ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

ঈদ ও পূজার বিশেষ আয়োজন

ঘন ঘুম ঘোর জাগরণ | নাহার মনিকা

দেশি-বিদেশি গল্প / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১৪
ঘন ঘুম ঘোর জাগরণ | নাহার মনিকা অলঙ্করণ: খেয়া মেজবা

নাফিসা আহমেদ:
একদিনের মধ্যে মেয়েটা দু’বার পত্রিকার সংবাদ হয়ে গেল!
সকালে প্রথম পাতার নিচের দিকে খবরটা পড়ে ভেবেছি অফিসে গিয়ে সারোয়ার ভাইকে ফোন করবো। সাধারণত কোনো ইভেন্টের পরের দিন আমাদের একটু রিল্যাক্স থাকে।

গড়িমসি করে একটু দেরি করে গাড়িতে উঠতেই ড্রাইভার আমাকে অন্য নিউজটা দেখালো। শেষের পাতায় ভেতরের দিকে ছোট্ট খবর। খবরটা পৌঁছাতে পৌঁছাতে হয়তো পত্রিকার কাজ শেষের দিকে ছিল, অথবা অপমৃত্যুর খবরাখবরের জন্য তারা স্পেস খালি রাখে।

“গত রাতে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তরুণীর মৃত্যু। সিএনজিতে বসা লাইলি বেগম নাম্নী তরুণীর পুরো শরীর বাস এবং ট্রাকের পেষণে থেতলে গিয়েছে, তবে তার মুখাবয়ব অক্ষুন্ন আছে। তরুণীর গলায় ঝুলানো ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের কর্মশালায় অংশগ্রহণের পরিচয়পত্র ও মোবাইল থেকে তাকে শনাক্ত করা হয়”।
সংক্ষিপ্ত সংবাদ কিন্তু নিরীহ কিনা বুঝতে পারছি না।
গতকাল বিকেলের দিকে হেনরিয়েটা লাইলিকে খুঁজেছিল। বলেছি— ‘আসলে এমন জেনারেল ওয়ার্কার তো রোজ রোজ কাজ বাদ দিতে পারে না। বোঝই তো নো ওয়ার্ক নো পে’...।
ও একটা ডিজাইনার’স সালোয়ার কিনেছে এখান থেকে, খুব রংদার। আমি জাঁকিয়ে প্রশংসা করি তারপর আর কিছু বলার আগে হরবর করে ওকে সকালের অর্ধসমাপ্ত মিটিং মিনিটস দেখাই।

আমাদের একাউন্টেন্ট সিদ্দিক সাহেব জানেন যে এবারের ইনভইয়েস কোথায় যাবে। এনজিও বলে ওরা বিল নিয়ে গড়িমসি করে না, তবু আজকেই পাঠিয়ে দিতে বলতে হবে। কিন্তু ওরা কি এই খবরটা দেখবে? কোনো ইংরেজী কাগজে এসেছে কিনা দেখা দরকার।

আর লাইলিকে মহাখালিতে ড্রপ করেছিলাম লাঞ্চের পর, কিন্তু নিউজপেপারে লিখেছে রাতের দুর্ঘটনার কথা।
গুড! অনেকগুলো প্রশ্ন আর প্রায় ঘাম দিয়ে আসতে থাকা জ্বর দূরে ঠেলে দিতে পারছি!
সারোয়ার ভাইকে ফোন করে বাংলা কাকতালীয় কথাটার লাগসই ব্যবহার করবো আজকে।


লাইলি বেগম:
আমি ছোড থেইকাই অংকে ভালো। মায় আমারে দশ ট্যাকা দিয়া কইতো, লবণ, ত্যাল, গুঁড়া  মাছের ভাগা, নাইলে ইচা শুটকি আর রসুন কিনতে। আমি সবসময় কাঁচা মরিচ আর ধইন্যা পাতাও আনতাম। মা হাসতো—‘আমার এই মাইয়ার মাথা পরিষ্কার’।

ছোটবেলায় খামাখা প্রশংসা পাইলে আর সবার কি হয় জানি না, আমার ঘি হজম হয় নাই। ‘খামাখা’র মানে নিয়া আমি ভাবছি অনেকদিন। আমার মামাগো বাড়ির সবাই হুদাহুদি’র বদলে খামাখা বলতো। একটু জোর দিয়া বলতো ‘খাম্মাখা, কথা বাড়াইছ না’, আমার মা বলছিল মামারে, ‘আজাইরা প্রশংসা করলে মাথা বিগড়ায়া যাইবো, আর গরীবের মাইয়া মাথা বিগড়াইলে  হজম হয় না’।

আমার মা’র আসলে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি চালানির মতো ব্রেইন আছিল, খালি হজমের গণ্ডগোলে পইরা মেসের পাকশাকের কাম টাম করছে।

মামারা তবু প্রশংসা করতো। কইতো বড় হইলে ডাক্তার হবি। পুরা বংশে পাইছে আর কেউ ক্লাশ ফাইভে বৃত্তি? পুরা বংশ বলতে মা আর মামাগো বংশই। বাপের ঠিকানা আমরা জানি না। বড় বইন কবে মাইনষের বাড়ির কামে গেছে বলতে পারুম না। ইস্কুলে কেউ জিগাইলে ভাবসাব নিয়া বলছি ধানমন্ডি আর গুলশানে কাজ করে, পার্লারে। সুফিয়া বু’র সাথে মা খুব কম দেখা করতে যাইতো, সময় কই? বেশিরভাগ টাইমে আমার ঠ্যালাঅলা মামাগো দুইজনের একজন নাইলে আরেকজন ঘরের সামনে মাটিতে আলগা হইয়া বইসা গামছা দিয়া ঘাড়ের গলার ঘাম মুইছা মায়ের হাতে দলা পাকানো ট্যাকার নোট দিয়া যাইতো। সুফিয়া বু’র ব্যাতন আমাগো ঘর ভাড়া দিতে লাগে, আমার বইখাতা কিনতে লাগে।
দুইজনের একজনরে মা খবর জানাইছিলো,—‘লাইলি ইস্কুলে প্রাইমারি বৃত্তি পাইছে’।
- ‘কও কি?’ মামাগো চোখ পারলে ফাল দিয়া ছিটকায়া বাইর হইয়া আসে। বংশের পরথম ফাইব পাশ, তাও বৃত্তি পাইয়া!’
বেশিদিন আগে না, এইতো উনিশ শো অষ্টআশি সালের কথা।
 
তো মামারা আদর দিয়া আমার মাথা খামাখা কিছু নষ্ট করছিল। ঠ্যালা চালায়া কী আয় বরকত জানি না, তয় এরপর কোনোদিন খালি হাতে আসে নাই। একটা সেভেন আপ, নাইলে চিপ্সের প্যাকেট থাকতো। আর আনতো ঝোলাভর্তি প্রশংসা।
আস্তে আস্তে আমি নাকে গন্ধ পাওয়া শুরু করলাম। মায় চেইতা যাইতো—‘ডেরেনের মইদ্যে পয়দা, এহন ডেরেনের গন্দ সইজ্য হয় না’।

যখন জামা গায় দিয়া স্পঞ্জ পায় দিয়া ইস্কুলে যাইতাম, মামারা দেইখা মায়ের কাছে গাছ লাগাইতো, স্বপ্নের খাজুর গাছ। -‘লাইলিরে ডাক্তারি পড়াইতে হইবো’।
নিজেগো পোলাপানের খবর নাই, বইনের মাইয়ারে পড়াইতে আইছে। পরে ভাইবা দেখছি, মামারা আসলে, ঐ যে কয় না? জাতে উঠছে। আমারে তক্তার সিঁড়ি বানায়া জাতের নৌকায় উইঠা পড়তে চাইছে।
আফসোস, ব্যাঙ্গের গল্পের মতো অবস্থা হইলো।
ব্যাঙ্গের পোলা আইসা মায়েরে কয়— ‘মা হাতি দেখছি, বিরাট বড়’!
মা কয়—‘আমার মতন বড়?’
- আররে নাহ, কোনো ধারণাই করতে পারবা না।
মায় তখন প্যাট ফুলায়—এত বড়
- ধ্যার, তুমার কল্পনাতেই নাই
মা’র খুব রাগ উঠে-আরো ফুলতে থাকে— ‘দ্যাখ এইবার হাতির মতো বড় হইছে?’
ব্যাঙ্গের পোলা হো হো কইরা হাসে। মা আরো বাতাস টানে, পেটের চামড়া ফুইলা টানটান হইয়া যায়, প্রিং প্রিং আওয়াজ হয় টোকা দিলে। কোনমতে জিগায়— ‘এত্ত বড়’?
ব্যাঙ্গের পোলা আবার হাইসা উঠার আগে অর মা ফুট্টুস কইরা ফাইটা যায়। আমার মা’রে আর দুই মামারে ফুলতে ফুলতে ফাইটা যাইতে দেখছি।

মাটির লগে থাইকা মাটিরে টাশকি লাগান যায় না। দামি পাথর হইতে পারলে মাটিরে টাশকি লাগানি যায়। নাফিসা আপা হইলো সেই পাথর। আমি তার চোখের মইদ্যে চড়কগাছ দেখছিলাম। এত দামি শাড়ি, তাও শাড়ি চোখে পড়ে না। চোখে পরে নাফিসা আপারে, আপা সবসময় কাপড়ের আগে আগে থাকে। কি ফর্সা হাত আর আঙ্গুল, হাসলে, কথা বললে মনে হয় চুপ কইরা শুনি। কিন্তু বুন্দিয়ার লাড্ডুর মতন মিষ্টি কথা আর নামানো চোখের মইদ্যে আমি আমার দিকে অবহেলা দেখছি। হেনরিয়েটা ম্যাডাম, দীপেশ স্যার আর আমাদের সারোয়ার স্যারের লগে বইসা খালি আমার দিকে সেই চাউনি। আর কেউ ট্যার পায় নাই, আমি ছাড়া।


নাফিসা আহমেদ:
লাইলির ছবিসহ প্রথম পাতায় প্রথম নিচের দিকে সংবাদটা গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছে। পোশাক শিল্পে নতুন সম্ভাবনাময় ইউনিয়ন নেত্রী, লাইলি বেগম। খবরটা একেবারে ভিত্তিহীন না হলেও খুব অথেনটিক কিছু না।

গতকাল প্রপারেটরি ওয়ার্কশপ ছিল বলে টিভি মিডিয়া ছিল না। প্রেস ছিল, তাও বেশি না। নিউজে আসবে স্বাভাবিক, তবে এভাবে আসবে জানলে সারোয়ার ভাইকে গতকাল সন্ধ্যায়ই ফোন করতাম। পোটেনশিয়াল ক্লায়েন্ট লিস্টে তার নাম তুলে রেখেছি। বলা যায় না ভবিষ্যত। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট শুনতে সফিস্টিকেটেড আর স্মার্ট শোনালেও এর পেছনে কাঠখড় কম পোড়ে না। আমাদের ফার্ম দাঁড়িয়েছে বেশিদিন না।   এখন পর্যন্ত এনজিও সেক্টরে কাজ বেশি, আর ঝামেলাও তুলনামূলক কম। প্রফিট মেকিং সেক্টর ডিলিংসের কমপ্লিকেশন্স অনুমান করা যায়, তবু  মার্কেট এক্সপ্যান্ড বলে কথা!
নিজের ফ্যাক্টরির লাইলি বেগমকে মকবুল সারোয়ার আদৌ মুখ চেনে না। হেনরিয়েটা ওর মেশিনের পাশে না থামলে কেউ ওর নামও জানতো না।   আমি যেভাবে সুসংবাদ দেবো তাতে সারোয়ার ভাই খুশি হতে বাধ্য।
আফটার অল, আমাদের কাজও তো এক রকমের পারফর্মিং প্ল্যাটফর্ম। উই লার্ন হাউ নট টু এক্সপ্রেস নিগেটিভ ফিলিংস ইন পাবলিক।

মেয়েটি লাজুক, তবে বোকা অবশ্যই না। হেনরিয়েটা ওকে পিক না করলে এমন খেয়াল করে কখনো দেখতাম কি? শ্যামলা কচি ত্বক, গড়ন রোগার দিকে, হাইটও বেশি না। তবে সব মিলিয়ে একটা নিপাট নিষ্পাপ ভাব চেহারায়। বয়সের কারণেই হবে। আই উইশ, ঐ বয়সে সবাই আটকে থাকতাম!

সেদিন যখন লাইলি তার বক্তব্য দিচ্ছিল আমি সেলফোনে ভিডিও করে নিয়েছিলাম। ওর গুছিয়ে সহজ ভাষায় বলা কথা, সত্যি বলতে কি ওখানে যত শ্রমিক নেতা, আর ফ্যাক্টরির প্রতিনিধি, আর এনজিও কর্মকর্তারা একের পর এক তাদের বক্তব্য দিচ্ছিল কিন্তু সবাইকে কনভিন্সড করেছে লাইলির সিম্পল বাট পাওয়ারফুল কথাবার্তা। আলটিমেটলি সবার বক্তব্য আর নীতিমালা পরিবর্তনের উদ্দেশ্য তো একই। কিন্তু এই কথা মুখে উচ্চারণ করতে আমার ভেতরেই দু’জন আমি দলাদলি শুরু করে দেয়। অজান্তে কাকে অখুশি করবো এই কথা বলে? কে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, হেনরিয়েটা? নাকি আমাদের পোটেনশিয়াল লোকাল ক্লায়েন্টস?

ক্যানাডার হেনরিয়েটা আর নেপালের দীপেশ, দু’জন ইন্টারন্যাশনাল ডেলিগেটকে একটা লোক্যাল ফ্যাক্টরি দেখানোর প্রোগ্রাম ছিল। এম এস গার্মেন্টস জাস্ট র‍্যান্ডম একটা সিলেকশন। এখনো ইউনিয়ন হয়নি এটাও একটা পয়েন্ট। ওভারনাইট অতটা গুছিয়ে ঝকঝকে করে রাখবে ভাবিনি। সারোয়ার ভাইয়ের ‘হাই টি’ খেয়ে আমরা ফ্লোর দেখতে নেমেছিলাম। ট্রেড ইউনিয়নের অন্যান্য পার্টিসিপেন্টরা আজকের ইনফরমাল ভিজিটে আগ্রহী না।

ফ্লোর ঘুরে দেখতে দেখতে হেনরিয়েটা একটা মেশিনের কাছে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। মেয়েটা মাথা নিচু করে কাজ করছিল, ওকে দেখে থামিয়ে দিয়েছে।
- ‘এদের একজনকে আগামীকালের সেশনে আসতে বললে কেমন হয়?’ হেনরিয়েটা উদাহরণ হিসেবে সরাসরি অভিজ্ঞতা শুনতে আগ্রহী। বেশ অকাঠ্য প্রস্তাব। আমি মাথা দোলানোর আগেই সে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করে বসে।
আর আমাদেরকে অবাক করে লাইলি বেগম নিজের নাম বলে, জানায়— ‘ইয়েস ম্যাম, আমি আসবো’।
আই এল ও’র কন্ট্রাক্টের কাজ হলেও থার্ড পার্টি হয়ে এইসব আয়োজনের কিছু দায়ভার আছে। ক্যানাডিয়ান লেবার কংগ্রেসের প্রতিনিধি হেনরিয়েটার প্রস্তাবে নেতিবাচক কিছু বলার প্রশ্নই আসে না।


লাইলি বেগম:
লাশকাটা ঘরে পইরা আছি, একটু পরে ডোম আসবো। ডোমের সঙ্গে ডাক্তারও আসতে পারে। যেই ডাক্তার আমি হইলেও হইতে পারতাম। তবে ডাক্তার সাবেরা নাকি সচরাচর লাশ কাটতে আসে না। তারা ডোমের কাছ থেইকা শুইনা রিপোর্ট লেইখা দেয়। আমার বেলা আসলেও আসতে পারে। আমার জামার সঙ্গে আটকানো সেমিনারের আই ডি আছিল তো!

কত চিন্তা আসতাছে মাথায় কিন্তু জাগনা থাকতে পারতেছি না! কী লেখা থাকবো আমার রিপোর্টে? ছুরির আঘাতে মিত্যু, নাকি এক্সিডেন্ট? ঠিক কোন জাগা কাটা শুরু করবো ডোম? আমার সিনা বরাবর যেইখানে ছুরির দাগ? নাকি আগে পেট বিষ আছে কি না দেখবো? নাকি আমার দুই হাতের গুড়াঁ গুঁড়া হাড্ডি খুইলা ফালাইবো আগে? কী খাইছিলাম ঐদিন?

তানহা আপুগো বাসায় সুফিয়া বু’ আমারে চামুচ দিয়া খাওনের ট্রেনিং দিছিল, যখন কেউ থাকতো না, দুফরের সময়। তাও সেইদিন নাফিসা আপার সামনে ভয়ে ভয়ে খালি একপিস  কেক নিছিলাম, অন্যকিছু নিলে যদি ছিটকায়া পইড়া টইড়া যায়।
আমি অংক পারতাম বইলা মামারা বড়াই করতো। কিন্তু সব অংক কি আর বুজি? এইখানে শুইয়া বাইরের কোনো অংক মিলানো সম্ভব?
কখনো ডোম দেখি নাই, ইচ্ছা করতাছে। গত কয় ঘণ্টা আজব আজব ইচ্ছা করতাছে। ওরা নাকি মদ খায়া মরা কাটতে আসে। ভক ভক গন্ধ আসে। ভালো হইছে, আমি এখন আর গন্ধও পাইতাছি না।

দেশি মদের গন্ধ পাইছিলাম আমাগো গার্মেন্টসের ফ্লোর অপরেশন ম্যানেজার বোরহান ভাইর মুখে। এমনিতেই সিগ্রেট খাইতো, কাছে যাওয়া যায় না। তবু মেশিনের উপরে ঝুইকা মুখের কাছে আইসা কথা কইতো। আর দোষ দেই কেমনে? ফ্লোরে তো মেশিনের আওয়াজ, আর রাস্তার গাড়িরও আওয়াজ ধুমায়া উপরে উইঠা আসে। বোরহান ভাইয়ের মুখের গন্ধে আমার নাড়িভুড়ি উল্টায়া বমি আইসা পড়তো। কিন্তু কিছু কওয়ার উপায় আছে?
আমি কয়েকটা ভুল করছি। কোয়ালিটি কন্ট্রোল থেইকা কাপড় ফেরত আসছে। সুয়েটারের বুকের কাছে স্টিকার সিলাইয়া সুতা ঠিক মতো কাটি নাই।
- ‘আর যেন ভুল না হয়’, কড়া গলা শুনতে শুনতে আমি মাথা নিচা করি। দুইটা লাভ হয়— ভক ভক গন্ধ একটু দূরে থাকে, আর চুপ কইরা থাকি দেইখা বোরহান ভাইয়ের দয়া হয়।

ছুটির পরে ফুটপাত দিয়া যাইতে যাইতে খোদেজা আমার মাজা বরাবর খোঁচা মারে— ‘বোরহান বাইয়ে তরে পছন্দ করছে। আর কেউ হইলে খবর আছিল...। ’

খোদেজা একটা চীজ। বোরহান ভাইয়ের নজর খালি নিজের উপরে রাখতে জান ফানা ফানা কইরা ফেলতাছে। সুফিয়া বু’র দেওয়া আমার নতুন লিবিস্টিক, আমি সিউর অয় চুরি করছে। আর গেল মাসে আবারো দুইশ ট্যাকা হাওলাত নিলো, এখনো দেয় নাই।

আমার কি বেশতি ট্যাকা আছে? দুই ট্যাকা, পাচ ট্যাকা কইরা জমাই। সুফিয়া’বু বিয়ার পর যখন তখন মোবাইলও করতে পারে না। হের স্বামী রাগ করে, বলে— জামাইয়ের চাইতে বইনের টান বেশি। আমি কইছি— ‘সুফিয়া বু, থাউক। নিজের সংসারে মন দে’।
তাও সেইদিন একজনরে দিয়া দুইটা লিবিস্টিক পাঠাইছে।  
তর আর কি খোদেজা, তুই কি আর ইস্কুলে যাবি? আমার সতরো বচ্ছর শেষ হইয়া যাইতাছে। কবে ইস্কুলে যাইতে পারমু? কিন্তু কি যে একটা ইচ্ছা লাম্বা ছিলার মতন টান দেয় ভিতরে, মনে কয় দৌড় দেই, একটা ইস্কুল ঘরের বারিন্দায় গিয়া থামুম। রাস্তায় ভ্যানগাড়িতে, রিক্সায়, প্রাইভেট কারে ইস্কুলের মেয়েগুলিরে দেখলে বুকটা ধরফড় করে আমার। কতদিন উষ্টা খাইছি। খোদেজা কইছে— ‘উষ্টা খায়া পা-র বুইড়া আঙ্গুল গেলে আর মেশিন অপারেটরের কাম করন লাগবো না’।

খোদেজার চেহারা ছবি ভালো। গায়ের রংও পরিষ্কার। সাজতে পারতে জানে, পার্লারেও নাকি কাজ করছে কয়দিন। ঢলঢলাইন্না স্বভাব আছে। খোদেজার বাইরে আমার ভালো মন্দ খোঁজনের  উপায় আছিল না। একলা বাসা ভাড়া কঠিন ব্যাপার। পাওয়া যায় না, আর ভাড়া দিমু কই থন?

আমার মা কেমনে মরলো সেইটা কমু, নাকি সুফিয়া বু’র সাথে যেই বাসায় দুই বচ্ছর আছিলাম সেইডা কমু?
কিন্তু খোদেজা যে ভেজাল পাকাইতে পারে সেইটা আগে বলি। লাশকাটা ঘরের টেবিলে চট, পলিথিনে প্যাঁচায়া শুইয়া এই ইচ্ছা করতাছে।

আমার লিবিস্টিক লাগায়া ফ্যাক্টরিতে আসে, আমার কাছ থেইকা ট্যাকা নিয়া ফেরত দেয় না, আবার আমার লগে শত্রুতামি করে, এমুন খানকির লগে আমি বস্তির ঘর ভাড়া নিছিলাম। বিশ্বাস জাইয়েন দোহাই, আমি এইসব খানকি-মাগি মার্কা গালি গালাজ করতাম না। ফাইবের বৃত্তি আমারে কিছু হইলেও ভদ্র বানায়া দিছিল, গালি গালাজ মনে আইলেও মুখে আনি নাই। বৃত্তি’র সার্টিফিকেটটা চোখের সামনে আইসা ঝুলতো।

তয় অইন্যদিকে ধরলে খোদেজা আমার অনেক কান্দন মুছাইছে। কতবার মা’র লিগ্যা কানতে কানতে জারেজার হইছি, ও আমার মাথায় নাইরকেল তেল ডইলা বেণি বানায়া দিছে। খানা পাকাইছে। আমার কাপড় ধুইয়া দিছে। মনডা খুব বড় খোদেজার। না জিগায়া আমার সেলোয়ার কামিজ পইরা কাজে গেছে। খোদেজার উড়া উড়া চুল, শরীল নড়াইন্না হাসি, কিছু কইতাম না। তবু তো কেউ আছে। সুফিয়া’বুরে যহন তহন মোবাইল করা যায় না। কেমনে কেমনে খালি খোদেজাই সারাক্ষণ আমার চাইরদিকে ঘুরে ঘারে।
আইসা কয়— ‘তরে বোরহান ভাই নিতে চায়’।
- ‘তুই কইতে পারলি না যে লাইলি অন্য ধরনের মেয়ে’?
- ‘কইছি না? তর চেহারাতো টাঙ্কি মারা মাইয়াগুলির মতো না, তার উপরে ফাইবে বৃত্তি পাইছস, শুইনা আরো নিতে চায়। বুঝস না, টেস্ট বদলাইবো’।

খোদেজা তারপর চকির উপরে বইসা হাত আয়না নিয়া চিমঠা দিয়া ভুরু প্লাক করে। এক একটা ভুরু টান দেয় আর অর ডাইন চোখ দিয়া পানি পড়ে। বোরহান ভাইয়ের লগে খোদেজা ঘিয়র না কই জানি বেড়াইতে গেছিল। রাইত হইয়া গেলে কই জানি বন্ধুর বাড়িতে থামছিল, খালি বাড়ি, হের বৌ পোলাপান নাইওর গেছে। খোদেজা এইগুলি কইয়া হাসে।

ঘরে লাইটের পাওয়ার কম, ভুরু কি দেইখা তুলে, না আন্দাজি টান মারে কে জানে। অর চোখ দিয়া পানি পড়ে আর অয় খিল খিল কইরা হাসে।
      - ‘লাইলি তুই বোরহান বাইরে নিয়া নে’,

খোদেজার চোখের পানিতে নাকের পানি মিইশা যায়, ফোত ফোত আওয়াজ বাইর হয়। ভুরু তুলতেই থাকে, - ‘বুজলি, না অইলে কুনদিন তরে কী ছুতা দিয়া কাম থেইকা ছাড়ায়া দেয়, কে কইবো?’ খোদেজার গলা পীরফকিরগো মতন শুনা যায়।

প্রত্যেকদিন একলগে থাকি, হারামজাদি এত বড় কথা কইলো আমারে? রাগে আমার শইল্লে আগুন জ্বলে। কিন্তু কিছু কইতে পারি না। বোরহানের লগে গিয়া স্পাইং করবো না, বিশ্বাস কী? আমারে কাজ থেইকা ফায়ার করনের ছুতা খোদেজা নিজেই মনে কয় খুঁজতাছে।

প্রত্যেকদিন একলগে আসি যাই, অরেই এখন বড় শত্রু মনে হয়!
সুফিয়া বু’র লগে দুই বচ্ছর থাকছি তানহা আপুগো বাসায়। আমার অনেক লাভ হইছে। ইস্কুলে যাই নাই, কিন্তু পড়ছি। তানহা আপুর বই। খালাম্মা চিন্তার বায়রা ভালো মানুষ আছিল। মা মইরা গেলে সুফিয়া বু’রে কইছিল— ‘বোনকে একলা কোথায় রাখবে, আনো তোমার সঙ্গে থাকুক’।
সুফিয়া’বু তখন বইনের গুণ বর্ণনা করছে।
ফাইবে বৃত্তি পায়া কি যে ভালো একটা কাজ করছিলাম। খালাম্মা আমারে তানহা আপুর রুম গুছানো, আর কাপড় ঠিক করার কাজ দিলো। সবাই বাইরায়া গেলে আমি বই পড়ি। টিভিতে ইংরাজি কার্টুন দেখি। পাকের ঘর মুইছা পানির বালতি টিভির সামনে রাইখা সুফিয়া’বু কয়— ‘খাড়া লাইলি, তরে আবার ইস্কুলে ভর্তিক করুম’। অর কপালে পুতির মতো ঘাম আর চিকচিকা খুশি। কালাকুলা বইন আমার ঘর মুছার আগে ফ্যান ছাইড়া দেয়।

আমি, তানহা আপুর গ্রিন হেরাল্ডের স্কুলের ক্লাস ফাইভের বই উল্টাই পাল্টাই। কিছু কিছু পড়তে পারি, বুঝিও। আপু আমারে নিয়া ইংলিশ সিনেমা দেখে। দুই বচ্ছর মনে কয় বেহেস্তে আছিলাম। কত ইংরেজি শব্দ শিখলাম। তানহা আপু স্কুলের খাতা আমারে পইড়া শুনাইতো। আমি সব বুঝতাম।


নাফিসা আহমেদ:
ছাপা শালোয়ার কামিজ পরে লাইলি বেগম সত্যি সত্যি র‍্যাডিসনের সেমিনার রুমে চলে এলো! হেনরিয়েটাই আগে দেখেছে, হেসে হেসে করমর্দন করে রিসেপশন টেবিল থেকে ওর নামে আইডি লিখিয়ে ওড়নার ওপরে পিন দিয়ে আটকে দিলো, তারপর নিজের পাশের চেয়ারে বসিয়েও দিলো!

অধিকাংশ মালিকপক্ষ যেখানে দৃশ্যপট বদলে ফেলতে প্রাণান্ত করছে, মকবুল সারোয়ার সেখানে একজন জেনুইন শ্রমিক পাঠিয়ে দিলো। এটা বিশেষ করে বলতে হবে হেনরিয়েটাকে। আমাদের দেশেও দু’একটা ভালো মালিকপক্ষ আছে।
সকালের চা বিরতির পরে হেনরিয়েটা নিজেই কথা শুরু করে। বিশেষ বক্তব্য শুনবে লাইলি বেগমের কাছ থেকে। কোনো প্রস্তুতি ছাড়া কিভাবে সে ওকে নির্বাচিত করেছে, তাও ব্যাখ্যা করে।

লাইলি একটা ভাঁজ করা কাগজও সঙ্গে আনে নি।
- ‘আমার নিজের কথা বলতে চাই। মা মারা যাওয়ার পর বইনের সাথে বাসায় কাজ করতেছিলাম, প্রায় দুই বৎসর... বোন সেই বিল্ডিং এর পাহারাদারকে বিয়া কইরা ফেললে আমি আবার আশ্রয়হারা হইলাম...’।
হেনরিয়েটা আমাকে ওর কথা অনুবাদ করে দিতে অনুরোধ করে। একটু বিরক্ত লাগলেও আমি যথাসম্ভব তর্জমা করে চলি।
মেয়েটা সবাইকে তার বেতনের খতিয়ান দিলো!
আদাবরে টিনশেড বাসা আরো চারজনের সঙ্গে শেয়ার করে দুই হাজার টাকা করে, যাতায়াত শ’চারেকের মতো, খাওয়াদাওয়া- চাল ডাল, তেল-সাবান এইসব দুই হাজারে কুলায় না। অসুখবিসুখ, ক্লান্তি কিছু টের পাওয়ার আগে সকালে নিজেকে টেনে ফ্যাক্টরিতে ফেলে, আবার সন্ধ্যায় বাসায় ফেরত আনে। ফ্যাক্টরি আর বস্তির ঘর, বস্তির ঘর আর ফ্যাক্টরি, এই চাকার বাইরে একটা শূন্যতা কেবল তারা দেখতে পায়।

লাইলি বেগমের বোন তাকে আবার বাসায় কাজ করতে পরামর্শ দিয়েছে। অন্তত থাকা খাওয়ার চিন্তা নেই। হাজার বারোশ’ বেতন হলে পুরোটাই জমবে। ফ্যাক্টরিতে কাজ করে এই টাকা জমানো অসম্ভব। বাসার কাজেও সকাল সন্ধ্যার ঠিকানা থাকে না, তবে ভালো মালিক হলে অন্য কথা। কিন্তু লাইলি তার নিজের ঘরে নিজ আয়ে ভাত ফুটিয়ে খেতে চায়। তার আবার স্কুলে ফেরত যেতে ইচ্ছে করে।
- ‘বলতে পারেন আমার ভবিষ্যত কী?’ এই বলে লাইলি বেগম তার রিন রিনে কণ্ঠস্বর থামিয়ে দিলে ঘরের কেউ বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে না। ওর কথা অনুবাদ করতে গিয়ে আমার নিজের কণ্ঠ বেমানান লাগে।
হেনরিয়েটা অল্প আয়াসে এমন কেস স্টাডি পেয়ে চাপা খুশিতে ঝলমল করছে, টের পাই।

পরে ভেবে দেখার চেষ্টা করেছি, কেন আমি এইটুক একটা মেয়ের ওপর বিরক্ত হচ্ছিলাম। নারী হিসেবে গার্মেন্টস কর্মীর প্রতি আমার দরদের কথা সব সময় মুখে বলি। ও আমাকে অবাক করছিল বলে?
নাকি হেনরিয়েটা ওকে বাড়তি মনযোগ দিচ্ছিল বলে?
এরকম সুনির্দিষ্ট অনুভূতির জন্য কি মানুষও র‍্যান্ডমলি সিলেক্টেড? যেমন আমার হচ্ছিল লাইলির মতো একটা পরিচিতিবিহীন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির কর্মী মেয়ের প্রতি।
কোনো কারণ ছাড়া, এমনিই।


লাইলি বেগম:
খোদেজা আমারে মোবাইল করতেছে এইটা কইতে পারি। কলার কাদির মতন একলগে কাজে যাইতাম সবাই। উঁচা গলায় কত টিটকারি শুনছি—গারমেন্টসের মেয়েরা যায়। ও একটু বেশি কোমর ঢুলায়া হাঁটতো। আর আমরা সবাই উড়না মাথায় দিতাম। পর্দাও হইলো, ছোয়াবও হইলো।

ওইদিন সেমিনারের পরে, খাওয়া হইলে নাফিসা আপায় কইলো— ‘চলো, তোমাকে নামিয়ে দেই। এখন ওরা গার্মেন্টস আর সরকারি নীতিমালা এইসব কঠিন কচকচানি নিয়ে মিটিং করবে... আমাদের কিছু করার নেই’।
জীবনে পরথম প্রাইভেট কারে উঠছি। তানহা আপুগো গাড়ি সুফিয়া বু’র লগে ধুইছি দুই তিনবার, কখনো চড়ি নাই।
মহাখালীর মোড়ে আইসা আপায় কয়— ‘লাইলি, আমাকে তাড়াতাড়ি আবার ফিরতে হবে, ট্র্যাফিক জ্যাম দেখেছো? তোমাকে একটা সিএনজি ধরিয়ে দেই’?
- ‘আপা, আমারে নামায়া দিলে হাঁইটা চলে যাইতে পারবো’।
- ‘না না, মাথা খারাপ নাকি তোমার’?
নাফিসা আপা ড্রাইভাররে সিএনজি ধরতে বইলা পায়ের কাছে রাখা বড় হাতব্যাগ হাতায়— ‘এই রে কোনো চেঞ্জ নাই’।
তাগো ড্রাইভারের কাছেও খালি পাঁচশো, হাজার ট্যাকার নোট।
আমার বৃত্তির সার্টিফিকেটটা চোখের সামনে ভাসে, কই— ‘না না আপা আমার কাছে আছে’।
- ‘শিওর’? নাফিসা আপা নিশ্চিন্ত হইয়া হাপ ছাড়ে।
সিএনজিতে উইঠা দরজা লক করলে উনি নিজের মোবাইলে কী যেন দেখতে থাকে, আমি তবু হাত নাইড়া বিদায় নেই।

কিছুদূর যাওয়ার পরে কী হইলো কইতে পারুম না। ফার্মগেটের কাছাকাছি আইসা আতকা সবকিছু অন্ধকার হইয়া গেল। একবার ঠাণ্ডা, একবার গরম বাতাস  শিকের ফাঁক দিয়া ঢুকে। আর আমি যাইতাছি তো যাইতেই আছি।
আমার টেনশন শুরু হইলো, আদাবর কতদূর? আমি তো হাঁইটাই যাইতে পারতাম। নাফিসা আপার কথামতো সিএনজিতে বইসা না থাইকা নাইমা গেলেই তো হইতো। কত ভাড়া চাইবো কে জানে!

হঠাৎ দুইটা মটরবাইক আইসা থামলো, হইতে পারে মহাখালিতে আমারে গাড়ি থেইকা নামতে দেইখা ভাবছে মালদার পার্টি। লোক দুইজনের চেহারায় বোরহান ভাইয়ের লগে মিল আছে, ভালো শাট প্যান্ট পরছে কিন্তু তবু ছ্যাচড়া ভাব যায় নাই। আমার গলার নিচে বুকের বাম দিকে আটকানো সেমিনারের আইডিটা উল্টায়া পাল্টায়া দেখে। হাতে যে ছুরি আছে আমি পয়লা দেখি নাই। ট্যাকা পইয়সা নাই দেইখা কয়— ‘বুকের ভিতরে সব লুকায়া রাখছে। ফার, ফাইরা ফালা শালীর ঘরের শালীরে।
আমি চিক্কুর পাড়তে গেলে গলা মুখ চাইপা টান দিয়া সিনা বরাবর ছুরিডা চালায়া দিলো।

তারপরও আমি সিএনজির ভিতরে বইসা রইছি, চলতে আছি। আমার একদিকে বড় ট্রাক, কী সব মাল সামান বোঝাই, গার্মেন্টসের সাপ্লাই মনে কয়। আর অন্যদিকে একটা বাসের মইদ্যে পিকনিক পার্টি কইয়া স্লোগান দিতাছে কতগুলি পোলা, আমি চিল্লাইতাছি, কেউ চাইয়াও দেখে না। বাস আর ট্রাকে মিল্লা কম্পিটিশন দিতে দিতে সিএনজিরে মইদ্যখানে রাইখা জোরে চলতে চলতে, চাপতে চাপতে সিএনজিটারে নানরুটির খামির বানায়া দিল। আমার দুনো পাশ থ্যাতলায়া গেল, তবু মাথা কাইত করি নাই। সেমিনারের আইডিডা পছন্দ হইছিল আমার। লেখা আছে— মোছাম্মৎ লাইলি বেগম, এম এস গার্মেন্টস, শ্যামলী, ঢাকা।



বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।