ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

চিড়িয়াখানার বেহাল দশা-০২

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ৪২ প্রাণী

আহমেদ রাজু, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১০
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ৪২ প্রাণী

ঢাকা: ঢাকা চিড়িয়াখানার বিভিন্ন প্রজাতির ৪২টি প্রাণী এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এদের বেশির ভাগেরই স্বাভাবিক জীবনকাল পেরিয়ে গেছে।

তাই যে কোনো সময় বৃদ্ধ এই প্রাণীগুলো মারা যেতে পারে।
 
প্রাণীগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বাংলানিউজকে এ কথা জানায়।
 
চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা বলেছেন, বয়সের ভারে বৃদ্ধ প্রাণীগুলো স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরাও করতে পারে না। কোনো কোনো প্রাণীর দাঁতও নেই। তাই ঠিকমতো খেতেও পারে না। তারপরও পুষ্টিকর খাবার, আবাস পরিবর্তন, উন্নত চিকিৎসা ও বিশেষ যতেœর মাধ্যমে এদের বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে।

সাউথ এশিয়ান জু অ্যাসোসিয়েশন অব রিজিওনাল কো-অপারেশনের (সাজারক) বাংলাদেশ শাখার সভাপতি ও প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, জীবনকাল পেরিয়ে গেলে উন্নত বিশ্বের চিড়িয়াখানায় বৃদ্ধ প্রাণীদের ইউথেশেনিয়া (বিশেষ ইনজেকশন) দিয়ে মেরে ফেলা হয়। চিড়িয়াখানা আইনে সারা বিশ্ব জুড়েই এটি স্বীকৃত। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এই ব্যবস্থা আছে। তাই একটি কমিটি করে বৃদ্ধ প্রাণীগুলোর ব্যাপারেও সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
 
এদিকে প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আশরাফ আলী বাংলানিউজকে বলেছেন, পৃথিবীর কোনো দেশে এই ব্যবস্থা আছে বলে আমার জানা নেই। তবে বাংলাদেশের আইনে চিড়িয়াখানার বৃদ্ধ ও অসুস্থ প্রাণীকে মেরে ফেলার বিধান নেই। এ ছাড়া মানবিক দিকটিও আছে। তাই প্রাণীগুলোকে মেরে ফেলা হচ্ছে না।
 
চিড়িয়াখানার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ সিংহ। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষই সিংহ পছন্দ করেন। এখন চিড়িয়াখানায় ১৬টি সিংহ রয়েছে। এদের বাবা-মা ভাস্কর ও শান্তি । বার্ধক্যের কারণে এদের দাঁত একেবারেই ক্ষয় হয়ে গেছে। তাই এরা খেতে পারে না। মাংস থেতলে এদের খেতে দেয়া হয়। অন্যদিকে ভাস্কর গত তিন বছর ধরে অন্ধ। সামনে খাবার দিলেও দেখতে পায় না। তাই শব্দ শুনে আশপাশে খাবার হাতড়ে বেড়ায়।
 
ভাস্কর ও শান্তিকে পরিচর্যাকারী এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, গত দুই বছর ধরে সিংহ দু’টিকে হাসপাতালে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, শেডে (ছাউনিতে) রাখলে অনেক আগেই এরা মারা যেতো। বন্য পশু হলেও সিংহ দু’টির একে অন্যের প্রতি রয়েছে গভীর মমতা। ভাস্কর অন্ধ হলেও শান্তিকে সারাক্ষণ আগলে রাখে। মানুষের শব্দ শুনলেই শান্তিকে রক্ষার জন্য সে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শান্তিকে আড়াল করে সে সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। এমন কি রাতে ঘুমিয়ে গেলেও শান্তিকে আড়াল করেই ঘুমিয়ে থাকে ভাস্কর। ’

এমন ভালোবাসা মানুষের মধ্যেও সচরাচর দেখা যায় না বলে অভিমত ওই কর্মকর্তার।

চিড়িয়াখানায় আগে দু’টি গণ্ডার ছিলো। পুরুষ গণ্ডারটি মারা গেছে অনেক আগেই। একমাত্র জীবিত মাদী গণ্ডারটিও এখন দারুণ অসুস্থ। স্বাভাবিক ভাবে গণ্ডারের  জীবনকাল ১৫ থেকে ২০ বছর। চিড়িয়াখানার গন্ডারটির বয়স এখন ১৮ বছর। একদিকে বার্ধক্য অন্যদিকে গণ্ডারের জরায়ুতে পুঁজ জমেছে। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছে না। তাই যে কোনো মুহূর্তে এটি মারা যেতে পারে বলে জানান চিড়িয়াখানার পশু চিকিৎসকরা।
 
প্রাণীদের মধ্যে ঘড়িয়ালের জীবৎকাল ৩০ বছর। কিন্তু চিড়িয়াখানার একটি ঘড়িয়ালের বয়স এখন ৩৭ পার হয়ে গেছে। বয়সের ভারে ঘড়িয়ালটি এখন চলতেই পারে না। অপরদিকে কুমির বাঁচে ৬০ থেকে ৬৫ বছর। কিন্তু চিড়িয়াখানার সবচেয়ে বয়স্ক কুমিরের বয়স এখন ৮০ বছর। এটিও যে কোনো মুহূর্তে মারা যেতে পারে।

পাখি প্রজাতির মধ্যে অস্ট্রিস বাঁচে ২২ বছর। কিন্তু চিড়িয়াখানার অস্ট্রিসের বয়স ২৭ বছর। একইভাবে কেশোয়ারি বাঁচে ২৫ বছর। কিন্তু চিড়িয়ানার কোশোয়ারির বয়স ২৮ বছর। রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাঁচে ১৫ থেকে ২০ বছর। কিন্তু চিড়িয়াখানার বৃদ্ধ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বয়স এখন ১৮ বছর। সিংহ বাঁচে ১৫ থেকে ২০ বছর। চিড়িয়াখানার সবচেয়ে বৃদ্ধ সিংহের বয়স এখন  ১৯ বছর। অপরদিকে হায়েনা বাঁচে ২৫ বছর। কিন্তু একমাত্র হায়েনার বয়স ৩১ পেরিয়ে। তাই এটিও যে কোনো মুহূর্তে মারা যেতে পারে। একই ভাবে শিম্পাঞ্জী বাঁচে ২৫ বছর। চিড়িয়াখানার একটি শিম্পাঞ্জী বয়সসীমা পার হয়ে আরও দুই বছর কেটে গেছে।
 
এদিকে দর্শকদের পছন্দের বেশির ভাগ প্রাণী বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ায় বিদেশ থেকে নতুন প্রাণী আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘন্টা, ০১, নভেম্বর, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।