১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ৪১তম কিস্তি
___________________________________
মোলায়েম কার্পেটের ওপর মৃদু পা ফেলে তখনও পায়চারি করে চলেছেন তিনি। মোটাসোটা বপু হওয়া সত্ত্বেও তার এই নড়াচড়ার মধ্যে এক ধরনের চমৎকারিত্ব ফুটে উঠছে। এক হাত পকেটে রেখে অন্য হাতে সিগারেট ধরে রাখায় ভঙিমাটি যেন আরও মানানসই। তার শারীরিক শক্তির চেয়ে আস্থার আর বোধগম্যতার ভাবটাই যেন বেশি ফুটে ওঠে।
আন্তরিকতার দিকগুলো তো আছেই, পাশাপাশি একজন চরমপন্থির যেসব একরোখা ভাব থাকার কথা তার কিছুই তার মধ্যে নেই। যখন তিনি হত্যা, আত্মহত্যা, যৌনব্যাধি, অঙ্গচ্ছেদ কিংবা পাল্টে দেওয়া চেহারার কথা বলেন একটা প্রচ্ছন্ন ব্যঙ্গাত্মক অভিব্যক্তি তার চেহারায় ফুটে ওঠে। ‘এর ব্যত্যয় হবার নয়’—এমন উচ্চারণের মধ্য দিয়ে তার কণ্ঠ যেন বলতে চাইছে; ‘আসলে সাহসের সঙ্গে এটাই আমরা করব। কিন্তু জীবন যখন আবার যাপনযোগ্য হয়ে আসবে তখন আর আমাদের এগুলো করতে হবে না। ’
ও’ব্রায়েনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের, অনেকটা পূজনীয় পর্যায়ের ভালোলাগা কাজ করতে শুরু করল উইনস্টনের মধ্যে। এই মুহূর্তে সে গোল্ডস্টেইনের ছায়ামূর্তিও যেন ভুলে গেছে। আপনি যখন ও’ব্রায়েনের শক্তিশালী স্কন্ধের দিকে তাকাবেন, আর তার দৃঢ়তামাখানো চেহারার দিকে, অতি কুৎসিত আবার অতি সভ্য, তখন আপনার পক্ষে তাকে জেয় বলে ভাবাই অসম্ভব হয়ে উঠবে। এমন কোনও কৌশল নেই যার সমকক্ষ তিনি নন, এমন কোনও বিপদ নেই যা অনুধাবন করতে তিনি অক্ষম। জুলিয়াকেও বেশ নিবেশিত মনে হলো। হাতের সিগারেট নিজে নিজেই পুড়ে যাচ্ছে, আর গভীর মনোযোগে সে শুনে যাচ্ছে। ও’ব্রায়েন বলেই চললেন:
‘ব্রাদারহুডের অস্তিত্ব নিয়ে তোমাদের কানে গুজব আসতেই থাকবে। নিঃসন্দেহেই বলা যায় এরই মধ্যে ব্রাদারহুড নিয়ে তোমরা মনে মনে একটি ধারণা পোষণ করছো, নিজেদের মানসপটে এঁকেছো ছবিও। তোমাদের কল্পনায়, সম্ভবত, যড়যন্ত্রকারীদের এক অতিকায় গোপন শক্তি হিসেবেই রয়েছে এই ব্রাদারহুড, যারা কারাগারগুলোতেও গোপন বৈঠক করে, দেয়ালে দেয়ালে বার্তা লিখে রাখে, একজন আরেকজনকে কোডওয়ার্ডে কিংবা হাতের বিশেষ ভঙ্গিতে চেনে, কথা বলে। বাস্তবে আসলে এমন কিছুই নেই। ব্রাদারহুডের সদস্যদের একে অপরকে চেনার কোনওই পথ নেই, আর একজনের পক্ষে অপর গুটি কয়েক জনের বাইরে কাউকে চিহ্নিত করারও সুযোগ নেই। গোল্ডস্টেইন নিজেও যদি কখনও থট পুলিশের হাতে পড়ে যান, সদস্যদের পূর্ণাঙ্গ তালিকাটি তাদের দিতে পারবেন না।
বস্তুত এমন কোনও তালিকার অস্তিত্বও নেই। ব্রাদারহুডকে সমূলে উৎপাটনও সম্ভব নয় কারণ এটি সাধারণ বোধের কোনও সংগঠন নয়। একটি ধারণা বৈ এটি আর কিছুই নয়, আর সে ধারণা অমোচনীয়। তোমাদের টিকিয়ে রাখার জন্য একটি ধারণার বাইরে আর কিছুই তোমরা পাবে না। কমরেডের স্তুতি কিংবা উৎসাহ কোনওটাই মিলবে না। আর তোমরা যখন ধরা পড়ে যাবে, কারও কোনও সহযোগিতা পাবে না। আমরা সদস্যদের কোনও সহায়তা করি না। সর্বোচ্চ আমরা যখন মনে করি কেউ একজনকে চুপ করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন তখন কারাগারে তার হাতে চোরাপথে একটি রেজর ব্লেড পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করি। তোমাদের আসলে কোনও প্রত্যাশা আর কোনও প্রাপ্তি ছাড়াই জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে। তোমরা কিছুদিন কাজ করবে, এরপর ধরা পড়ে যাবে, এরপর স্বীকারোক্তি দেবে, অতঃপর মৃত্যুকে বরণ করে নেবে। আসলে এই মৃত্যুতেই তোমাদের প্রাপ্তি মিলবে। আসলে আমাদের জীবদ্দশায় এর বাইরে আর কোনও কিছু ঘটতে পারে বলে আমরা মনেও করি না।
দ্বিতীয় খণ্ডের ৪৩তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৮২১ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৪২) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।