ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১৬
ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ

ঢাকা: একটি গান কতোটা হৃদয়ের হলে, কতোটা বাস্তব হলে সব বাস্তবতাকে ডিঙিয়ে এক নাগাড়ে চলতে পারে! কতোটা হৃদয়স্পর্শী হলে সব পবিত্র মনে দিতে পারে দোলা! টানা ৮৪টি বছর ধরেই তো চলছে।

‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানি তাগিদ’...।

‘কী আবেগ, কী চেতনা, কী ভরপুরতা। যতোই বলা হোক কম হয়ে যাবে,’ এ কথা গানটির প্রথম গায়ক ওস্তাদ আব্বাস উদ্দিন আহমেদের।  

গানটিতে কাজী নজরুল ইসলাম ঢেলেছিলেন তার সব মায়া-মমতা। সে মায়া ধীরে ধীরে ঊর্ধ্বে উঠে গিয়ে পুরো বাঙালিকে ঈদের আনন্দে ভাসিয়েছে। আর গানটি হয়ে উঠেছে ঈদের আমেজ-খুশি-মাহাত্ম্য ও চেতনার প্রতিচ্ছবি।

পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ উঠবে আকাশে আর এ গানটি বাঙালির ঘরে ঘরে বেজে উঠবে না তা কী হয়! বর্তমানে তো আধুনিক যুগ, রেডিও, টেলিভিশন, অনলাইন, ইউটিউবের মাধ্যমে গানটি ছড়িয়ে যাচ্ছে শ্রোতাদের কানে কানে চাঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে।

বাঙালি মুসলমানের ঈদ উৎসবে ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ গানটি যেমন প্রাণে প্রাণে উজ্জ্বল। এ রকম একক ও স্বতন্ত্র জনপ্রিয়তা পৃথিবীর খুব কম গানের ক্ষেত্রেই এসেছে। সার্বজনীনভাবে প্রতি বছরই তো রমজান শেষে ঈদের চাঁদ উঠলেই সবার কণ্ঠে ধ্বণিত হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এ সাড়া জাগানো গানটি।

গান হিসেবে এটি বাঙালির কাছে বেশি পরিচিত হলেও মূল কবিতায় বেশ কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। নজরুল মূল গানটি রচনা করেন ১৯৩১ সালের শেষ দিকে। যে সময়টায় এ গান রচিত হয়, সে সময় নানা ধারার গানে নজরুলের খ্যাতি থাকলেও ইসলামি গান রেকর্ডিংয়ে সেভাবে হাত দেননি তিনি। ফলে তিনি যে একজন ইসলামি কবিও তা প্রমাণের বাধ্যবাধকতা ছিল। কারণ মুসলিম কট্টর সমাজে ততোক্ষণে নজরুল নিয়ে নানা সমালোচনাও ভাসছিল। যার একটা জবাব তিনি দিতে চাচ্ছিলেন।

সে সময়ই কলকাতা তথা গোটা বাঙালি সমাজে শিল্পী হিসেবে আব্বাস উদ্দিন আহমদের নাম বেশ শোনা যাচ্ছিল। নজরুলের সঙ্গে তার হৃদ্যতাও ছিল দারুণ। ফলে কবিকে তিনি অনুরোধ করেছিলেন ইসলামি গান লেখার, যাতে তিনি তা গাইতে পারেন। সে সময় নিয়মিত নজরুলের বাসায় যাতায়াতও ছিল আব্বাস উদ্দিনের। মূলত তারই অনুরোধ ছিল ইসলামি গান রেকর্ডিং করার।
নজরুলও বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে যেতে সম্মত হন এবং তখনকার গ্রামোফোন কোম্পানির রিহার্সেল ইনচার্জ ভগবতী ভট্টাচার্যের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আব্বাস উদ্দিনকে কথা করতে বলেন।

প্রথম দিকে লাভ-লোকসানের কথা চিন্তা করে এক শব্দেই ‘না’ করে দেন ভগবতী। তবে নানাভাবে তাকে বুঝিয়ে অবশেষে প্রায় এক বছর পর ইসলামি গানের রেকর্ড প্রকাশের সম্মতি আদায় করেন আব্বাস উদ্দিন।

গানটি রেকর্ড হওয়ার মাস দুয়েক পরই ছিল ঈদ-উল ফিতর। আর ঈদের সময়েই রেকর্ডটি বাজারজাত করে গ্রামোফোন কোম্পানি। রেকর্ড নং-৪১১১, প্রকাশকাল ১৯৩২ সালের ফেব্রুয়ারি। আর এ রেকর্ডটির সুবাদেই আজ থেকে প্রায় ৮৪ বছর আগে শ্রোতাদের কানে প্রথমবারের মতো পৌঁছে ‘রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ গানটি। সে থেকে এখনও চলছে, সমান তালে। সেদিন কি গানটির প্রথম গায়ক আব্বাস উদ্দিন কিংবা রচয়িতা কাজী নজরুল ভেবেছিলেন যে, এ গানটিই কালের পরিক্রমায় হয়ে উঠবে ঈদের খুশিরই এক অন্য নাম!

পরের পর্বে পড়ুন: কালজয়ী গানে যুগে যুগে ঈদের আনন্দ (দ্বিতীয় পর্ব)

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০১৬
আইএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।