ঢাকা: ঢাকা চিড়িয়াখানায় দর্শক টানতে আরও ৪২ প্রজাতির প্রাণী আনার দৌড়ঝাঁপ চলছে। অথচ প্রাণী কেনার টাকা কবে পাওয়া যাবে এখনও তা নিশ্চিত নয়।
ঢাকা চিড়িয়াখানার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ কথা জানা গেছে।
চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর ডা. এবিএম শহিদ উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেছেন, ‘আমরা ঢাকা চিড়িয়াখানাকে বিশ্বমানের চিড়িয়াখানায় উন্নীত করতে চাই। সে লক্ষ্য নিয়েই এখন কাজ করছি। সরকারের কাছ থেকে অর্থ বরাদ্দ পেলেই আমরা উন্নয়ন কাজ শুরু করবো। ’
চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা বলেন, দর্শকরা পছন্দ করেন এমন প্রাণীর বেশির ভাগই মারা গেছে। এখনও যেসব প্রাণী বেঁচে আছে সেগুলোও বেশির ভাগ সময় শেড (ছাউনি) থেকে বের হয় না। তাই দর্শকরা চিড়িয়াখানায় গিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন না।
এ অবস্থায় চিড়িয়াখানায় দর্শক বাড়াতে বিদেশ থেকে ৪২ প্রজাতির প্রাণী আনার প্রক্রিয়া চলছে। এতে ১৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয় হবে বলে জানান তারা।
কর্তৃপক্ষ জানায়, আগে চিড়িয়াখানায় পাঁচটি জিরাফ ছিলো। গত বছর তিনটি জিরাফ মারা গেছে। এখন চিড়িয়াখানায় রয়েছ দু’টি। তাই নতুন করে চারটি জিরাফ আনা হচ্ছে।
প্রতিটি জিরাফের দাম ১ কোটি টাকা করে চারটির দাম পড়বে ৪ কোটি টাকা।
গণ্ডার আনা হচ্ছে দু’টি। প্রতিটি ৭০ লাখ টাকা হিসাবে ব্যয় হবে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
প্রতিটি ৫০ লাখ টাকা করে ছয়টি ওরাং ওটাংয়ের দাম পড়বে ৩ কোটি টাকা। অপর দিকে ৩০ লাখ টাকা করে চারটি টাপিরের দাম পড়বে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
আট লাখ টাকা করে ছয়টি জেব্রার দাম পড়বে ৪৮ লাখ টাকা। প্রত্যেকটি ৪ লাখ টাকা দরে ছয়টি ইম্পালার দাম পড়বে ২৪ লাখ টাকা।
অন্যদিকে দেড় লাখ টাকা দরে চারটি উট পাখির দাম পড়বে ৬ লাখ টাকা।
এছাড়াও আনা হচ্ছে ভোঁদর, বেইসা অরিক্স, লাল ক্যাঙ্গারু, ম্যান্ড্রিল, ঘোড়া, উলু বানর, কালো বানর, লেমুর, কলাবাস বানর, ভলুক বিড়াল, চশমা পড়া হনুমান, উট, চিত্রা হায়েনা, ডোরা কাটা হায়েনা, মালায়ন টাপির, রেসাস বানর, উল্লুক, গ্রেটার কুডু, ইমু, উটপাখি, আফ্রিকান গ্রে, তোতা, সালফার ক্রেস্টেড, কাকাতুয়া, বাজরিগর, ককাটেইল গ্রে, সাদা ককাটেইল, ফিসারস লাভ বার্ড, তিতির, মাছরাঙা, সাপ পাখি, পিংক লাভ বার্ড, রাজ ধনেশ, ফেমিঙ্গো, ম্যাকাও, পেলিকেন ও রিয়াসহ ৪২ প্রজাতির প্রাণী।
কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন প্রাণী আনার পাশাপাশি চিড়িয়াখানাকে ঢেলে সাজাতে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। চিড়িয়াখানার হাসপাতালে এখন কোনও আধুনিক যন্ত্র নেই। প্রাণিদের রোগ শনাক্ত করা দুরূহ পড়েছে। তাই হাসপাতালে আনা হচ্ছে আধুনিক যন্ত্রপাতি।
হাসপাতালে থাকবে একটি উচ্চমানের পরীক্ষাগার। পরীক্ষাগারটি হবে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত।
বিদেশ থেকে পরীক্ষাগারের জন্য যন্ত্রপাতি আনার প্রক্রিয়া চলছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যেই যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, কোরিয়া, চিন ও জাপান থেকে এসব যন্ত্রপাতি আনা হবে। যন্ত্রপাতিগুলো আমদানি করতে টেন্ডার প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা।
যন্ত্রপাতির মধ্যে থাকবে রোগ শনাক্তকরণ কিটস, খাদ্যদ্রব্য পরীক্ষার যন্ত্র, ডায়াগনোস্টিক যন্ত্রপাতি ও উন্নত মানের অ্যানেসথেটিকস ব্যবস্থা।
শুষ্ক মওসুমে চিড়িয়াখানায় তীব্র পানির সঙ্কট দেখা দেয়। তখন পশুপাখির গোসল ও পানি খাওয়ার কষ্ট হয়। তাই চিড়িয়াখানার ভেতরে পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ রাখতে বসানো হচ্ছে গভীর নলকূপ।
বিদ্যুৎ না থাকলে চিড়িয়াখানা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে। তাই ১৪ লাখ টাকায় ৩২ কেভির জেনারেটর স্থাপন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও রয়েছে রায়োগ্যাস প্লান্ট।
আগামীতে চিড়িয়াখানায় সোলার প্যানেল স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১০