ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

ত্রিপুরায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পার্কের নির্মাণ শুরু বৃহস্পতিবার

আনোয়ারুল করিম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১০
ত্রিপুরায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পার্কের নির্মাণ শুরু বৃহস্পতিবার

আগরতলা থেকে: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে বৃহস্পতিবার ত্রিপুরায় শুরু হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পার্ক নির্মাণের কাজ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখতে ও দু’দেশের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে দৃঢ় করতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় ত্রিপুরা রাজ্য সরকার এই স্মৃতিপার্ক নির্মাণ করছে।



পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বুধবার দুপুরে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় আসেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বুধবার রাতে আগরতলার রাষ্ট্রীয় অতিথিশালায় বাংলানিউজকে জানান, তিনি বৃহস্পতিবার সকাল এগারোটায় বিলোনিয়া মহকুমার চিত্তখোলায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পার্কের শিলান্যাস (ভিত্তিপ্রস্তর) স্থাপন করবেন।  

ত্রিপুরার শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী জীতেন্দ্র চৌধুরী বুধবার বাংলানিউজকে জানান, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে ৪০ বছর পর ত্রিপুরার রাজ্য সরকার মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে ১৩২ কিলোমিটার দূরে বিলোনিয়া মহকুমায় চিত্তখোলা নামক স্থানে পার্কটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

এখানে ১৯৭১ সালে মুক্তি সংগ্রামে নিহত অসংখ্য বীর সেনানীকে সমাহিত করা হয়। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পও ছিল। এতদিন ঘন জঙ্গল আর আগাছায় পরিপূর্ণ ছিল তা। ত্রিপুরা সরকারের উদ্যোগে ম্মৃতিপার্ক নির্মাণের উদ্দেশে স্থানটি পরিস্কার করা হয়েছে।
 
জীতেন্দ্র চৌধুরী নিজে এই পার্কটি স্থাপনের জন্য নিয়ামকের ভূমিকা পালন করেন।

বাংলানিউজকে জীতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, ‘২০ হেক্টর জমিতে সাতটি টিলা ও একটি প্রাকৃতিক লেক নিয়ে পার্কটি গড়ে তোলা হবে। সাতটি টিলার একটিতে স্থাপন করা হবে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য। অন্য ছয়টি টিলা ও সমতল ভূমিতে স্থাপন করা হবে শিশুদের বিনোদন কেন্দ্র। ’

তিনি জানান, শুধু পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্র নয়, থাকবে একটি জাদুঘরও। সেখানে থাকবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত  নানা ধরনের অস্ত্র। থাকবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি।

জীতেন্দ্র চৌধুরী জানান, পার্কে থাকছে পাঠাগার, যেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রকাশিত বই পুস্তক থাকবে। পাঠাগারটিকে ডিজিটাল পাঠাগার করার চিন্তাভাবনা করছে ত্রিপুরা রাজ্য সরকার। রাস্তার উল্টোদিকে থাকবে পর্যটকদের রাত্রিযাপনের আধুনিক ব্যবস্থা।

মূল পার্কের ২০ হেক্টর জমির পর আছে কাজু বাদামের বাগান। এর ভেতর তিন কিলোমিটার বনে পথ থাকবে। মুঘল আমলে নির্মিত ছোট এক মসজিদের গিয়ে এই পথ শেষ হবে। পার্ক থেকে অন্য আরেকটি পথ যাবে বাইসন অভয়ারণ্যে। পর্যটকরা শুধু পার্ক নয়, এর বাইরে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

জীতেন্দ্র চৌধুরী জানান, মুক্তিযুদ্ধ পার্ক স্থাপনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে।

তিনি জানান, পার্কের নকশা সর্ম্পকে মতামত নিতে গত আগস্ট মাসে ত্রিপুরা সরকারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের কয়েকজন প্রথিতযশা শিল্পী ও বুদ্ধিজীবী আগতলা সফর করেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরার অবদান স্মরণীয়। একাত্তরের পাক হানাদারের অভিযানের মুখে প্রায় ১৬ লাখ আশ্রয়হীন মানুষ শরনার্থী হিসাবে ত্রিপুরায় আশ্রয় নিয়েছিল। ওই সময় ত্রিপুরার মোট জনসংখ্যা ছিল ১৪ লাখ।

শুধু শরনার্থী শিবির নয়, সেসময় গড়ে ওঠেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শিবির ও হাসপাতাল। বাংলাদেশে চরম দু:সময়ে মানবিকতার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছিল ত্রিপুরার মানুষ।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দু’দেশের মধ্যে ৫০ দফা যৌথ ইশতেহার সাক্ষরের পর রাজ্য সরকার ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের মধ্যে সর্ম্পকের বন্ধন আরও দৃঢ় করতে পার্কটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা করছেন, এই পার্কটির মাধ্যমে ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।