ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

কালিকাপ্রসাদের জন্য শোকগাঁথা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১২ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৭
কালিকাপ্রসাদের জন্য শোকগাঁথা ভারত বিচিত্রার প্রচ্ছদ

ঢাকা: সংগীত কাঁটাতারের ভাষা বোঝে না, তাই সহজে লঙ্ঘন করে সীমা। সে সীমাই বেঁচে থাকে অসীমের মাঝে। যেমন বেঁচে আছেন কালজয়ী কিংবদন্তিরা, বেঁচে থাকবেন একজন গানের কালিকাপ্রসাদ। রক, ফিউশনের যুগে শিকড়সন্ধানী চিরায়ত বাংলার গানে সম্প্রীতি গড়ে আদিরূপকে নবযুগে জনপ্রিয় করেছেন কালিকাপ্রসাদ ও তার ২০ বছর বয়সী গানের দল দোহার।

কালিকা আজ নেই। সড়ক দুর্ঘটনা মাস দুয়েক আগে থামিয়ে দিয়েছে তার জীবনের চাকা।

কালিকা এখন রবীন্দ্রনাথের ‘সীমার মাঝে অসীম’ ‘শূন্য মাঝে তব খুঁজে ফেরা’। আসামের শিলচরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে জন্ম নেওয়া কাঁচাপাকা ঝাঁকড়া চুলের কালিকাই সবার চোখাঞ্জন। দুই বাংলায় তার জনপ্রিয়তা ঈর্ষণীয়। বাংলাদেশে এসেছেন একাধিকবার। এমনকি মৃত্যুর ক’দিন আগেও। শাহবাগ আন্দোলনের সময় ‘শাহবাগ দিচ্ছে ডাক’ শিরোনামে একটি গানও বেঁধেছিলেন প্রাণের টানে।

ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন থেকে প্রকাশিত ভারত বিচিত্রা পত্রিকার মার্চ-এপ্রিল সংখ্যা উৎসর্গ করা হয়েছে মেধাবী, ব্যতিক্রমী এ গায়ককে। পত্রিকাটির ‘আমি তোমারই গান গান গাই’ শিরোনামে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন জনপ্রিয় এ তারকাকে নিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত বিভাগের রবীন্দ্রচেয়ার অধ্যাপক মহুয়া মুখোপাধ্যায় লিখেছেন ‘সীমার মাঝে অসীম তুমি’ শিরোনামে ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণমূলক তথ্যবহুল একটি নিবন্ধ।

কালিকাপ্রসাদ ও দোহারকালিকাপ্রসাদ কীভাবে দোহারের কালিকা হয়ে উঠলেন তার একটি ক্ষুদ্র রূপরেখা তার লেখাটি। শিলচরের কালিকার যে বাংলাদেশের প্রতি আলাদা টান ছিলো তাও স্পষ্ট লেখায়। মহুয়া লিখেছেন, ‘কালিকা যে বাংলাদেশেও এত জনপ্রিয় ওঁর অকাল প্রয়াণের আগে আমি বুঝতে পারিনি। অমোঘ বজ্রের মত ৭ মার্চ বেলা ১১টায় আমার গৌড়ীয় নৃত্যের ছাত্র শান্তনু হোয়াটসঅ্যাপে জানাল যে কালিকাপ্রসাদ আর নেই, আমি বিশ্বাস করতে পারিনি, সেইদিন থেকে কান্না শুরু হয়েছে, আজও লিখতে বসে কাঁদছি। এটা শুধু কুড়ি বছর ধরে পারিবারিক পরিচিতির সুবাদে নয়, এটা বাংলাকে- তার শেকড়ের ভালোবাসার দৃঢ়বন্ধনে। আমি দেখতে চেয়েছি বাংলার হাজার হাজার বছরের নৃত্যধারাকে, অমিতাভ দেখতে চেয়েছে সেই প্রাচীন শাস্ত্রীয় নৃত্য- গৌড়ীয় নৃত্যের অফুরন্ত সংগীত ভাণ্ডারকে আর লোকসংগীতের ভাণ্ডারী প্রাণোচ্ছ্বল দৃপ্তময় কালিকা দেখতে চেয়েছে দুই বাংলার লোকপরম্পরাগত গানের ধারাকে। সিলেট তাঁর খুব প্রিয় ছিল- তাই সে অনায়াসে বিচরণ করেছে ‍আব্দুল করিম শাহ, রাধারমণ, হাছন রাজার গান থেকে ধামাইল, গাজন সবধরনের গানে। ’

এই যুগে পশ্চিমা সুর-লয় এড়িয়ে বাংলার প্রাণের গানেই পরিচিতি কালিকার। কোনো মৌলিক গান নয়, আবহমান বাংলার কীর্তন, বাউল, ভাটিয়ালি, ঝুমুর প্রভৃতি গান গেয়েই ব্যতিক্রম দোহার। তিনি বলতেন, দোহার কোনো ব্যান্ড দল নয়, এটা গানের দল।

কালিকাপ্রসাদসদাহাস্য কালিকার দলের মোট সদস্য সাতজন। পোশাক-বাদ্যেও সবার পুরোদস্তুর বাঙালিয়ানা। ফতুয়া, উত্তরীয়, পাঞ্জাবিতে খোল, সারিন্দা, ডুবকি, খঞ্জনি নিয়েই স্টেজ মাতিয়েছে দোহার। দেখেছি রূপ সাগরে, গাড়ি চলে না, গান গাই আমার, ঝিলমিল ঝিলমিলসহ লোকগানগুলো যে বাংলা গানের প্রাণ- তা নতুন করে পরিচয় করাচ্ছিলেন কালিকা।

বাংলা সিনেমায় ধুম-ধাড়াক্কা, লিরিক্যাল গানের পাশাপাশি লোকজ সুরও যে জনপ্রিয় হতে পারে তা উপলব্ধি করেছিলেন তিনি। মনের মানুষ, জাতিস্মর সিনেমায় গান গাওয়ার পর তাই ভুবনমাঝি সিনেমায় করেছিলেন সংগীত পরিচালনা। কিন্তু এপথে হাঁটা হলো না বেশিদিন। হয়তো গানের এ জগতেও বড় পরিবর্তন অপেক্ষা করছিলো কালিকাপ্রসাদের হাত ধরে। সে আশা অকালে হারিয়ে গেলো চোরাবালিতে। শুধু হারায়নি, হারাবে না অসীমের কালিকাপ্রসাদ।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৩ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।