ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

অবশেষে কালো তালিকামুক্ত বাংলাদেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০১ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১২
অবশেষে কালো তালিকামুক্ত বাংলাদেশ

ঢাকা: অবশেষে তিন বছর পর ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিশেন অর্গানাইজেশন (আইকাও) এর কালো তালিকা থেকে মুক্ত হলো বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

গত ১৯ জুন ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাও) প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে।

সফরকারী প্রতিনিধি দলের রিপোর্টের ভিত্তিতে কালো তালিকা থেকে বের হতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।

আইকাওয়ের দেওয়া সুপারিশগুলো বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বাস্তবায়ন করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখতেই এ সফর করে প্রতিনিধি দলটি।  

২০০৯ সালের জুনে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাও) বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কার্যক্রমে নানা অসঙ্গতির কারণে বাংলাদেশকে নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়ে সিগনিফিকেন্ট সেফটি কনসার্নের (এসএসসি) তালিকাভুক্ত করে। যা বিমান চলাচল ব্যবসায় কালো তালিকা হিসেবে ধরা হয়। তালিকাভুক্ত করার পর আইকাও বেবিচককে কয়েকটি সুপারিশ দেয় এই তালিকা থেকে বের হওয়ার জন্য।  

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বলছে, আইকাওয়ের সুপারিশ অনুযায়ী সব ধরনের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। তাই এবার তারা কালো তালিকা থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছে।    

দুই সদস্যের একটি আইকাও পরিদর্শক দল ২১ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত বেবিচকের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করে। প্রতিনিধি দল মূলতঃ পাঁচটি বিষয়ে আলাদাভাবে পরিদর্শন করে। এর মধ্যে রয়েছে এয়ার ওয়ার্দিনেস, লাইসেন্স প্রদান, অপারেশনাল কার্যক্রম, অর্গানোগ্রাম ও এভিয়েশনের বিভিন্ন নিয়ম কানুন। আইকাও থেকে এই পাঁচটি বিষয়ে ৩৯টি পর্যবেক্ষণে ৩০৪টি প্রশ্ন দেওয়া হয়েছিল বেবিচককে। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যথাযথভাবে পারার কারণেই বাংলাদেশ আইকাওয়ের কালো তালিকা থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করে।

জানা গেছে, আইকাওয়ের চাহিদা অনুযায়ী এয়ার ওয়ার্দিনেসের ক্ষেত্রে বেবিচক ইতোমধ্যে একটি পরিকল্পনা ছক তৈরি করেছে। এই ছকের মাধ্যমে কাজ করেছে। অর্গানোগ্রাম ও এভিয়েশনের আইন তৈরি করে অনুমোদনের জন্য যথাক্রমে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া লাইসেন্স প্রদান ও অপারেশনাল কার্যক্রম নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। এর জন্য আইকাওয়ের নির্দেশ অনুযায়ী প্রায় ২০টির মতো ম্যানুয়েল তৈরি করেছে বেবিচক।

এদিকে এসএসসিতে থাকার ফলে আমেরিকান ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) বেবিচককে ক্যাটাগরি-২ এ রেখেছে। ক্যাটাগরি-২ থেকে বের হওয়ার জন্য এফএএ ৬১টি বিষয়ে সুপারিশ করেছে।

সূত্র জানায়, বেবিচক আইকাওয়ের সুপারিশগুলোর বাস্তবায়নের পাশাপাশি এফএএর সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করছে। ৬১টি সুপারিশের মধ্যে ৪৬টির কাজ এরই মধ্যে শেষ করেছে বেবিচক। ১৫ বছরের পুরনো আইএলএস (ইন্সট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম) পাল্টে আন্তর্জাতিক মানের সিস্টেম সংযোজন করা হয়েছে। আগে উড়োজাহাজ ল্যান্ডিংয়ের জন্য পাইলটদের একমাত্র উপায় ছিল রানওয়ের বাতি। একই সঙ্গে স্থাপন করা হয়েছে এভিয়েশন ওয়েদার অবজারভেশন সিস্টেম (এডব্লিউওএস)। পাইলটদের দৃষ্টিসীমাকে সহায়তা করার জন্য স্থাপন করা হয়েছে রানওয়ে ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ (আরভিএস) মেশিন। আগামী অক্টোবর থেকে বিমানবন্দরের রানওয়ের সংস্কার কাজও শুরু হবে। আগামী আগস্টে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য কয়েকজন আন্তর্জাতিক মানের বিশেষজ্ঞ আনা হবে।

প্রসঙ্গত, আইকাওয়ের একটি দল ২০০৯ সালের মে মাসে বেবিচকের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করে একটি রিপোর্ট প্রদান করে। ওই রিপোর্টে বলা ছিল, বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন (বেবিচক) থেকে যেসব বিমান সংস্থাকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে তার বেশির ভাগের উড্ডয়ন নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম, রক্ষণাবেক্ষণ, প্রশিক্ষণ, যোগ্য জনবল বা অন্যান্য ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি রয়েছে। এর মধ্যে লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে ১২টি, পরিচালনার ক্ষেত্রে ৭টিসহ প্রকৌশল, এয়ার নেভিগেশন ও আইন মানার ক্ষেত্রে সিভিল এভিয়েশনের অনেক ত্রুটি চিহ্নিত করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত আইকাওয়ের নিয়ম মানা হয়নি। আর এসব দক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ, পরিচালনা ও মান উন্নয়নে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসাবে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ঘাটতি রয়েছে। আইকাও এ ধরনের নিয়ন্ত্রণকারী লাইসেন্স পাওয়া বিমান সংস্থাকে ঝূঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করছিল।

বেবিচক এসএসসিতে  থাকার ফলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাদের নিউইয়র্ক রুট চালু করতে পারেনি। দেশের কোনো বিমান সংস্থা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নতুন করে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পাচ্ছিল না। এছাড়া দেশের বিমান সংস্থাগুলো ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পেতেও বেগ পেতে হচ্ছিল।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, জুল‍াই ২১, ২০১২
আইএইচ/সম্পাদনা: আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।