ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

এভিয়াট্যুর

অনুসন্ধানে দুদক

ঝুঁকিপূর্ণ উড্ডয়নে অনুমতি সিভিল এভিয়েশনে!

আদিত্য আরাফাত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৪
ঝুঁকিপূর্ণ উড্ডয়নে অনুমতি সিভিল এভিয়েশনে!

ঢাকা: মেয়াদোত্তীর্ণ পুরনো যন্ত্রাংশ নিয়ে আকাশে উড়েছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও বেস্ট এয়ারের একাধিক প্লেন। ঝুঁকিপূর্ণভাবে এসব প্লেনকে আকাশে উড্ডয়ন করতে দিয়েছে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (সিএএবি)।



বিমান চলাচল নিরাপদ রাখার দায় সিএএবি’র থাকলেও অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এ দায় এড়িয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে আসছে। রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি মনে করছে, বিশদ অনুসন্ধানে আরও অগ্রগতিমূলক তথ্য পাওয়া যাবে।

সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে চলতি সপ্তাহে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মাহমুদ হুসাইনের কাছে প্রয়োজনীয় নথিপত্র চেয়ে নোটিশ পাঠিয়েছে দুদক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে দুদকে আসা একাধিক অভিযোগ থেকে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান ও কয়েকজন ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি।

দুদকের কাছে আসা অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা অনিয়মের মাধ্যমে বেস্ট এয়ারলাইন্সের (যা পরে ডেসটিনি এয়ার হয়) দুটি রাশিয়ান এন-২৬ প্লেনের উড্ডয়নের অনুমোদন দিয়েছেন যেগুলোর বয়স ৩০ বছরের বেশি ছিল। এয়ার নেভিগেশন আদেশের চ্যাপ্টার এ-২, সেকশন-৩-৪ এ উল্লেখ রয়েছে-কোন প্লেনের টেকনিক্যাল ক্লিয়ারেন্স পেতে হলে প্রথমে প্লেন পরিদর্শন করতে হবে। কিন্তু পরিদর্শন না করে ওই এন-২৬ (রেজিস্ট্রেশন নং UR-ELE এবং UR-ELP) প্লেনকে উড্ডয়নের অনুমোদন দেওয়া হয়।

এছাড়া ইউনাইটেড এয়ার ওয়েজের এ-৩১০ প্লেন আমদানির আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে চেয়ারম্যানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এয়ার নেভিগেশন আদেশের (এএনও) চ্যাপ্টার এ-২ এর সেকশন ৩.৩ এ উল্লেখ রয়েছে, প্লেন আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ সময় ও এক বৎসর কাল পরবর্তী ‘সি’ ব্লকের চেকের জন্য থাকতে হবে। অথচ তা অমান্য করে এ-৩১০ (রেজিস্ট্রেশন নং এস২-এএফডব্লিউ) প্লেন আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়।

দুদকের কাছে আরেকটি অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, মেয়াদোত্তীর্ণ পুরনো যন্ত্রাংশ নিয়ে বেস্ট এয়ারকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে আকাশে উড্ডয়ন করতে দেওয়া হয়েছিলো। ২০১১ সাল পর্যন্ত অনিরাপদভাবে আকাশে উড্ডয়ন করেছে এ এয়ারলাইন্স এর প্লেনগুলো। আকাশে উড়ার অযোগ্য বেস্ট এয়ারের উড্ডয়নে বাঁধা না দেওয়ার পেছনে ছিল মোট অংকের অর্থের লেনদেন। এছাড়া ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের উড়োজাহাজও মেয়াদোত্তীর্ণ যন্ত্রাংশ নিয়ে উড্ডয়ন করেছে বলে দুদকের কাছে অভিযোগ রয়েছে।

ইউনাইটেড এয়ারের এসব অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করছেন দুদকের উপ-পরিচালক বেনজীর আহমেদ। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা অনুসন্ধানের পর্যায়ে রয়েছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের প্রয়োজনে এখনই কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। দুদক আইন অনুযায়ী কাজ করছে।

দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এসব অভিযোগে সিভিল এভিয়েশনের কাছে প্রয়োজনীয় নথি চেয়ে একাধিকবার নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে পরোক্ষভাবে নথি সরবরাহ করতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে। সর্বশেষ চলতি সপ্তাহেও নোটিশ পাঠায় রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি। এর পরও নথি না পাঠালে দুদক আইনি ব্যবস্থা নেবে বলে জানা গেছে।

দুদকের উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা জানান, সিভিল এভিয়েশনের দুর্নীতি অনুসন্ধানের নির্দেশনা দিয়েছে দুদকের আইন শাখা। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় নথি চেয়ে আবারো নোটিশ পাঠাতে বলা হয়েছে। যদি নির্ধারিত সময়ে নথি সরবরাহ না করে, তাহলে কমিশন এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেবে।

দুদকের কর্মকর্তারা বলেন, প্রয়োজনীয় নথি সরবরাহ না করলে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদক আইন ১৯ (৩) ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ ধারা অনুযায়ী, দুদকের নোটিশের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নথি সরবরাহ না করা হলে তিন বছরের জেল ও আর্থিক দণ্ডের বিধান রয়েছে।

সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মাহমুদ হুসাইন দুদককে জানিয়েছেন, এসব অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং কর্তৃপক্ষকে হয়রানির উদ্দেশে করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।