___________________________________
এর্নেস্তো সাবাতো (২৪ জুন ১৯১১-৩০ এপ্রিল ২০১১) আর্জেন্টাইন লেখক এবং চিত্রকর। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন লিজিওন অফ অনার, মিগুয়েল দে সেরভেন্তেস পুরস্কার।
‘এল তুনেল’ (১৯৪৮), ‘সবরে হেরোস ইয়া টুম্বাস’ (১৯৬১), ‘অ্যাবানদন এল এক্সতারমিনাদোর’ (১৯৭৪) তাঁর জগদ্বিখ্যাত তিন উপন্যাস।
_________________________________
৫৩তম কিস্তির লিংক
ছয়টা বাজে ঘড়িতে। মাপেলির গাড়ি চালিয়ে যেতে চার ঘণ্টার মতো লাগবে আমার, অর্থাৎ দশটার দিকে পৌঁছে যাবো। ‘বেশ ভালো সময়ই এটা’ ভাবলাম আমি।
মার দেল প্লাতা মহাসড়কে ওঠেই, ঘণ্টায় আশি মাইলে তুলে দিলাম আমার গতি। অস্বাভাবিক এক উত্তেজনা কাজ করছে আমার মধ্যে, শেষপর্যন্ত আজ এই সিদ্ধান্তে আমি উপনীত হতে পেরছি যে, মারিয়ার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট একটা কিছু অর্জিত হয়েছে। হ্যাঁ, মারিয়া হলো দুভের্দ্য দেয়ালের ওপাশে থাকা কেউ একজন, যাকে আমি দেখতে পাই, কিন্তু শুনতে বা স্পর্শ করতে পারি না; কাচের দেয়াল তাকে পৃথক করে রেখেছে, আমাদের বসবাস তাই দুশ্চিন্তা আর বিষাদের মধ্যে।
অপরাধবোধ, ঘৃণা, আর প্রেমের অনুভূতি মনে জাগলেও তারপরই আবার তা মিলিয়ে যাচ্ছে ওই উত্তেজনার তোড়ে। আমাকে অসুস্থতার মিথ্যে গল্প বলা হয়েছে, এটা মনে হতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল; আমি যখন দ্বিতীয়বার ফোন করি হান্তেরকে নিয়ে আমার সন্দেহের ব্যাপারে, তখুনি আমি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম, আর এটা আমার মনকে আরও বিষিয়ে দিলো। মারিয়া অতি সামান্য বিষয় নিয়েও হাসতে পারে, সে নিজেকে সমর্পণ করতে পারে ওই পরদোষদর্শী, মেয়েবাজ, নকল, আর দাম্ভিক কবির কাছে! এতে কতোটুকুই বা আমি ঘৃণা করতে পারি ওকে! বরং সব রকম অপছন্দের পরও ওর সর্বশেষ সিদ্ধান্তের কথা মনে করে আমি এক ধরনের মর্ষকামী আনন্দ লাভ করতে শুরু করলাম। কিন্তু একইসঙ্গে দেখি কাস্তেল আছে, আছে তার সঙ্গে বিকালে দেখা হওয়ার প্রতিশ্রুতি। কিন্তু কিসের জন্যে তা? ওই অন্ধকার আর বেমানান সব জিনিসের সঙ্গে কথা বলার জন্য, নাকি ওই কাচের দেয়ালের মধ্য দিয়ে আরও একবার পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড়ানোর জন্য, পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আরও একবার শুধু ওই আশাহীন, চিন্তাক্লিষ্ট মুখ দর্শন করা, পরস্পরের ইঙ্গিত বোঝার চেষ্টা করা, নাকি বৃথা পরস্পরকে স্পর্শের চেষ্টা করা, নাকি চেষ্টা করা অনুভবের, কাচের দেয়ালের ভেতর দিয়ে পরস্পরকে স্পর্শের পরশ বোলানোর, নাকি আরও একবার ওই অসম্ভব স্বপ্নটা দেখার চেষ্টা করা। কিন্তু অন্যদিকে, হান্তেরও আছে, আর সে শুধু টেলিফোনটা তুলে নিয়ে একটা ফোনে ডেকে পাঠাবে ওকে, ও দৌড়ে চলে যাবে তার বিছানায়। কি অদ্ভুত পারম্পর্যহীন, আর বিষাদময় সব কিছু!
দশটা পনেরতো পৌঁছুলাম এসতানসায়ায় আমি। ইনজিনের শব্দ যাতে শুনতে না পায় তাই গাড়ি মূল সড়কেই রেখে, ওখান থেকে হাঁটা শুরু করলাম। অসহণীয় গরম পড়েছে; চারদিক ভয়ঙ্কর রকম চুপচাপ, একমাত্র শব্দ বলতে সমুদ্রের গুঞ্জন। মাঝে মাঝে প্রায়ই ঝড়ো মেঘের ফাঁক গলে জোছনা ঠিকরে আসছে, এতে প্রায় নিবির্ঘেœ সার সার ইউক্যালিপটাস গাছের মাঝখান দিয়ে পথ চিনে এগিয়ে যাচ্ছি আমি। বাড়ির কাছে যখন পৌঁছুলাম, দোতালার সবগুলো বাতি জ্বলছে; তার মানে ওরা এখনও খাবার ঘরেই আছে।
দমবন্ধ করা ভারি বাতাস আর ভীতিকর গরম প্রবল কোনো এক গ্রীষ্মের ঝড়কে তাড়িয়ে নিয়ে আসছে। রাতের খাবারের পর ওদের বাইরে বেরিয়ে আসাটাই স্বাভাবিক। আমি তাই পার্কের এমন একটা জায়গা আত্মগোপনের জন্য বেছে নিলাম যাতে মূল সিঁড়ি দিয়ে যে-ই নেমে আসুক আমি তাকে দেখতে পাবো, এরপর শুরু হলো আমার অপেক্ষা।
(চলবে)
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৪