ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

পল্লীকবি জসীমউদদীনের জন্মদিন

শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১১
পল্লীকবি জসীমউদদীনের জন্মদিন

১ জানুয়ারি পল্লীকবি জসীমউদদীনের জন্মদিন। ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে ১৯০৩ সালে এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

কলেজজীবনেই ‘কবর’ কবিতাটি রচনা করে বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। এ কবিতাটি পরে পাঠ্যবইয়েও নেওয়া হয়। কবিতাটির পাঠ্য হওয়া নিয়ে একটি মজার ঘটানা আছে।

১৯২৭ সালে প্রবেশিকা বাংলার নতুন বছরের পাঠ্যসূচি নির্ধারণ করা হবে। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচকমন্ডলীর সভা বসল। ওই সভার একজন সদস্য ছিলেন ময়মনসিংহ গীতিকার সংগ্রাহক দীনেশ চন্দ্র সেন। তিনি হঠাৎ প্রস্তাব করে বসলেন : জসীমউদদীনের ‘কবর’ কবিতাটি যাতে পাঠ্য করা হয়। কবি জসীমউদদীন তখন ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের আই.এ. ক্লাসের ছাত্র।

স্বাভাবিকভাবেই ওই প্রস্তাব শুনে সভার অন্য সদস্যরা প্রতিবাদের ঝড় তোলেন। কারণ সদস্যরা কেউই জসীমউদদীনের ‘কবর’ কবিতাটির সাথে পরিচিত ছিলেন না। দীনেশ চন্দ্র সেন তখন সভায় বললেন, ‘ঠিক আছে, আমি কবিতাটি পড়ছি, আপনারা একটু ধৈর্য ধরে শুনুন। ’ তিনি পুরো কবিতাটি আবৃত্তি করলেন।

আবৃত্তি শেষ হতেই দেখা গেল উপস্থিত সবার চোখই জলে চিকচিক করছে। সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল সাদামাটা কিন্তু অসাধারণ মর্মস্পর্শী কবিতাটি।

১৯৩১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে এম এ পাস করেন। পল্লীসাহিত্যের সংগ্রাহক হিসেবে জসীমউদদীনের কর্মজীবন শুরু। ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে লেকচারার পদে যোগ দান করেন। পরে অবশ্য সরকারি চাকরি করেন।

জসীমউদদীনের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে রাখালী, নকশী কাঁথার মাঠ, বালুচর, ধানখেত, সোজন বাদিয়ার ঘাট, রঙিলা নায়ের মাঝি, মাটির কান্না, সুচয়নী, হাসু। এছাড়া রয়েছে তাঁর নাট্যগ্রন্থ পদ্মাপার, বেদের মেয়ে, মধুমালা। উপন্যাস বোবাকাহিনী। শিশুদের জন্য লিখেছেন হলদে পরীর দেশে, ডালিমকুমার, এক পয়সার বাঁশিসহ আরো কিছু গ্রন্থ।

এছাড়া রবীন্দ্রনথা ঠাকুরের  ধ্রুপদী সঙ্গীত এবং কাজী নজরুল ইসলামের খেয়াল সঙ্গীতের সমান্তরালে তিনি সঙ্গীতের একটি স্বতন্ত্র ধারা বয়ে নিয়ে যান : লোকসঙ্গীত--মাটি ও মানুষের চিত্র, কথা ও সুর দিয়ে।

তার কিছু বিখ্যাত গান হলো : ১. নিশীথে যাইও ফুলবনে, ২. আমায় এত রাতে ডাক দিলি,  ৩. ও সই কদম তলে, ৪. তোরা  কে কে যাইবি লো জল আনতে,  ৫.আমার গলার হার, ৬.বন্ধু রঙিলা, ৭. ও আমার দরদি, ৮. নদীর কূল নাই, ৯. আমায় ভাসাইলিরে, ১০. আমি বাইয়া যাই কোন ঘাটে, ১১. উজান গাঙের নাইয়া, ১২. বৈদেশি কন্যা, ১৩.  কেমন তোমার মাতা-পিতা, ১৪. আমার বন্ধু বিনোদিয়া, ১৫. আমার সোনার ময়না পাখি ইত্যাদি।

কবি জসীমউদদীন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ১৯৭৬ সালের ১৩ মার্চ, ঢাকায়।

জীবদ্দশায় রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের পর তিনি ছিলেন সবচে জনপ্রিয় কবি। আর কোনও আধুনিক লেখক পল্লীবাংলার জীবন, প্রকৃতি ও মানুষকে এমনভাবে সাহিত্যে তুলে ধরেননি। পল্লীর মানুষের একজন হয়েই তিনি পল্লীর জীবনকে তাঁর সাহিত্যে তুলে এনেছেন, ফলে বাংলার মাটির ঘ্রাণ তার কলমে সবচে সজীব ও অকৃত্রিমভাবে ধরা পড়েছে।    

বাংলাদেশ সময় ১৫১৫, জানুয়ারি ০১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।