ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

স্বল্পশিক্ষিতদের নাবিক আইডি কার্ড দেওয়ার অভিযোগ

মনোয়ারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১২

ঢাকা: বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) মতিঝিল ভবনের অষ্টম তলায় জাহাজে চাকরির জন্য পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) প্রার্থীদের বেশ ভিড়। অভিযোগ রয়েছে, জাহাজে নিবন্ধিত নাবিকের স্বল্পতা দূর করতে স্বল্পশিক্ষিত, প্রশিক্ষণবিহীন এবং অভিজ্ঞতা ছাড়াই এসব লোকজনেক এসব আইডি কার্ড দেওয়া হচ্ছে।



মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজধানীর মতিঝিলে বিআইডব্লিউটিএর এ ভবনের বারান্দায় উপচেপড়া ভিড়। কেউ আইডি কার্ডের পরীক্ষা দিতে, কেউ নোটিশ দেখতে, কেউ আইডি কার্ড সম্পর্কে জানতে এসেছে। এমনও দুই-একজনকে পাওয়া গেল যারা মানুষের ভিড় কেন তাই জানতে এসেছে।

জাহাজে চাকরির জন্য নাবিকদের নতুন করে আইডি কার্ড দেওয়া শুরু করেছে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর। এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গত ২ জুলাই। দেশে নিবন্ধিত নাবিকের স্বল্পতা দেখিয়ে নতুন করে আইডি কার্ড দেওয়া হচ্ছে। এই আইডি কার্ড পেতে আগ্রহীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে গত তিনদিন ধরে।

প্রার্থীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। ‘নাবিক আইডি কার্ড’ প্রার্থীরা বেশির ভাগই চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনার।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার বুড়িরচর গ্রাম থেকে এসেছেন মঞ্জুর হোসেন । তিনি জানান, মঙ্গলবার আইডি কার্ডের জন্য তার মৌখিক পরীক্ষা হবে। তাই সোমবার ঢাকায় এসেছেন। তাছাড়া কোনো তদবির করে কার্ড পাওয়া যায় কিনা এজন্য তাও দেখবেন। তবে তিনি নিয়ম অনুসারেই অবেদন করেছেন। তদবির দরকার কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবাই জানে তদবিরে টাকা পয়সা খরচ করলে কার্ড পাওয়া যায়। ’

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা গ্রামের বাদল পারভেজ বাবুল বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভাই, কোনো রকমে ম্যাট্রিক পাশ করেছি। এখন কোনোভাবে একটা নাবিক আইডি কার্ড পেলে জাহাজে চাকরি করব। এতে বিদেশে যাওয়ার সুযোগও তৈরি হবে। ’

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দ গ্রামের আজাদ হোসেন বলেন, ‘আমার দুলাভাই চট্টগ্রামে থাকেন। তিনি আমাকে বলেছে, একটা কার্ড যোগাড় করলে অনেক রোজগার করা যাবে। তবে ঢাকায় থাকলে এতোদিন লাইন করে ফেলতাম। এখন ঢাকায় থেকে যেভাবেই হোক একটি কার্ড যোগাড় করব। ’

মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে বের হবার পথে আসাদুজ্জামান জানান, তিনি জাহাজে যে কোনো কাজ করতে চান। পরীক্ষায় কী ধরনের প্রশ্ন হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো লিখিত পরীক্ষা হয় না। সবটাই মৌখিক। জাহাজের বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয়, হিসেব নিকেশ ও লেখাপড়া কতটুকু পারে এসব প্রশ্ন করা হয়। ’  এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আপনি বোধহয় সাংবাদিক আর বলা যাবে না। ’

অভিযোগ আছে, একটি আইডি কার্ড পেতে প্রত্যেককে খরচ করতে হচ্ছে কমপক্ষে তিন লাখ টাকা । সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর জোবায়ের আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ ধরনের নেতিবাচক কথা সবসময় শোনা যায়। কার্ডের বিষয়ে এমন অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে। তবে আমরা এ ব্যাপারে সতর্ক । অাশা করি,  আইডি কার্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি হবে না। ’

তিনি বলেন, ‘তবে অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা আইডি গ্রহীতার কাগজপত্র দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করবো। এসবের সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

জানা গেছে, এবার সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের আইডি কার্ড পাওয়ার জন্য আবেদনপত্র জমা পড়েছে ছয় শতাধিক। মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ হওয়া প্রার্থীদের পরিচয়পত্র নিতে কোনো ধরনের সরকারি ফি লাগবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছে অধিদপ্তর।

গত ২ জুলাই থেকে আইডি কার্ড ইস্যুর এ প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।   ২০০৪-০৫ সালেও প্রায় এক হাজার ৪৫০ জনকে আইডি কার্ড দেওয়া হয়েছিল।

অভিযোগ রয়েছে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আশীর্বাদপুষ্ট সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের দু-তিনজন কর্মকর্তা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এবার ৫০০ জনকে আইডি কার্ড দেওয়ার জন্য একটি তালিকা তৈরি করেছেন।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের রীতি অনুসরণ করে জাহাজে নিবন্ধিত নাবিকের স্বল্পতা কাটাতে স্বল্পশিক্ষিত, অভিজ্ঞতা ছাড়া এবং প্রশিক্ষণবিহীন লোকজনকে পরিচয়পত্র (আইডি) দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর।

এতে একদিকে অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে, প্রশিক্ষণবিহীন নাবিকদের কারণে বিশ্বের শিপিং সেক্টরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১২
এমআইআর/সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।