ব্রাজিলিয়ান ঔপন্যাসিক ও গীতিকার পাওলো কোয়েলহো। জন্ম ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনেইরোতে।
কোয়েলহো ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে জনপ্রিয় একটি ইন্টারভিউ পোর্টালে একটি সাক্ষাৎকার দেন। চিরনতুন এ সাক্ষাৎকারটি বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য ভাষান্তর করেছেন সানজিদা সামরিন।
জনাব কোয়েলহো, আপনি সংস্কৃতির মধ্যে সেতু নির্মাণে আগ্রহী?
লেখকদের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি ও পটভূমির প্রতি অগ্রহী হতে হয়। এখানে শুধু নিজের গ্রাম নিয়ে লিখলেই চলে না। এখানে নিজের গ্রামকে দেখাতে হয়, একইসঙ্গে অন্য গ্রামগুলোকেও বুঝতে হয়। তলস্তয়ের কথামতো, একটি গ্রামে যা কিছু ঘটে তা সর্বত্রই ঘটে।
আপনিও কি এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি উত্থাপন করেছেন?
ছোটবেলায় আমি বিভিন্ন উপকরণ ও সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলাম যেমন- আরবীয়, ইহুদীয়, আমেরিকান। আমি এসবে আগ্রহী হয়ে উঠি। আমরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে শোনার জন্য গান নির্বাচন করি না। আমরা যেকোনো কিছুই নির্বাচন করি আমাদের পছন্দ-অপছন্দ থেকে। লেখার শুরুর আগে আমি উপকরণকে দেখি তারপর আগ্রহ আসে।
আপনার কি মনে হয় অতীতের তুলনায় আমাদের সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন তুলনামূলক অনেক বেড়েছে?
বর্তমানে যা দেখছি, এ সেতুতে ধস নেমেছে। কেউ কাউকে বুঝতে সক্ষম নয়। আমি মনে করি, একজন মানুষ হিসেবে সবার মতো আমার কর্তব্য বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে ভাবা, বহুসাংস্কৃতিক সংযোগ বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দেওয়া। এক একটি সেতু ছেড়ে গেলে কিছুই নষ্ট হবে না। কিন্তু সেই মুহূর্ত থেকে আপনি অন্য সংস্কৃতির কোনো গল্প বা গান বুঝতে পারবেন না। আমরা নিজেরা নিজেদের কাছে আগন্তুক বলে পরিচিত হবো।
বেশ, আমি বলতে চাই- আপনি তো অনলাইন উপস্থিতির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক সেতু তৈরি করছেন। আপনার ২২ মিলিয়ন ফেসবুক লাইক, নয় মিলিয়ন টুইটার ফলোয়ার। আপনি ২০০৬ সাল থেকে ব্লগিংয়েও যুক্ত রয়েছেন। আপনি ইন্টারনেটে এতো একটিভ কেন?
এটি নতুন প্ল্যাটফর্ম। একজন লেখক হিসেবে আমাকে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম খুঁজে বের করতে হবে যা লেখার প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা যায়। ইন্টারনেট তার মধ্যে একটি। সুতরাং ভার্চুয়াল পৃথিবী হচ্ছে আমার পাঠকদের সঙ্গে যোগাযোগের পথ। এর মাধ্যমে তারা তাদের মতামত জানায়। আমি ভাষা দিয়ে চ্যালেঞ্জ করতে চাই। তাই আমার ব্লগে আমি লিখি যেনো মানুষ তা ডাউনলোড ও ছড়িয়ে দিতে পারে।
তথ্যসম্পদ কম গ্রহণযোগ্যতা এনে দেওয়ার সমস্যায় কি আপনি পড়েছেন?
এ বিষয়টি সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই। আমার ধারণা, অনেক তথ্য আপনি পেতে পারেন, নিজের কাজের জন্য ভালো তথ্য পেতে পারেন আপনি।
এটা কি সত্যি, আপনি লেখা শুরু আগে সাদা পালকের সন্ধানে থাকেন?
বই শুরুর আগে এটি করি সত্যি। ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত আমার প্রথম বই ‘দ্য পিলগ্রিমেজ’ থেকে এই ট্র্যাডিশন চলে এসেছে। তার আগে আমি নিশ্চিত ছিলাম না আমার বই লেখা উচিৎ কিনা, এটি ছিলো সন্দেহ। তখন আমি মাদ্রিদ ছিলাম। আমি নিজেকে বললাম, যদি একটি সাদা পালক দেখি তাহলে আমি বুঝবো আমার লেখা উচিৎ।
কিন্তু এমন যদি হয়, আপনি সত্যিই লিখতে চাচ্ছেন কিন্তু কোনো সাদা পালক পেলেন না তবে?
না, সাধারণত সাদা পালক খুঁজে পাওয়া যায়। কথা হচ্ছে, জানুয়ারিতে সাদা পালক খুঁজে পাওয়া। কিন্তু তাও পাওয়া যায়। যেই মুহূর্তে সাদা পালক খুঁজে পাই তখন থেকেই লেখা শুরু করি।
এমন কোনো সংকেত রয়েছে যা আপনার কি ধরনের বই লেখা উচিৎ, তা সম্পর্কে অবগত করে?
অবশ্যই। আমি এমন একজন মানুষ যে কিনা বিশ্বে কী হচ্ছে সে সম্পর্কে ভীষণ উৎসাহী। লেখার জন্য পৃথিবীতে অনেক বিষয় রয়েছে, এখানে আমরা বহু মানুষের সঙ্গে মিলিত হই। বই বাক্যে লেখার আগে প্রথমে আমার হৃদয়ে লিখি। আমি বই বেছে নিই না, বইই আমাকে বেছে নেয়।
তার মানে আপনি কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে লেখেন না?
আমি লিখি কারণ, আমি আমার আইডিয়া পাঠকদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। আমি কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে লিখি না।
আপনার কাজে আপনার পারসোনালিটি ভীষণভাবে উপস্থিত-
আমি আমার কাজে উপস্থিত এবং কাজ আমার আত্মার অভিব্যক্তি। আমি মনে করি, কোনো লেখক কিছুর ওপর ভিত্তি না করে লিখতে পারেন না। লেখক দুই ধরনের- এক হলো প্রাউস্টের মতো যিনি তার ঘরে বন্দি থেকে সেরা গ্রন্থ ‘À la recherche du temps perdu’ লিখেছেন। অন্যটি হলো, হেমিংওয়ে যিনি জীবন উপভোগ করে সেরা গ্রন্থ লিখেছেন।
আপনার সবচেয়ে বিখ্যাত বই দ্য অ্যালকেমিস্টের কেন্দ্রীয় যে ধারণা- প্রত্যেককেই তার স্বপ্ন সাধনায় রত থাকা উচিত। আপনার জীবনও কি এই ‘থিওরিটি পারফেক্ট সেনস’ তৈরি করেছে অথবা আপনি কি এখনও কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছেন?
এটি পারফেক্ট সেনস তৈরি করে, তবে আমি বলছি না যে আমি তা বুঝতে পারছি। এটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো ইস্যু নয়। বিষয়টি এমন নয়, একটি দিন পার হলো আর আপনি আপনার উত্তর পেয়ে গেলেন। জীবন যাপন করতে থাকুন, তাই করুন যা করা প্রয়োজন, যে কাজ করতে উৎসাহী তাই করুন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৬
এসএমএন/এসএনএস