্র।

‘অনেক বিদেশী পর্যটক এখানে আসেন। গালিবের জন্মস্থান বিষয়ে আমাদের কাছে জানতে চান। আমাদের এ কথা বলতে কষ্ট লাগে যে, আসলে গালিবের স্মৃতিচিহ্ন এখন আর তেমন অবশিষ্ট নেই। এমনকি, তার সাহিত্য বিষয়ে তেমন কোনও আলোচনাও হয় না। ’ কথাগুলো বলেন আগ্রার তাজগঞ্জ এলাকার একজন হোটেল ব্যবসায়ী সন্দ্বীপ অরোরা।

আগ্রার গালিব একাডেমির পরিচালক সৈয়দ জাফরিরও একই অভিমত। ‘স্থানীয় সাহিত্যচক্র বা ঐতিহ্যরক্ষাকারী সংগঠন কেউই গালিবের স্মৃতি জাগ্রত রাখার জন্য তেমন কোনও কাজ করছে না। ’

জাফরির আক্ষেপের সঙ্গে একমত ব্রজ মন্ডল ঐতিহ্য সংরক্ষণ সমিতির সভাপতি সুরেন্দ্র শর্মা। ‘...শুধু গালিব কেন, উর্দু সাহিত্যের অন্যান্য অগ্রগণ্য কবি যেমন, মীর তকী মীর, নাজির আকবরাবাদি প্রমুখ যারা আগ্রায় বসবাস করতেন তাদেরও একইভাবে ভুলে থাকা হচ্ছে। ’

গালিবের স্মৃতিরক্ষার কথা বিভিন্ন সময় বলেছিল আগ্রার শহর কর্তৃপক্ষ। বলেছিল এই মহান কবির নামে একটি রাস্তার নামকরণ করা হবে। কয়েক বছর আগে আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয়ও বলেছিল, গালিবের সাহিত্য প্রচারের জন্য তার নামে একটি ‘চেয়ার’ দেওয়া হবে। কিন্তু এসবই যেন কথার কথা।

এ দিকে এই মহান উর্দু কবির ২১৩তম জন্মদিনে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত পুরান দিল্লীর চাঁদনি চক এলাকায় বসালেন গালিবের আবক্ষমূর্তি। চকের এই কাশেম জান গলিতে গালিব তার জীবনের শেষ সাতটি বছর কাটিয়েছিলেন।

তুর্কি বংশোদ্ভূত মির্জা গালিব ফারসিতে কবিতা লিখতে শুরু করেন নয় বছর বয়সে। পরবর্তীকালে শুরু করেন উর্দুতে কবিতা লেখা। তার প্রথম দিককার গজলগুলোতে ছিল বিরহী মনের আকুতি। পরে প্রকাশ পায় তার সুফি চিন্তাধারা।

শৈশবে বাবা মারা যান, তাই বেড়ে উঠেন চাচার তত্ত্বাবধানে। অনেক অর্থ-কষ্টে কেটেছিল তার জীবন। তবে তার কবিখ্যাতি তার জীবদ্দশাতেই এনে দিয়েছিল রাজকীয় সম্মান। ভারতের শেষ মোঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর এই কবিকে প্রদান করেছিলেন ‘দাবির-উল-মূলক’ ও ‘নজম-উদ-দৌলা’ খেতাব।

জাফরের রাজদরবারে গালিব পেয়েছিলেন অনেক কদর। সম্রাট নিজেও ছিলেন খ্যাতিমান কবি। গালিবকে কাছে রেখেছিলেন ‘কবি-শিক্ষক’ হিসেবে। তাই দিল্লিতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠা ও সম্রাটের নির্বাসনের পর গালিবের কপালে জুটেছিল অনেক দুর্দশা।

এসবই আজ ইতিহাসের অংশ। ‘আজকের দিল্লির অধিকাংশ লোক ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাস বিষয়ে খুবই অজ্ঞ। দিল্লি একটি সমৃদ্ধ শহর অথচ এখানকার অধিবাসীরা এর সমৃদ্ধির কারণগুলোই জানেন না,’ আক্ষেপ করেন লেখক ও কূটনীতিবিদ পবন কে. ভার্মা। তিনি আরো বলেন, ‘এটা কেমন করে সম্ভব সাহিত্যের এই মহীরুহ মির্জা গালিব, যিনি এই দিল্লি শহরে বসবাস করেছিলেন, তাকে অবজ্ঞা করা!’ তিনি আশঙ্কা করেন এই বলে যে, এর পরিণতি হবে খুবই খারাপ।

আইএএনএস ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট অবলম্বনে

বাংলাদেশ সময় ১৮৩৪, ডিসেম্বর ২৯, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।