ঢাকা: ইমারত নির্মাণ বিধিমালা না মেনেই লালমাটিয়ায় নির্মিত হচ্ছে দু’টি বহুতল আবাসিক ভবন। ৩৬০ আমলাকে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিতেই অবৈধভাবে ভবন দু’টি নির্মাণ করছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানায়।
তবে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ওয়াহিদ আজহার বাংলানিজউকে বলেছেন, ‘ভবন নির্মাণে আমরা রাজউকের নীতিমালা ভঙ্গ করিনি। রাজউক প্রণীত নীতিমালা অনুসরণ করেই ভবন দু’টি নির্মিত হচ্ছে। ’
সূত্র জানায়, আসাদগেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পেছনে লালমাটিয়া গাড়ির হাট মাঠের পাশে গৃহায়নের ৪৫ কাঠা জমি রয়েছে। বছরখানেক আগেও সেখানে দু’টি সরকারি বাড়ি ছিল। সেখানে গৃহায়নের কর্মকর্তারা বাস করতেন। ছিল গাছপালা ঘেরা এক মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। সেই জমিতেই দু’টি ১৪ তলা ভবন নির্মাণ করছে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ।
অথচ ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী সেখানে সর্বোচ্চ ৮ থেকে ৯ তলা ভবন নির্মাণ করা যেতে পারে বলে সূত্র জানায়। এর বেশি উঁচু ভবন নির্মাণ করলেই নীতিমালা ভঙ্গ করা হবে।
এ নিয়ে এলাকাবাসীও অবাক। ১৪ তলা ভবন নির্মাণের কথা শুনে তাদের কেউ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
ভবন দু’টি নির্মাণে সামনের রাস্তা ও খালি জায়গা রাখার শর্তও মানা হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
বিধিমালা অনুযায়ী ইমারতের সামনে, পেছনে ও দু’ পাশে ন্যুনতম উন্মুক্ত স্থান থাকা বাধ্যতামূলক।
রাস্তার প্রস্থ যাই থাকুক না কেন, বিদ্যমান রাস্তার কেন্দ্র থেকে ১৫ ফুট অথবা ভূমির সীমানা থেকে কমপক্ষে ৫ ফুট জায়গা ছেড়ে নির্মাণ করতে হবে নতুন ইমারত।
উন্মুক্ত স্থান বিবেচনায় রেখে বহুতল ভবনের অনুমোদন দেয় রাজউক। খোলা জায়গা অনুপাতে উচ্চ ইমারত নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়।
প্লটের আকার যাই হোক না কেন, ৩ কাঠা পর্যন্ত প্লটের জন্য পেছনে ও দু’পাশে সাড়ে ৩ ফুট করে জায়গা ছাড়ার নিয়ম রয়েছে।
চার কাঠার জন্য পেছনে ৫ ফুট ও দু’পাশে ছাড়তে হবে সাড়ে ৩ ফুট। নির্ধারিত জমি ২০ কাঠা কিংবা তার বেশি হলে পেছনে ৭ ফুট এবং দু’পাশে ছাড়তে হবে সাড়ে ৪ ফুট করে।
নির্মানাধীন ভবনের চারপাশে নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা ছাড়তে হলেও আগের নিয়মের চেয়ে আরেক তলা বেশি উঁচু করা যাবে।
একাধিক ছোট প্লট এক সঙ্গে করেও বাড়ি নির্মাণ করা যাবে। তবে সেটি একটি প্লট বলেই গণ্য হবে। ইমারত ১৬০ ফুট বা তার বেশি উঁচু হলে সহজে বৃষ্টির পানি শোষনের জন্য ৫০ ভাগ মাটি রাখতে হবে।
ভবনের সামনেও নির্দিষ্ট পরিমাণ রাস্তার জন্য জমি ছাড়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ রাস্তা নেই।
ভবনের পরিকল্পনায় সামনে ৬০ ফুট রাস্তার উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে রাস্তা রয়েছে ৩০ ফুট।
আগে ভবনের দু’পাশ দিয়ে রাস্তা ছিল ২৫ ফুট। কিন্তু দু’পাশ দিয়ে ৮ ফুট করে রাস্তা দখল করায় এখন রয়েছে ১৭ ফুট।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের তথ্য গোপন ও রাস্তা দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করায় এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সূত্র জানায়, প্রকল্প প্রস্তাবে বড় ফ্ল্যাটের আয়তন ১২৫০ বর্গফুট ও ছোট ফ্ল্যাটের আয়তন দেখানো হয়েছিল ১০২০ বর্গফুট করে। কিন্তু রাস্তা দখল করে ফ্ল্যাটের আয়তন বাড়ানো হয়েছে।
ফলে ১২৫০ বর্গফুটের ফ্যাট এখন ১৪৫০ বর্গফুট করে নির্মিত হচ্ছে। দাম রাখা হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা।
অপরদিকে ১০২০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের আয়তন বাড়িয়ে ১২০০ বর্গফুট করা হয়েছে। দাম রাখা হয়েছে ৩৬ লাখ টাকা।
গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ জানায়, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ২০০৮ সালে মিরপুর ও লালমাটিয়ায় অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। বিপুল সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা ফ্ল্যাট বরাদ্দ পেতে আবেদন করেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ দিকে গৃহায়ন প্রকল্পটির ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিতে লটারির আয়োজন করে।
ভবন দু’টির প্রত্যেকটিতে ১৮০টি করে ফ্ল্যাট বরাদ্দের কথা থাকলেও তখন বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৫০টি ফ্ল্যাট।
তখন অনিয়মতান্ত্রিকভাবে গৃহায়ন ৩০টি ফ্ল্যাট নিজের হাতে রেখে দেয়।
নিয়ম অনুযায়ী সবগুলো ফ্ল্যাট লটারির মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়ার বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে। সেই ফ্ল্যাটগুলো গৃহায়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান তার পছন্দের লোকদের বরাদ্দ দিয়েছেন।
আবেদন করেও শত শত সরকারি কর্মকর্তা প্রকল্পটিতে ফ্ল্যাট পাননি।
অথচ আবেদন না করেও বিনা লটারিতে ২৪ সরকারি কমর্কর্তা ফ্ল্যাট পেয়েছেন।
গৃহায়নের সাবেক পরিচালক ও বর্তমানে চুয়াডাঙ্গার ডিসি ভোলানাথ দে, গৃহায়নের চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান, সাবেক চেয়ারম্যান আবুবকর সিদ্দিক, সদস্য (ইঞ্জিয়ারিং) খন্দকার আকতারুজ্জামান, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব শিরিন আখতারসহ চারজন যুগ্মসচিব ফ্ল্যাট সবাই পেয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১০