ঢাকা: বন্যপ্রাণী পাচারের নিরাপদ ট্রানজিট রুট হয়ে উঠেছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। আন্তর্জাতিক চোরাকারবারীদের সঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিভিল এভিয়েশন) ও কাস্টমসের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা গাঁটছড়া বাঁধায় এ বিমানবন্দর দিয়ে খুব সহজেই বন্যপ্রাণী পাচার করা সম্ভব হচ্ছে।
সম্প্রতি বেশ কিছু বন্যপ্রাণী পাচারের ঘটনা অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিমানবন্দর ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, শাহজালাল বিমানবন্দর ঘিরে গড়ে ওঠা চোরাচালান সিন্ডিকেটটিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন জেনিস চার্স জেসকোজান নামে এক জার্মান ও হু চু মারতেলা নামে এক থাই নাগরিক। আর এ পাচার কাজে বাংলাদেশ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তালুকদার আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছেন আফসানা নামে এক নারী।
গত ১৬ এপ্রিল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৪ নম্বর গেট থেকে লাগেজ তল্লাসী করে ৪০৬টি কচ্ছপ ছানাসহ জুলফিকার আলী হাসনাইন (৪৫)ও অভিজিৎ দাস (৪২) নামে দুই ভারতীয় নাগরিককে আটক করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা।
ওই দুই ভারতীয় নাগরিকের ব্যাংকক এয়ার লাইন্সের ফ্লাইটে ব্যাংকক যাওয়ার কথা ছিলো।
তাদের আটকের পর এ বিষয়ে বিমানবন্দর থানায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়।
মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সিভিল এভিয়েশনের কয়েক জন লাগেজ স্ক্যান অপারেটর ও কাস্টমস এর বিমানবন্দরের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত বলে জানতে পারে পুলিশ।
গত ৬ আগস্ট গভীর রাতে ব্যাংকক এয়ার লাইন্সের অপর এক ফ্লাইটে ব্যাংকক যাওয়ার সময় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের এএসপি মিনহাজ এর নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল ১০৮টি কচ্ছপ ছানাসহ শেখ কিবরিয়া (৪৮) নামে এক ভারতীয় নাগরিক ও খায়রুল আলম (৩২) নামে এক বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে।
জিঞ্জাসাবাদে তারা পুলিশকে জানায়, কারওয়ান বাজার এলাকায় আফসানা (৪০) নামে এক নারী তাদের কচ্ছপগুলো দিয়ে বলেছিলো- বিমানবন্দরে প্রবেশের পর লাগেজ স্ক্যানার অপারেটর আমিনা খাতুন ও কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও)আব্দুর রশীদ তাদের সহযোগিতা করবে।
সে অনুযায়ী ওই দুই কর্মকর্তা আটক দুই চোরাকারবারীকে সহযোগিতাও করে বলে জানান ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার এসআই কামরুল ইসলাস।
তিনি আরও জানান, যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে চোরাই পথে এসব কচ্ছপ এনে বাংলাদেশ থেকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় থাইল্যান্ডর ব্যাংককে। সেখান থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এসব কচ্ছপ পাচার হয়।
কচ্ছপ ছাড়াও বিভিন্ন বন্যপ্রাণী পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবেও এখন শাহজালাল বিমানবন্দরকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অষ্টম আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কমাড্যান্ট ড. হাসানুল হায়দার বাংলানিউজ বলেন, “কঠোর নিরাপত্তা সত্ত্বেও পাচারকারীরা নিত্যনতুন পদ্ধতি অবলম্বন করছে। আমরা এদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছি। এদের গ্রেফতারে বিমানবন্দর এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ”
খুব তাড়াতাড়ি এ চক্রের মূল হোতা গ্রেফতার হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময় : ২০০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১২
এআর/ সম্পাদনা: জাকারিয়া মন্ডল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর