ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

বিদ্যুৎ ও পণ্যের শুল্কমুক্তির আশ্বাস পেল না বাংলাদেশ

আনোয়ারুল করিম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১০
বিদ্যুৎ ও পণ্যের শুল্কমুক্তির আশ্বাস পেল না বাংলাদেশ

আগরতলা থেকে : বিদ্যুৎ আমদানি ও বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ত্রিপুরার মূখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের কাছ থেকে স্পষ্ট কোনো আশ্বাস পেলো না বাংলাদেশ।

ত্রিপুরার মূখ্যমন্ত্রী বুধবার আগরতলায় ব্যবসায়ীদের এক সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির উপস্থিতিতেই এ বিষয়ে বলেন, ‘পালাটানায় নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সর্বোচ্চ ২০০ মেগাওয়াট পাবে ত্রিপুরা।

ত্রিপুরার চাহিদা মেটানোর পর বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকলে তা বাংলাদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে। ’

ত্রিপুরায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মানিক সরকার বলেন, ‘এই বিষয়ে আমাদের আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। ’

তিনি বলেন, ‘তবে এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষে একা সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব নয়। ’

আগরতলার ‘প্রজ্ঞাভবনে’ ভারতীয় শিল্পপতিদের সংগঠন ‘কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ’ (সিআইআই) আয়োজিত ‘উত্তরপূর্ব ভারত ও বাংলাদেশ : বন্ধুত্ব দৃঢ়করণ’ শীর্ষক সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মানিক সরকার এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ৪৫ জন ব্যবসায়ীসহ উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর শীর্ষ ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ত্রিপুরাসহ উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের অনুরোধ জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মূখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার তার বক্তব্যে ত্রিপুরার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে ত্রিপুরা সরকারের পাশাপাশি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গেও বাংলাদেশকে আলোচনা করার প্রস্তাব দেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার-ব্যবস্থা এমন যে, হঠাৎ করেই আমরা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারি না। আমাদের আলোচনার প্রয়োজন হয়। ’

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশের বিদ্যুতের অভাব রয়েছে। তা থেকে নিষ্কৃতি পেতে তারা আমাদের সহায়তা চেয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘পালাটানায় ৭২৬ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মালামাল পরিবহণে বাংলাদেশ সহায়তা করছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কিছু বিদ্যুৎ বাংলাদেশ চায়। পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ত্রিপুরা ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাবে। এই বিদ্যুতের পুরোটাই আপাতত ত্রিপুরার প্রয়োজন হবে না। সেখান থেকে বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করলে আমরা খুবই খুশি হবো। ’

তিনি বলেন, ২০১২ সালের মধ্যে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত যৌথ ইশতেহারের বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়ে মানিক সরকার বলেন, ‘ইশতেহার বাস্তবায়নে উভয় পক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে। ’

এই অঞ্চলের কূটনীতির প্রতি ইঙ্গিত করে মানিক সরকার বলেন, ‘বড় আয়তন ও বেশি জনসংখ্যার ভিত্তিতে এখন আর কোনো দেশের বড়ভাই সুলভ আচরণের সুযোগ নেই। ’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র হবে। নেপাল, ভুটান বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবহারের জন্য এই দুই বন্দরকে আমরা ব্যবহারের সুযোগ দিতে চাই। এই বন্দরের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে পুরো অঞ্চলের সমৃদ্ধি আনা সম্ভব। বন্দরকে আমরা পুরো অঞ্চলের সমৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করতে চাই। ’

তিনি বলেন, ‘এই অঞ্চলকে শান্তি, নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধির অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। ’

ভারত ও বাংলাদেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ ইশতেহারের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইশতেহারের সব বিষয় নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এই ইশতেহার অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। ’

তিনি বলেন, ‘তবে এই ইশতেহারের কিছু বিষয়ে হয়তো এখনো আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। সে ক্ষেত্রে দুই দেশেরই কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুলে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। ’

দারিদ্রকে এই অঞ্চলের প্রধান শত্রু উল্লেখ করে বলেন, ‘বিশ্বের শতকরা ৪০ শতাংশ দরিদ্রের বাস এই অঞ্চলে। দরিদ্রতা, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এই হুমকিকে আমরা শক্ত হাতে দমন করতে চাই। একই সঙ্গে হাতে হাত ধরে আমরা এই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাই। ’

ত্রিপুরায় প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশের বন্দর ও স্থলপথ ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে দীপু মনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে এই সহযোগিতার মাধ্যমে অন্য ক্ষেত্রগুলোতেও বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যেতে চায়। ’

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য অভিন্ন ৫৪টি নদী প্রবাহিত হচ্ছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘৫৪টি নদী যে দুই দেশের মধ্যে বয়ে যায়, তাদের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য হবেই। ’

তিনি বলেন, ‘নদীর পানির কত অংশ কে পাবে সে বিষয়টি খুব মূখ্য নয়। প্রয়োজন হলো পানি ব্যবস্থাপনা। ’

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দুই দেশের নদীর পানি ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে। ’

দীপু মনি বলেন, ‘সংকীর্ণ চিন্তাভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া যাবে না। আমাদের ভাগ্য একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।

ভারত ও বাংলাদেশের বর্তমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককেই ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে এই সম্পর্ক এক রকম ছিল না। মাঝে কিছু সময় এই সম্পর্কের ব্যত্যয় ঘটেছিল। ’

দুই দেশের বাণিজ্যে কিছু বাধার কথা উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, ‘আন্তঃবাণিজ্যে শুল্ক ও অশুল্ক কিছু  বাধা রয়ে গেছে। তবে দুই দেশ ঠিক থাকলে সেই বাধা দূর হয়ে যাবে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের বাধা দূর হওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার। ’

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগ (কানেকটিভিটি) বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে দীপু মনি বলেন, ‘দুই দেশের স্থল ও নৌ যোগাযোগ নতুন কোনো বিষয় নয়। দুই দেশের মধ্যে আগেও এই রুটগুলো দিয়ে যোগাযোগ ছিল। ’

তিনি বলেন, ‘তাই নতুন করে যোগাযোগ শুরু হওয়া নয়, বরং পুরনো যোগাযোগকেই পুনরুজ্জীবিত করতে চাই। ’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন মহাদেশ যখন এক হচ্ছে, তখন আমরা কি পেছনে পড়ে থাকবো। ’

তিনি বলেন, ‘এই অঞ্চল বিশ্বের সবচেয়ে কম সমন্বিত অঞ্চল। ’

ভারতীয় শিল্পপতিদের সংগঠন ‘কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ’ (সিআইআই) এর উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় এলাকার সদস্য সুধীন্দ্রকুমার দুবের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ইন্দো-বাংলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমদ, ত্রিপুরার মূখ্য সচিব এসকে পাণ্ডে, ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক আহমেদ করিম, বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার রজিত মিত্র, ত্রিপুরার শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী জীতেন্দ্র চৌধুরী প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময় : ১৯৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।