ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৮)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৬
দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৮)

মূল: অগাস্ট কুবিজেক
অনুবাদ: আদনান সৈয়দ

[লেখক অগাস্ট কুবিজেক ছিলেন কুখ্যাত নাজি বাহিনীর জনক অ্যাডলফ হিটলারের ছেলেবেলার বন্ধু। তার জনপ্রিয় গ্রন্থ ‘দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ’ থেকে জানা যায়, হিটলার তার প্রথম যৌবনে গান গাইতেন, ধ্রুপদী সঙ্গীতের সমঝদার ছিলেন, ছিলেন একজন প্রেমিক ও ছবি আঁকায় তার ছিলো আজন্ম ঝোঁক।

তিনি যেনো এক অন্যরকম হিটলার! লেখক অগাস্ট কুবিজেক গ্রন্থটির মাধ্যমে হিটলারের জীবনের অনেক অজানা অধ্যায়কে উন্মোচন করার চেষ্টা করেছেন: অনুবাদক]

পর্ব ১৮

সপ্তম অধ্যায়

আমার ঠিক মনে পড়ে না অ্যাডলফ অন্যকোনো নারীর প্রতি কখনও তার আগ্রহ দেখিয়েছিল। তার কাছে স্টেফেনি ছিলো গোটা নারী জাতির প্রতিবিম্ব। পরবর্তীতে ভিয়েনায় লুসি উইড তার লুহেনগ্রিনে এলসা চরিত্রটি যখন রূপ দেয় তখন সেই মায়াবতী নারীটি অ্যাডলফের কাছে স্টেফেনি রূপেই ধরা পড়েছিল। স্টেফেনি নিজেও তার শারীরিক সৌন্দর্য বিবেচনায় এলসা এবং ওয়াগনার অপেরার অন্যন্য নারী চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে ছিলো। আমরা দু’জনেই খুব আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষায় ছিলাম, স্টেফেনির নাটকের সেরকম নায়িকাদের মতো কণ্ঠ বা সঙ্গীতের উপর কোনো দক্ষতা রয়েছে কিনা। অ্যাডলফ বিষয়টাকে খুব গর্বের সঙ্গেই দেখতো। তার দেবীতুল্য চেহারার কারণে অ্যাডলফ কখনও তার দিক থেকে মুখ ফেরাতে পারতো না। সে স্টেফেনিকে উদ্দেশ্য করে অগনিত প্রেমের কবিতা লিখেছিল। ‘প্রিয়ার জন্যে কবিতা’ এই শিরোনামে সে কয়েকটি কবিতা তার ছোট কালো নোট বইটায় লিখে আমাকে শুনিয়েছিল। তার কবিতাগুলো ছিলো-

‘স্টেফেনি, সম্ভ্রান্ত এক রমনীর নাম/গভীর নীল ফুলেল গাউনে ঢেকে আছে তার কোমল শরীর/ পিঠে তার  ঢেউ খেলানো অদম্য এক রাশ খোলা সোনালি চুল/ পেছনে দাঁড়িয়ে আছে পরিষ্কার বসন্তের রঙ আর নীল আকাশ/ সবকিছু কতোইনা পবিত্র/ আহা! কী অনাবিল আনন্দ!’

আমি এখনও স্পষ্ট অ্যাডলফের আনন্দ উজ্জ্বল মুখটা দেখতে পাই। কতো আনন্দ আর উৎসাহেই না সে তার প্রেমিকাকে লেখা কবিতাগুলো আমাকে পড়ে শুনিয়েছিলো। স্টেফেনি নামের মেয়েটি অ্যাডলফের চিন্তা এবং মননে সার্বক্ষণিক এমনভাবে জড়িয়ে পড়েছিল যে, তার ভবিষ্যত জীবনের সবকিছু শুধু তাকে কেন্দ্র করেই ভাবতে ভালোবাসতো। অ্যাডলফের বাড়িতে বৈরি পরিবেশ থাকা সত্যেও স্টেফেনি তখন আমার বন্ধুটির জীবনের এক বিশেষ জায়গা দখল করে নিয়েছিল। যদিও অ্যাডলফ তখন পর্যন্ত তার প্রেমে পড়ার বিষয়টি স্টেফেনিকে খোলামেলাভাবে বলতে পারেনি।

আমার ধারণায় স্টেফেনিকে নিয়ে এমন ভাবনা হওয়াটা ছিলো অ্যাডলফের জন্যে খুব স্বাভাবিক বা গতানুগতিক। এবং আমার স্পষ্ট মনে আছে, অ্যাডলফের সঙ্গে স্টেফেনির সম্পর্ক নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে যে কথাবার্তা হতো তাও ছিলো অনেকটা একই রকমের। তবে অ্যাডলফ আমাকে যে বিষয়টা সবসময় বোঝানোর চেষ্টা করতো তা হলো, একবার সে যখন স্টেফেনির মুখোমুখি হবে তখন কোনো বাক্য বিনিময় ছাড়াই তাদের দু’জনের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। তার কথা হলো, যেহেতু সে এবং স্টেফেনি দু’জনেই মানুষ হিসেবে অন্যদের থেকে আলাদা তাই তাদের পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে মুখ থেকে উচ্চারিত কোনো শব্দ খরচ করার প্রয়োজন নেই। দু’জন পাশাপাশি মুখোমুখি হয়ে বসলে চোখে চোখেই সব কথা বলা হয়ে যাবে। বিষয় যাই হোক না কেন অ্যাডলফ বিশ্বাস করতো, স্টেফেনি তার অন্তরাত্মার সব খবরই রাখে এবং সেও ঠিক তার মতো করে তাকেই শুধু ভাবছে। আমি যদি কখনও তার এই ছেলেমিসুলভ আচরণের সমালোচনা করতাম, বিশেষ করে সে যখন স্টেফেনির সঙ্গে কোনো বাক্যই বিনিময় করেনি- সেক্ষেত্রে সে আমার উপর রেগে যেতো এবং চিৎকার করে বলতো, ‘বিষয়টা নিয়ে তোমার বোঝার কোনো ক্ষমতাই নেই। কারণ, তুমি সত্যিকারের গভীর ভালোবাসার সংজ্ঞাটি জানো না। ’ তাকে শান্ত করার জন্যে আমি তাকে শুধু স্টেফেনির মুখোমুখি হতে বলতাম। তাকে বলতাম, সে যদি তার এই অসাধারণ ভালোবাসা সম্পর্কে এতোই নিশ্চিত থাকে, তাহলে তার সেই জ্ঞানটি আত্মিকভাবেই সে স্টেফেনির ভেতর ঢুকিয়ে দিচ্ছে না কেন? তার উত্তর ছিলো, ‘এটা সম্ভব!। এই বিষয়গুলোর কোনো ব্যাখ্যা নেই। আমার মধ্যে যা আছে তা একইভাবে স্টেফেনির হৃদয় মন্দিরেও বসবাস করে’। অবশ্যই আমি এই স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিয়ে খুব বেশি একটা ঘাঁটতে চাইতাম না। তবে আমার ভালো লাগতো এই ভেবে যে, অ্যাডলফ আমাকে সবসময় বিশ্বাস করতো কেননা তখন পর্যন্ত সে কারও সঙ্গেই এমনকি তার মায়ের সঙ্গেও স্টেফেনিকে নিয়ে কোনো মুখ খোলেনি।

সে স্টেফেনির কাছ থেকে যা আশা করতো তা হলো, সে স্টেফেনিকে নিয়ে যেমন ভাবে, স্টেফেনিও যেনো তাকে নিয়ে সেই একইরকম চিন্তায় মগ্ন থাকে। অনেক দিন ধরে সে এটাও ভাবতো, স্টেফেনির হয়তো অন্য কোনো যুবক বা কোনো যুবক সামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে সম্পর্ক আছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যখন দেখা গেলো অ্যাডলফের পরবর্তে স্টেফেনি একজন লেফটেন্যান্টের হাত ধরে ঘুরছে তখন স্টেফেনির প্রতি অ্যাডলফের হিংসার পরিমাণ আরও বেড়ে গেলো। কেন এই সুন্দরী যুবতীটি তার গোপন ভালোবাসার পাণিপ্রার্থী মানুষটাকে দেখতে পেলো না? তাহলে কী তার অন্য ভালোবাসার পাণিপ্রার্থীরা অ্যাডলফের চেয়েও বেশি আকর্ষণীয় ছিলো?  অবশ্যই আমি আমার এই ভাবনাগুলো কখনও অ্যাডলফের সামনে প্রকাশ করতাম না।  

একদিন সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘আমি এখন কী করতে পারি?’ সে আমার কাছে কখনও কোনো উপদেশ চায়নি। এবং এই প্রথমবার সে আমার উপদেশ চাওয়ায় আমি খুব গর্ব অনুভব করলাম। অন্তত এই পর্যায়ে তার চেয়েও ঢের বেশি জ্ঞানী হিসেবে নিজেকে ভেবে এক ধরনের সুখ অনুভব করলাম। ‘এটা কোনো বিষয়ই না। খুব সাধারণ’। আমি তাকে ব্যাখ্যা দিলাম। ‘তুমি মাথার টুপিটা কায়দা করে খুলে ওই দু’জন নারীর সামনে গিয়ে দাঁড়াও। তারপর মুখে হাসি ফুটিয়ে তুমি তার মায়ের কাছে তোমার নামটা বলো। তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তার মেয়েকে সম্বোধন করো এবং তার দিকে এগিয়ে যাও। ’আমার এই কথা শুনে অ্যাডলফ আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো এবং খুব গভীরভাবে বিষয়টা বিবেচনা করলো। শেষ পর্যন্ত সে আমার উপদেশ বর্জন করে আমাকে বললো, ‘স্টেফেনির মা যদি আমার পেশা সম্পর্কে জানতে চান তখন তাকে আমি কী বলবো? শেষ পর্যন্ত আমাকে আমার পেশার কথা তাকে বলতেই হবে। ভালো হয় যদি আমি আমার নাম এইভাবে উচ্চারণ করি- অ্যাডলফ হিটলার, পেশাদার চিত্রকর বা এমন কোনো ধরনের কিছু। কিন্তু আমি তো কোনো পেশাদার ছবি আঁকিয়ে নই। এবং আমি তা বলতেও চাই না যতোক্ষণ না পর্যন্ত আমি তা হতে পেরেছি। আবার সব মায়ের কাছে পেশা সবসময়ই নামের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে’।

বাংলাদেশ সময়: ২০১২, জুলাই ১৪, ২০১৬
এসএনএস

 

আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন-
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-২)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৩)

**দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৪)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৫)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৬)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৭)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৮)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৯)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১০)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১১)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১২)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৩
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৪)

** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৫)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৬)

** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৭)

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।