সংগঠনগুলো হওয়ার পেছনে রাজনীতির চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থই মূল উদ্দেশ্য বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এগুলোর কারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগকে সমালোচনায় পড়তে হচ্ছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন নামে বিভিন্ন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটতে থাকে। আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, দলটির নির্বাচনী প্রতীক নৌকা, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতাসহ দলের রাজনৈতিক চেতনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শব্দ ব্যবহার করে এসব সংগঠনের নামকরণ করা হয়েছে।
এ ধরনের শতাধিক সংগঠন রয়েছে। এসব সংগঠনের কোনো অফিস বা নির্দিষ্ট ঠিকানাও নেই। এমনকি সংগঠনগুলো যারা তৈরি করছেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা তেমন একটা সংশ্লিষ্টও নন। আবার আওয়ামী লীগের বিপরীতমুখী রাজনৈতিক দর্শনের লোকেরাও এসে এসব সংগঠনে ভিড়ছেন। তবে নামের সঙ্গে আওয়ামী লীগকে যুক্ত করায় সাধারণভাবে এ দলের সংগঠন হিসেবেই দৃশ্যমান হচ্ছে। আবার এসব সংগঠনের সুযোগও নিচ্ছে একটি গোষ্ঠী। আওয়ামী লীগকে বিতর্কিত করার জন্য দলটিকে জড়িয়ে বিভিন্ন নাম দিয়ে সংগঠনের ব্যানার তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে যেসব সংগঠন তৈরি করা হয়েছে বা হচ্ছে, এসব সংগঠনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কোনো সম্পর্ক নেই। আওয়ামী লীগের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয় না এসব। এসব সংগঠনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক সহযোগিতাও পাচ্ছে না। ব্যক্তি স্বার্থে ধান্দাবাজি-চাঁদাবাজির উদ্দেশে এসব সংগঠন তৈরি করা হচ্ছে। যেহেতু এসব সংগঠনকে আওয়ামী লীগ স্বীকৃতি দেয়নি, সেহেতু এসব সংগঠনের কোনো কর্মকাণ্ডের দায়ও আওয়ামী লীগ বহন করে না বলে নেতারা জানান।
এ ধরনের যেসব সংগঠনের নাম প্রায়ই শোনা যায়, সেগুলো হলো- আওয়ামী প্রচার লীগ, বঙ্গবন্ধু বাস্তুহারা লীগ, বঙ্গবন্ধু আদর্শ পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী অনলাইন লীগ, বিশ্ব আওয়ামী অনলাইন লীগ, বঙ্গবন্ধু লেখক লীগ, আওয়ামী শিশু লীগ, আওয়ামী শিশু-যুব সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ, আমরা নৌকার প্রজন্ম, আওয়ামী প্রচার লীগ, বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদ, আওয়ামী যুব সাংস্কৃতিক জোট, জননেত্রী পরিষদ, দেশরত্ন পরিষদ, নৌকার সমর্থক গোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, আওয়ামী হকার্স ফেডারেশন, আওয়ামী তৃণমূল লীগ, আওয়ামী যুব হকার্স লীগ, বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা বাস্তবায়ন পরিষদ, বঙ্গমাতা পরিষদ, আওয়ামী নৌকার মাঝি শ্রমিক লীগ, ডিজিটাল আওয়ামী প্রজন্ম লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, মুক্তিযোদ্ধা তরুণ লীগ, বঙ্গবন্ধু গ্রাম ডাক্তার পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ, জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় লীগ, আমরা মুজিব হবো, জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় সংসদ, আওয়ামী ছিন্নমূল হকার্স লীগ, আওয়ামী তরুণ লীগ, ডিজিটাল আওয়ামী ওলামা লীগ, আওয়ামী রিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য লীগ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ, আওয়ামী ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী লীগ, আওয়ামী পর্যটন লীগ, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা পরিষদ, তৃণমূল লীগ, চেতনায় মুজিব, দেশীয় চিকিৎসক লীগ, ছিন্নমূল মৎস্যজীবী লীগ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লীগ, নৌকার নতুন প্রজন্ম, ডিজিটাল ছাত্রলীগ, ২১ আগস্টের ঘাতক নির্মূল কমিটিসহ আরও অনেক।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, এগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই। এসব সংগঠন হঠাৎ করে গজিয়ে উঠে। এসব সংগঠন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোনো সহায়তাও করছে না। আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে ধান্দাবাজি-চাঁদাবাজির উদ্দেশেই এসব সংগঠন হয়েছে। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে যেসব সংগঠনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, সেই সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো ছাড়া আমাদের আর কোনো সংগঠন নেই। এসব সংগঠনকে আওয়ামী লীগ কখনও স্বীকৃতি দেয়নি বা এসব সংগঠনের দায়ও নেবে না। এসব সংগঠনের নামে কেউ নেতিবাচক কোনো কর্মকাণ্ড করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৯
এসকে/টিএ