নিত্য ভ্রমণকারী আমাদের মন। সে স্থির থাকে না কখনও।
এইসব বিনোদনের মধ্যে যে মাধ্যমটি মানুষের অনুভূতিকে সবচেয়ে বেশি জাগ্রত করে, দুধের স্বাদ ঘোলে না মিটিয়ে বরা ভালো- ঘি-এ মিটিয়ে দেয়, তা হলো, শিল্পকলা। যা মানুষের ভ্রমণপিয়াসী মনের তৃষ্ণাকে অনেকখানি লাঘব করতে পারে। ধরা যাক, কারও ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেয়ালে জমকালো একটি পেইন্টিং দেখলেন, কী করবেন তখন? নিশ্চয় মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবেন তার দিকে। এবং ভাবনার খেয়ায় চড়ে হারিয়ে যাবেন সেই ছবির কল্পনার জগতে।
কল্পনার জগতে হারিয়ে যাবার মতো এমনই এক চিত্র-প্রদর্শনী শুরু হয়েছে রাজধানীর শাহবাগের জয়নুল গ্যালারিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গেট দিয়ে ঢুকলেই এই গ্যালারির অবস্থান। মোট ৩৬টি চিত্রের প্রদর্শনী এটি। সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত এ প্রদর্শনীর শেষদিন মঙ্গলবার (০৭জুন)।
‘বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী-২০১৫’ শিরোনামে চারুকলা অনুষদের চিত্র-প্রদর্শনী। এবার নিরীক্ষাধর্মী পুরস্কার পেয়েছেন এমএফএ প্রোগ্রামের ২য় পর্বের শিক্ষার্থী সুস্মিতা সাহা রিমি। তার কাজের শিরোনাম ‘প্রকৃতির বিন্যাস’। কাগজে জলরঙে আঁকা এই চিত্রে প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিমা নির্মাণের ধারণা গৌণ হয়ে পড়েছে। রঙের প্রবাহ চিত্রতলের প্রধান নিয়ন্ত্রক। প্রতিমা বা প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদান রঙের সঙ্গে মিশে অলংকরণধর্মী একটি স্বশাসিত দৃশ্যরূপ এই চিত্রতলের প্রধান বৈশিষ্ট।
৩য় বর্ষের (বিএফএ সম্মান) শিক্ষার্থী হরেন্দ্র নাথ রায় জলরঙ ধোয়া পদ্ধতিতে করা ‘নাগারিঙ্গম’ শিরোনামের চিত্রকর্মের জন্য পেয়েছেন শ্রেষ্ট মাধ্যম পুরস্কার। শিল্পী শফিকুল আমীন স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হাসুরা আক্তার। মিনিয়েচার রীতিতে করা ‘মেলা’ শিরোনামের চিত্রকর্মের জন্য তিনি এই পুরস্কার লাভ করেন। ইউরোপের মধ্যযুগের খ্রিস্টীয় মিনিয়েচারের চিত্ররীতিকে কাজে লাগিয়ে শিল্পী ধর্মের পরিবর্তে ভূগোলের নিজস্ব ভাষাকে তার কাজে ব্যবহার করেছেন। উপস্থাপন করেছেন এ দেশীয় সাংস্কৃতিক জীবনের ছবি। চারুকলায় পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে কেন্দ্র করে যে ফর্ম তৈরি করা হয় তার সঙ্গে মিশিয়েছেন বাস্তব জীবনের চলমান সাংস্কৃতিক ভাষাকে।
৩য় বর্ষের (বিএফএ সম্মান) ছাত্রী শাহনাজ আক্তার জলরঙে করা তার ‘জড়জীবন’ কাজের জন্য পেয়েছেন শিল্পী আমিনুর ইসলাম স্মৃতি পরস্কার। রঙ ও আলোর দৃশ্যরূপকে তিনি স্বল্প ওয়াশে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ধরতে পেরেছেন এই কাজটিতে। ফর্মের গড়ন এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়। শিল্পী রশিদ চৌধুরী স্মৃতি পরস্কার পেয়েছেন ২য় বর্ষের (বিএফএ সম্মান) শিক্ষার্থী মুনমুন আলম খান। তার কাজের শিরোনাম ‘সিরিয়াস ডিসকাশন’। একাডেমিক রীতিতে করা হলেও শিক্ষার্থীর বড় পরিসরে কাজ করার সাহস ও স্বতঃস্ফূর্ত তুলি চালনার মনস্তাত্ত্বিক প্রবণতা প্রশংসনীয়।
মানুষের কথায়, আচার-আচরণে তার রুচির প্রমাণ বহন করে আর চিন্তা চেতনার প্রহিঃপ্রকাশে প্রমাণ মেলে তার দৃষ্টিভঙ্গীর। চিত্রকলা চিন্তা-চেতনা প্রকাশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সমকালীন প্রাতিষ্ঠানিক প্রাচ্যচিত্রকলা চর্চারত শিক্ষাথীরা ঐতিহাসিক পথ সন্ধানের পাশাপাশি তাদের নিজস্ব অস্তিত্ব খোঁজার তাগিদ কতোটুকু অনুভব করতে পারছেন- তার নির্দেশনা পাওয়া যাবে এই প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনীতে প্রাচ্যচিত্রকলার মূলনীতি বজায় রেখে জলরঙ ওয়াশ পদ্ধতির কাজ, ক্যালিগ্রাফি ও মিনিয়েচার বিষয়ক কাজ, পেন্সিল স্কেচ, কালি ও তুলি, অ্যাক্রেলিক, ক্যানভাসসহ বিভিন্ন মাধ্যম এবং বিষয়ভিত্তিক কাজ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৭ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৬
এসএনএস