ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

সোয়াজিল্যান্ডে ভ্রমণ

স্টোন কটেজ | মঈনুস সুলতান

ভ্রমণ / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৫
স্টোন কটেজ | মঈনুস সুলতান

আমি যেখানে বসে আছি তাকে ঠিক ট্রি-হাউস বলা চলে না। মাটি থেকে ফুট বিশেক উপরে একটি মস্ত বড় গাছের তিনতিনটি ডালে তক্তা বিছিয়ে তৈরি ঠিক শিকারের নয়—পর্যবেক্ষণের মাঁচা।

আমার চারপাশে বেশ কয়েকটি সসেজ ট্রি। তাদের ঝুলন্ত ফলকে দেখাচ্ছে দৈত্যাকৃতির তেতুঁলের মতো। আমি মাঁচায় বসে শর্টওয়েভ ট্রানজিসটারের নভ ঘোরাই। সাউথ আফ্রিকার একটি রেডিও স্টেশন থেকে ভেসে আসে জার্মানির ডিসকো গ্রুপ বনি এম-এর কণ্ঠস্বরে ‘বাই দ্যা রিভার্স অব বেবিলন/ দেয়ার উই সেট ডাউন...। ’ সত্তর দশকের এ স্মৃতিবিধূর অত্যন্ত জনপ্রিয় লিরিকের ভেতর দিয়ে অনুভব করি শিমুলের তুলার মতো আমার মনে হালকাভাবে উড়ছে নতুন কিছু ভাবনা; এবং গতকালকের দিনযাপনের কয়েকটি মনোগ্রাহী ইমেজ। ভ্রমণ সংক্রান্ত অনিশ্চয়তায় ভুগছিলাম সকাল থেকে, দুপুরের দিকে ফ্লাইট মিস করা যাত্রীর মতো ভার হয়েছিল মন। অতঃপর নোপেপ্ট বলে একটি মুড এনহানসিং ড্রাগ নিলাম। তাতে টেনশনে টানটান হয়ে থাকা শিমুলের শুকনা ফলটি যেন ভেতরে বিস্ফোরিত হলো। এখন মৃদু হাওয়ায় রীতিমত উড়ছে গতদিনের যাপিত দৃশ্যপট। মাঁচার নিচে একটি শুকা নদী, তাতে জল খুবই সামান্য, পড়ে আছে প্রাকৃতিকভাবে অবহেলায় অসংখ্য ধূসর পাথর, খটখটে শুকনা সাদাটে বেশুমার নুড়ি। তীরেও ছড়ানো কতগুলো ডলারাইট রকের ভারী বোল্ডার।


শর্ট ওয়েভ ট্রানজিস্টার ছাড়াও আমার পাশে অন করে রাখা আছে একটি ওয়াকিটকি। এ ধরনের ওয়াকিটকিকে বলা হয় রেডিও মনিটর, এর একটি জোড়ও আছে। এবং এ মুহূর্তে তা পড়ে আছে ইয়োরগান ও ব্রিজিতের কন্যা কার্লার দোলনার পাশে। ছোট্ট এ মেয়েটি শুয়ে আছে সেমি-ওপেন স্টোন কটেজ বলে খোলামেলা একটি পাথরে তৈরি শনে ছাওয়া কুটিরে। বাচ্চাটি দোলনায় ঘুমাচ্ছে একাকী। ব্রিজিত দুধের সাথে ব্র্যান্ডি মিশিয়ে তাকে খাইয়েছে। এতে তার নিদ্রা দীর্ঘমেয়াদি হবে। সহসা ঘুম ভাঙ্গার কোনও কারণ নেই। তবে শিশুদের বিষয় আশয় অত নির্দ্দিষ্ট করে বলা যায় না। যদি তার ঘুম ভেঙ্গে যায়, যদি কেঁদে ওঠে কার্লা; ওয়াকিটকির রেডিও ওয়েভের মাধ্যমে আমি তা শুনতে পাব। তখন মাঁচা থেকে নেমে স্টোন কটেজে ছুটে যেতে আমার সময় লাগবে মিনিট দুয়েকের মতো। আতকা ঘুম টুটে গেলে কার্লাকে শান্ত করার জন্য ব্রিজিত পাশে একটি খেলনা গিটার রেখে গেছে। তার বাদন শুনতে কার্লা খুব পছন্দ করে। আমি বেবি সিটার নই, গিটার বাজানোর দক্ষতাও আমার সহজাত নয়। কিন্তু একটি ঘুমন্ত শিশুর দায়িত্ব আমার ঘাড়ে আজ অনিচ্ছায় চেপেছে। তাতে সৃষ্টি হয়েছে কিছু স্নায়ুবিক উত্তেজনা ও মানসিক উদ্বেগ।

তবে নোপেপ্ট ট্যবলেটটি সেবন করায় আমি খানিকটা স্থিরতা ফিরে পাচ্ছি। মন একাগ্র হয়ে উঠতেই ভাবি জার্নালে লিখে ফেলতে হয়—গেল দেড়দিনে যা যা ঘটেছে।

আমি এ মুহূর্তে মখাইয়া গেম রিজার্ভের গাছের ডালে ছড়ানো যে মাঁচায় বসে আছি, ওখানে আছে গোটা দুই বেতের চেয়ার ও ছোট্ট একটি টেবিল। তাতে নোটবুক মেলে ধরে কিছুক্ষণ আগে স্মৃতি হয়ে ওঠা দৃশ্যপট ও ভাবনাকে গোছাতে শুরু করি।

কথা ছিল গতকাল আমি ইয়োরগান ও ব্রিজিতের ল্যান্ডরবারে লিফ্ট নিয়ে লামাহাসা-নামসা বর্ডার ক্রসিং দিয়ে মোজাম্বিকে ঢুকে ভিয়েরা শহর অব্দি যাব। সে অনুযায়ী সন্ডঝেলা ব্যাকপ্যাকার্স লজ থেকে চেক আউট করেছি সাত সকালে। কিন্তু বেরিয়ে পড়ার প্রস্তুতি না নিয়ে ভোরবেলা অনেকক্ষণ মেকাপ করে কাটায় ব্রিজিত। তারপর লাউঞ্জে হাইহিল পরে আমার কাছে এসে খিলখিল হেসে জানতে চায়, তাকে কেমন দেখাচ্ছে?  তখনই কী কারণে জানি ইয়োরগানের সাথে জার্মান ভাষায় তার খিটিমিটি বাঁধে। ইয়োরগান লাউঞ্জের ফ্লোরে কার্পেটের উপর ছড়িয়ে বসে নানা মডেলের তিনচারটি ক্যামেরা, অনেকগুলো ল্যান্স, ট্রাইপড ও ফ্লাশলাইট ইত্যাদি গোছাচ্ছিল। কিছু ভালো করে বোঝার আগেই কোথা থেকে কী হয়ে গেল! ব্রিজিত হ্যাজাক বাতির চিমনি খুলে নিয়ে ইয়োরগানের দিকে তা ছুড়ে মারলো। ইয়োরগান গালিগালাজের পাল্টি না তুলে ফ্লোর থেকে ভাঙ্গা কাচ কুড়াতে কুড়াতে গরমে মজবুর বিলাতি কুত্তার মতো হাঁপায়। এ ধরনের ঝামেলা তাদের প্রাইভেটলি ঘাঁটাতে দেয়া উচিত ভেবে আমি লাউঞ্জ থেকে সরে আসি নীরবে। বাইরে আসতেই দেখি একটু আগে আমি সন্ডঝেলা ব্যাকপ্যাকার্সের যে কটেজ থেকে চেক আউট করেছি তাতে ব্যাগ, বস্তনি, বেডরোল ও ব্যাকপ্যাক নিয়ে চেক-ইন করছে ইউক্রেন থেকে আসা এক পর্যটক দম্পতি।

ঘণ্টাখানেক পর আমি আবার খোঁজ নেই, আন্দাজ করি ততক্ষণে তাদের উত্তেজনা কমে এসেছে, এবং তারা মোজাম্বিক বর্ডারের দিকে বেরিয়ে পড়ার জন্য তৈরি হয়ে উঠছে। না, তাদের কটেজে সামানাদি তেমন একটা গোছগাছ হয়নি। দুজনকে পাওয়া যায় লাউঞ্জে। ব্রিজিত হাসি মুখে কার্লাকে কিভাবে বালামসিবতে বুকে আঙ্গুল দিয়ে ক্রুশ চিহ্ণ আঁকতে হয় তা শেখাচ্ছে। আমার দিকে সে ফিরে তাকানোর কোনও প্রয়োজনবোধ করে না। তার পুরুষ ইয়োরগান রকিং চেয়ারে বসে মুখখানা শামুকের মতো করে তুর্কি লেখক পামুক ওরহ্যানের একটি বই পড়ছে। জানতে চাই, ‘তোমরা বেরোবে কখন?’ ইয়োরগান মৃদু স্বরে বলে, ‘অত তাড়া কিসের?’ ‘মোজাম্বিকের সীমান্ত অব্দি পৌঁছতে হলে, ইউ নিড টু হিট দ্যা রোড নাউ’—বলে তার উত্তরের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকলে সে বিরক্ত হয়ে বলে, ‘অত চটজলদি রেডি হওয়া যাবে না, তোমার অসুবিধা হলে আমাদের সাথে মোজাম্বিক গিয়ে কাজ নেই, পড়ে থাকো সন্ডঝেলা ব্যাকপ্যাকার্সে। ’


একটু আগে এ দম্পতির লিফ্ট দেয়ার প্রতিশ্রুতির ওপর ভরসা করে কটেজ থেকে চেক আউট করেছি। আমার ঘরে কিছুক্ষণ পর ইউক্রেনের এক দম্পতি ঢুকে পড়েছে। অন্য কোনও কামরা খালিও নেই। এখন সন্ডঝেলাতে থাকতে চাইলে গাছের ডালে চড়ে বসে রাত কাটাতে হয়।

আমি দাঁড়িয়ে আছি দেখে ইয়োরগান বইখানা নেড়ে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গি করে। দেখি প্রচ্ছদে তুর্কি লেখকের নামের পাশে বইটির টাইটেল লেখা ‘হোয়াইট ক্যাসোল’, আমার হাত চুলবুল করে ওঠে ইয়োরগানকে একটি জুতসই চটকনা কষানোর জন্য। আমার নীরব ক্রোধ বন্য হয়ে উঠলেও তা সামলাতে হয়, উপায় নেই, এদের ল্যান্ডরবারে যে লিফ্ট নিতেই হচ্ছে। এছাড়া সোয়াজিল্যান্ড থেকে পয়সা খরচ না করে বেরোনো মুশকিল।

দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে চললে ব্রিজিত এসে হাসিমুখে আমাকে ডেকে নেয় তাদের ল্যান্ডরবারে। সবকিছু গোছগাছ করে ড্রাইভিং সিটে বসে আছে ইয়োরগান। তাদের জলপাই রঙের ল্যান্ডরবারখানা আফ্রিকান সাফারির জন্য একেবারে লাগসই। পেছনে দু চাকার আলগা ট্রেলারে করে তারা বয়ে নিয়ে চলেছে শিশুতোষ সাইকেল, কার্লার জন্য পাম্প দিয়ে ফুলানো যায় এ রকমের ছোট্ট সুইমিং পুল; আর কুলার ভর্তি শিকার করা হরিণের মাংস ও বিস্তর খাবার দাবার।

হঠাৎ খেয়াল হয় ইয়োরগান গাড়ি ছোটাচ্ছে মবুবান শহর থেকে উত্তর দিকে। মোজাম্বিক যাওয়ার লামাহাসা-নামচা বর্ডারপোস্ট ঠিক উল্টা দিকে। বিষয় কী? জানতে চাইলে ব্রিজিত ঠোঁটে লিপগ্লস ঘষতে ঘষতে জবাব দেয়, ‘সন্ধ্যাবেলা আমরা মোজাম্বিকে ঢুকতে চাচ্ছি না। আর সোয়াজিল্যান্ডের মখাইয়া গেম রির্জাভ আমাদের দেখা হয়নি এখনও। সাত শত পঞ্চাশ একরের এ ফরেস্টে আছে অজস্র আকাশিকা নিগ্রেসেনস্ ট্রি, এ গাছগুলোকে সিসওয়াতি ভাষায় বলা হয় মখাইয়া গাছ। দিস ইজ জাস্ট অ্যা পিস অব অনস্পয়েল্ট উইলডারনেস। তো চলো আমাদের সাথে, ভাবছি আমরা মখাইয়া রিজার্ভে রাত কাটিয়ে দেব। ’

যাত্রায় ডিরেকশন পরিবর্তনের বিষয়টি আমি মেনে নিতে পারি না, একটু রিএকশন হয়, বলি, ‘আমার যে মোজাম্বিকের দিকেই যাওয়া প্রয়োজন। ’ ইয়োরগান ল্যান্ডরবারের গতি স্লো করতে করতে বলে, ‘অসুবিধা কিছু নেই, তোমাকে আমরা এখানে ড্রপ করে দিচ্ছি, রাজপথে ঘণ্টা দেড়েক দাঁড়িয়ে থাকলে তুমি কম্বি জাতীয় মাইক্রোবাস পেয়ে যাবে। তা ধরে চলে যাও লামাহাসা-নামচা বর্ডারে। ’ আমার মস্তিষ্কে রোদেলা দিনে অপ্রত্যাশিত বৃষ্টির মতো অনিশ্চয়তার ঝাপটা লাগে। উদ্বিগ্ন হই যদি বর্ডারে যাওয়ার কম্বি না পাই, আর তা পাওয়া গেলে বহনটি পথে পথে নামাবে যাত্রী, লেট করে সীমান্তে পৌঁছলে যদি ততক্ষণে ক্রসিং বন্ধ হয়ে যায়। তাহলে পথচলার সম্বল বোঁচকা, ব্যাকপ্যাক, লোটাকম্বল নিয়ে উঠব কোথায়? আমাকে দ্বিধাগ্রস্তভাবে স্নায়ুতে টেনশন নিয়ে বেশিক্ষণ বসে থাকতে হয় না। ব্রিজিত পেছনের সিটে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, ‘হি ইজ গোয়িং উইথ আস। দিন দুই মখাইয়া রিজারভেশনের ফরেস্টে আমাদের সাথে কাটালে তার ক্ষতি কিছু হবে না। ’ ইয়োরগান তার বক্তব্যের কোনও জবাব না দিয়ে আবার জোরে ল্যান্ডরবার ছোটায়। পেছন দিকে বাড়িয়ে দেয়া ব্রিজিতের হাত আমি স্পর্শ করি। আমার হাতের তালুতে তার আঙ্গুল কাঁকড়ার পদচিহ্ণের মতো হিজিবিজি রেখা আঁকে।

রিজারভেশনে আমরা এসে পৌঁছি বিকাল গড়িয়ে পড়ার সময়। বাদামি ঘাসে ভরা ভূভাগে কিছুটা দূরে দূরে দাঁড়িয়ে মখাইয়া ব্ক্ষৃগুলো অভিনেত্রীরা যে রকম মঞ্চে যাওয়ার আগে মেকাপ নেয় সে রকম পত্রালিতে মেখে নিচ্ছে বেলাশেষের বর্ণাঢ্য আলোছায়া। ল্যান্ডরবারের গতি গড়িয়ে চলার মতো স্লো হলে উইন্ডো দিয়ে মৃদু হাওয়ায় ভেতরে ঢুকে পড়ে নির্লিপ্ত এ ল্যান্ডস্কেপের কিছু কাকলি ও পতঙ্গের বুনো শব্দ। মাঠে অন্যমনস্কভাবে চরছে কয়েকটি জেব্রা। তাদের জাবরকাটা দেখলে মনে হয় কোনও কিছুতেই এ প্রাণীদের বিশেষ কোনও আগ্রহ নেই। এখানে বাস করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে তাদের ঘাড় ধরে চিড়িয়াখানায় চালান দিলেও তারা বোধ করি মনে কিছু করবে না।


রেঞ্জারদের কাছ থেকে সেমি-ওপেন স্টোন কটেজ বা পাথরের অর্ধেক দেয়াল দেয়া, খোলামেলা শনে ছাওয়া কটেজ ভাড়া করে আমরা মৃত গণ্ডারের মাথার খুলি দেখার জন্য রিজারভেশন অফিসের পেছন দিকে আসি। এ অভয়ারণ্যে পোচিং বা অবৈধভাবে গণ্ডারের শিকার চলছে হামেশা। পাহারা দিয়েও রেঞ্জাররা এ সমস্যার কোনও কূল কিনারা করতে পারছে না। কারণ চীনদেশে রাইনো হর্ন বা গণ্ডারের শুকনা খড়গের চূর্ণ নানাবিধ রোগের উপশম এবং যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিকারক বটিকা হিসাবে বাজারে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে মাফিয়া নিয়ন্ত্রিত ব্ল্যাকমার্কেটে এক কিলো খগড় চূর্ণের দাম হচ্ছে ষাট হাজার মার্কিন ডলার। এ বিপুল ডিমান্ডের খতরা স্বরূপ প্রতিদিন অপঘাতে মারা যাচ্ছে একাধিক গণ্ডার। রিজারভেশনের কর্তৃপক্ষ কিছু গণ্ডারের মাথার খুলি সারি দিয়ে সাজিয়ে রেখেছেন একটি চালাঘরে।

খুলি দেখা মাত্র ব্রিজিতের ভিমরতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। সে টপের ওপর একটি হান্টিং ভেস্ট চড়িয়ে চুলে ইস্পাতের কাঁটাঅলা হ্যাট মাথায় দিয়ে সটান শুয়ে পড়ে ঘাসে। তার আহ্লাদিপনাকে উৎসাহিত করার জন্য ইয়োরগান ফরেস্ট গার্ডকে উৎকোচ হিসাবে ভেট দেয় এক বোতল কনইয়াগি জিন। গার্ড মহাউৎসাহে ব্রিজিতের মাথা, দুকান, বাহু, তলপেট ও পায়ের পাতায় স্থাপন করে আটটি গণ্ডারের করোটি। ইয়োরগান করোটিতে কণ্টকিত নারীর ছবি তুলতে তুলতে ফূর্তিতে গুনগুনিয়ে গায় বনি এম এর, ‘আফ্রিকান মুন/ রোলিং উইথ দ্যা মাইটি উয়েভস/ উই উইল বি দেয়ার সুন। ’


ফরেস্ট গার্ডের নাম মি. ককোসোর। সন্ধ্যা লাগার মুখে তিনি আমাদের নিয়ে আসেন স্টোন কটেজে। বুশক্যাম্প এরিয়ায় এ কটেজ ছাড়াও আছে দূরে দূরে ছড়ানো আরও কয়েকটি কটেজ ও দু’তিনটি তাঁবু। পুরা এলাকা ইলেকট্রিক তারের তিন প্রস্থ বেড়া দিয়ে ঘেরা। সুতরাং খিদা লাগলে চিতাবাঘ বা সিংহ এখানে ঢুকে পড়ে মানব দেহ দিয়ে ভোজন সারতে পারবে না। তবে তাদের চিৎকার, হট্টগোল ও তৃণভোজী প্রাণীর মাংস নিয়ে খকরাখাকরি শোনা যাবে সারা রাত। স্টোন কটেজের দেয়াল সম্পূর্ণ খোলা, কোনও দরোজা জানালার বালাই নেই। মি. ককোসোর বিছানার উপর মস্তবড় মশারি খাটিয়ে দেন। এ কুটিরে বাস করলে খোলামেলা হাওয়ায়, পাতা-লতা-ফুলের গন্ধে বনের ভেতর মহলে শুয়ে আছি—এ রকমের অনুভূতি হবে বটে; কিন্তু এগুলো দামে অত্যন্ত এক্সপেনসিভ, আমার বাজেটে কুলাবে না বলে আস্ত একটি কটেজ ভাড়া নিতে দ্বিধা করি। ইয়োরগান ক্যাম্পফায়ারের আগুন জ্বালানোর জন্য মি. ককোসোরের সাথে একটু দূর থেকে লাকড়ি আনতে গেলে ব্রিজিত আবার আমার হাত স্পর্শ করে। খুব আন্তরিকভাবে বলে, ‘কটেজ ভাড়া করতে যাবে কেন? আমাদের ট্রেলারে আছে এক্সট্রা তাঁবু। খুঁজে দিচ্ছি একটি এখনই। ’

শেষ কিস্তির লিংক


বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।