ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৩৩) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৩৩) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের ৩২তম কিস্তি
___________________________________

তার মনে পড়ে যে কামরায় তারা থাকত সেটি ছিল অন্ধকার, গুমোট গন্ধময় যার অর্ধেকটা জুড়েই ছিল সাদা চাদর পাতা একটি বিছানা। ফেন্ডারের ভেতরে গ্যাসের চুলা বসানো ছিল আর খাবার তুলে রাখার তাক। বাইরের আঙ্গিনায় মাটির পাড়ের একটি কূপ, কয়েকটি পরিবার মিলে পানির ব্যবহার চলত। তার মনে পড়ে মায়ের স্থির অনড় দেহখানি গ্যাসের চুলায় কড়াই বসিয়ে দিয়ে কিছু একটা রান্নায়রত।



সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে সদাই এক ক্ষুধার্ত সে, আর খাবারের বেলা এলেই যে ঘৃণ্য লড়াইয়ে সামিল হতে হতো সে কথাও। মায়ের সঙ্গে সারাক্ষণ ঘ্যান-ঘ্যান, কেন খাবার থাকে না? মাঝে মাঝে চিৎকার-চেঁচামেচিও জুড়ে দিত, মায়ের ওপর ঝাপিয়ে পড়ত (আজ এই সময় নিজের গলার স্বরটিও তার মনে পড়ে, যা কৈশোরের একটু আগেই ভেঙ্গে কর্কশ শোনাত, আর মাঝে মাঝে তা থেকে অদ্ভুত শব্দ বের হতো) অথবা খাবারের ভাগ বেশি পাওয়ার জন্য নাকি-কান্না জুড়ে দিত।

তার মা বরাবরই ভাগে যতটুকু তার চেয়ে বেশিই দিতেন। তিনি মেনেই নিয়েছিলেন, সে ‘ছেলে’ বলে তার ভাগটা সবচেয়ে বড়; কিন্তু মা যত বেশি তাকে দিতেন সে চাইত তার চাইতেও বেশি। প্রতিবেলা খাবারের সময় মা তাকে বোঝাতেন এমন স্বার্থপরের মতো করতে নেই, ছোট্ট বোনটি অসুস্থ, ওর বেশি খাওয়া দরকার, কিন্তু কোনও কথাই গায়ে মাখত না। পাতে তার হাতাভর্তি হয়ে খাবার পড়তে থাকবে, বন্ধ হলেই চিৎকার, কখনও কখনও কড়াই ও চামচ সমেত কেড়ে নিতে চাইত। খাবলা মেরে তুলে নিত বোনের পাতের খাবার।

সে জানত তার কারণেই অন্য দুজন অভুক্ত থাকছে, কিন্তু কাজটি সে না করে পারত না; আর এমনকি তার ভাবনাও ছিল যা সে করছে সে তার অধিকার। পেটের রাক্ষুসে ক্ষুধার কারণেই এসব অসদাচরণ তার কাছে সঠিক বলে মনে হতো। আর দুই বেলা খাবারের মাঝে মা আশেপাশে না থাকলেই তাকে তুলে রাখা খাবারের ওপর হানা দিত সে।

একদিন চকলেটের রেশন জারি হলো। গত কয়েক সপ্তাহ কিংবা মাসে এই প্রথম রেশনে মিলল চকোলেট। তার খুব স্পষ্টই মনে পড়ে, কী দারুণ ছিল ছোট ছোট চকোলেটের টুকরোগুলো। এক ফালিতে দুই-আউন্স (তখনও তাদের আউন্সের হিসাব চলত)। আর তা সমান তিন খণ্ডে ভাগ করা যেত। এটাই হওয়ার কথা, তিন জন এক টুকরো করে পাবে। কিন্তু আজও উইনস্টন যেন কানে শুনতে পায়, পুরো চকোলেট একা খাবে বলে তার সে কি তারস্বরের চিৎকার। টানা ঘ্যানঘ্যান, আর মুখে মুখে কথা চালাল মায়ের সঙ্গে। আর চিৎকার-চেঁচামেচি, অনুযোগ, চোখের পানি, ওজোর-আপত্তি, প্যানপ্যানানি।  

তার শীর্ণকায় বোনটি দুই হাতে মাকে আঁকড়ে ধরে আছে, ঠিক যেন বানরশিশু। আর মায়ের ঘাড়ের উপর দিয়ে তার দিকে ড্যাবড্যাবে করুণ চোখে চেয়ে আছে। অবশেষে চকোলেটের চার-ভাগের তিন ভাগ তাকে দিতে বাধ্য হলেন মা আর অপর একভাগ তার বোনকে দিলেন। ছোট্ট মেয়েটি ওটি হাতে ধরে বসে আছে আর ভ্যবলা চোখে তাকিয়ে রয়েছে, মনে হয় বুঝতেই পারছে না বস্তুটি দিয়ে কী করবে। ওই টুকরোটির ওপরও উইনস্টনের লোভী নজর পড়ল। সুযোগ বুঝে ওটি ছোঁ মেরে নিয়ে দরজা ঠেলে দৌড়ে পালাল।

দ্বিতীয় খণ্ডের ৩৪তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।