‘অন্তরমম বিকশিত করো/অন্তরতর হে/নির্মল করো/উজ্জল করো/সুন্দর করো হে’। ছোট ছোট শিশুদের সমবেত কণ্ঠে এই রবীন্দ্রসঙ্গীতের পরিবেশনা উপভোগ করছিলেন মিলনায়তন পূর্ণ দর্শক।
বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের সূচনা হিসেবে ১৬ জুলাই শুক্রবার সকাল ১০টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে শুরু হয় দু দিনের রবীন্দ্র উৎসব। এবারের সেøাগান : ‘রবীন্দ্রনাথের হাতে হাত রেখে বাংলাদেশ’। বছরব্যাপী রবীন্দ্র কর্মসূচির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন উদ্বোধনী পর্বের স্বাগত বক্তা শিল্পী মিতা হক। তিনি বলেন, ছায়ানট সব আনন্দ-বেদনা ও সংকটে রবীন্দ্রনাথকে অবলম্বন করেই বাঙালি সমাজকে প্রাণিত করতে চেয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় শিশু-কিশোরদের কাছে রবীন্দ্রনাথকে তুলে ধরার প্রয়োজনবোধে এই উৎসবে তাদেরকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে বলে জানান মিতা হক। বছরব্যাপী নানা আয়োজনের প্রথম দিন সকালে উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে ছায়ানটের শিশু নিকেতন ও নালন্দা বিদ্যালয়ের শিশু-কিশোর শিল্পীরা পরিবেশন করে আবৃত্তি, নৃত্য ও গান। মঞ্চস্থ করে নাটক ‘তোতাকাহিনী’। সবশেষে সত্যজিৎ রায়ের নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘রবীন্দ্রনাথ’ প্রদর্শন করা হয় উৎসব মঞ্চে।
১৬ জুলাইর অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ‘আজ বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ সমবেত কণ্ঠে এই গানের পরিবেশনা দিয়ে দ্বিতীয় পর্বের উৎসব শুরু হয় সন্ধ্যা ৬টায়। এই পর্বের সূচনা সঙ্গীত শেষে ‘মুক্তিসংগ্রাম ও সংস্কৃতি’ বিষয়ে আলোচনা করেন ছায়ানট সভাপতি সন্জীদা খাতুন।
একক গান পরিবেশন করেন শিল্পী ফাহমিদা খাতুন, মুজিবুল কাইয়ুম, মইনুদ্দিন নাজির, রোকাইয়া হাসিনা নীলি, অদিতি মহসিন প্রমুখ। বছরব্যাপী ছায়ানট আয়োজনের মূল ভাবনার ওপর তৈরি গীতিআলেখ্য সমবেতভাবে পরিবেশন করেন লাইসা আহমদ লিসা, পার্থ তানভীর নভেদ, শারমীন সাথী ইসলাম, অনিন্দ্য রহমান প্রমুখ। রাত সাড়ে ৯টায় ‘আমার সোনার বাংলা’ জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হয় প্রথম দিন।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন ১৭ জুলাই শনিবার বিকেলে রবীন্দ্রনাথের ‘প্রেমের গান’ বিষয়ক বক্তব্য দেবেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। পরে ছায়ানটের শিল্পীরা পরিবেশন করবেন গান, নৃত্য এবং আবৃত্তি।
বছরের পরবর্তী অনুষ্ঠানগুলো ছায়ানট ভবনে ও ঢাকার বাইরে করা হবে বলে জানান সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল। তিনি বলেন, ২৪ সেপ্টেম্বর ‘গীতাঞ্জলি’ রচনার শতবর্ষ পালন করবে ছায়ানট। এ উপলক্ষে ছায়ানটের সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে সনৎ কুমার সাহার বক্তৃতা। এছাড়া ‘গীতাঞ্জলি’র কবিতা আবৃত্তি ও গান-নাচ পরিবেশন করবেন ছায়ানটের শিল্পীরা।
৫ নভেম্বর ছায়ানট কুষ্টিয়ার শিলাইদহে আয়োজন করবে ‘বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আগামী বছরের ২১ ও ২২ জানুয়ারি ছায়ানট আয়োজন করবে নৃত্য উৎসব। এছাড়া ২১ থেকে ২৮ জানুয়ারি ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে রবীন্দ্রনাথের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।
৪ ও ৫ মার্চ ‘চলচ্চিত্র ও নাটক’ শীর্ষক আয়োজন থাকবে।
সবশেষে ২০১১ সালের ৭ মে থেকে তিন দিনের উৎসবের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ছায়ানটের বর্ষব্যাপী রবীন্দ্র উৎসব।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৪৫১, জুলাই ১৭, ২০১০