ঢাকা: ভবন নির্মাণে সয়েল টেস্ট (মাটি পরীক্ষা) বাধ্যতামূলক হলেও এর জন্য নেই কোনো নীতিমালা। ফলে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে এ ধরনের পরীক্ষাকে পাশ কাটিয়েই।
বাংলাদেশ আর্থ কোয়াক সমিতির সভাপতি এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বাংলানিউজকে বলেন, ‘দেশে সাধারণত কল পোতা মিস্ত্রী দিয়ে মাটি পরীক্ষা করা হয়। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এসব হাতুড়ে প্রতিষ্ঠানে নেই কোনো জিও টেকনিকেল ইঞ্জিনিয়ার। ’
‘মিস্ত্রীদের অভিজ্ঞতার আলোকে অনুমান নির্ভর মাটির নমুনা সংগ্রহ করেন ভবন নির্মাতারা। ফলে ভুল অনুমানের ওপর নির্মিত হচ্ছে বেশির ভাগ ভবন’, বলেন তিনি।
অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিভাগের অধ্যাপক এবং ইউএনডিপির আরবান রিস্ক রিডাকসন প্রকল্পের প্রধান ড. মাকসুদ কামাল বাংলানিউজকে জানান, ঢাকার চারপাশের নদীর ভেতরে অবস্থিত মধুপুর কের বয়স ১০ লাখ বছরের ও বেশি। এ লাল রঙের শক্ত মাটি ভবন তৈরির জন্য উপযুক্ত। তবে ৫৯০ বর্গমাইলের ঢাকায় এ ধরনের ভূমির পরিমাণ মাত্র ৩৫ ভাগ। ’
বাকি ৬৫ শতাংশ নরম মাটিতে ভবন তৈরির যথাযথ প্রযুক্তি বাংলাদেশে নেই বলেও জানান এই বিশেষজ্ঞ।
ড. কামাল আরও বলেন, ‘ভুল সয়েল টেস্ট রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে যেমন ভবনের নকশা তৈরি হচ্ছে, রাজউকও তেমনি তা অনুমোদন দিচ্ছে। ফলে ঘটছে অঘটন এবং প্রাণহানির মতো ঘটনা। ’
বাংলাদেশ আর্থ কোয়াক সমিতির সভাপতি ড. আনসারী এ বিষয়ে বলেন, ‘দেশে মাত্র সাতটি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান আছে যারা পিডব্লিউডির তালিকাভুক্ত। এদেরই কেবল মাটি পরীক্ষার সব লজিস্টিক সুবিধা এবং বিশেষজ্ঞ আছে। ’
ভবন নির্মাণে মাটি পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাড্ডা, রামপুরাসহ সমগ্র ঢাকায় গড়ে ওঠা শতাধিক মাটি পরীক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান জানেই না কোনো মাটিতে কি ধরনের পরীক্ষা চালাতে হয়। ’
সাধারণত খারাপ মাটিকে ভবন তৈরির উপযোগী করার জন্য কনসুলেটিং টেস্ট করার প্রয়োজন পড়ে এজন্য কমপক্ষে ১০ দিন সময় লাগে।
কিন্তু কেউই এতোদিন অপেক্ষা করেন না বলে মন্তব্য করেন আনসারী।
তার ভাষ্য অনুযায়ী, ‘এ জন্য দায়ী ওই ভবনের নকশাকারী প্রকৌশলী। ’
কেবলমাত্র মাটি পরীক্ষার ত্রুটির জন্যই বেশির ভাগ ভবন ভেঙে পড়ছে এবং ভবন ধসের ঘটনা ঘটছে জানিয়ে মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ‘বিদেশি বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বাংলাদেশে যে হারে বহুতল ভবন তৈরি হচ্ছে, তাতে আগামী কয়েক বছরে অসংখ্য ভবন ভেঙে পড়বে। ’
বাংলাদেশ ভূতত্ত্ব অধিদপ্তরের পরিচালক ড. এটিএম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘জরিপে দেখা গেছে নতুন ঢাকা গড়ে উঠেছে মূলত জলাশয় ভারাট করে। অথচ এদেশে প্রকৌশল নিয়ম মেনে কেউ কোনোদিন ভরাট কাজ করেনি। ’
তিনি বলেন, ‘যেখানে ছয় ইঞ্চির স্তর করে করে রোলিংয়ের নিয়ম রয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং আইনে সেখানে ঢাকার নিম্নভূমি ভরাট হচ্ছে কখনো কখনো একই সঙ্গে বিশ ফুট, আবার কখনো ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে। যা একবোরেই ঝুকিপূর্ণ ও অবৈধ। ’
এ বছরের জুনের ১ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত ঢাকায় বেশকটি ভবন ধসের ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১০