আগরতলা থেকে: ভারতের উত্তপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার পশ্চিম প্রান্তে পালাটানায় আগামী জানুয়ারিতেই ৭২৬ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হচ্ছে। এ লক্ষ্যে এরইমধ্যে সড়ক সংস্কার এবং নদীতে রাবার ড্যাম তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩২০ টন ওজনের টারবাইনগুলো ২৬০ চাকার বিশাল আকারের ট্রলিতে পরিবহণ করা হবে।
ত্রিপুরার বিদ্যুৎ মন্ত্রী মানিক দে গত বুধবার আগরতলায় রাজ্য সরকারের সচিবালয়ে (মহাকরণ) বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানান।
মানিক দে বলেন, ‘জানুয়ারির মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরুর ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ’
৭২৬ দশমিক ৬ মেগাওয়াট মতার কম্বাইন্ড সাইকেল গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে ভারতের তেল গ্যাস করপোরেশন ‘ওএনজিসি’-র আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান ওটিপিসি (ওএনজিসি ত্রিপুরা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড)। এ প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্র, রাজ্য ও পাবলিক শেয়ারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
বিদ্যুৎমন্ত্রী মানিক দে জানালেন, পালাটানার জন্য মালামাল পরিবহণে বাংলাদেশ সরকারের লিখিত অনুমোদনপত্র এরই মধ্যে ওএনজিসির কাছে পৌঁছেছে। তারা এসব ভারী পণ্য পরিবহণের জন্য ভারতের সবচেয়ে বড় পরিবহণ ও আন্তর্জাতিক ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং প্রতিষ্ঠান ‘এবিসি ইন্ডিয়া’র সঙ্গে চুক্তিও সম্পন্ন করেছে।
তিনি বলেন, ‘গত সোমবার পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিষয়ে আগরতলায় ত্রিপুরার পূর্ত, বিদ্যুৎ, বন, রাজস্ব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয় বৈঠক হয়। ’
আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে মাল পরিবহণের সড়ক থেকে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করার সিদ্ধান্তও বৈঠক থেকে নেওয়া হয় বলে জানান মানিক দে।
তিনি বলেন, ‘রাজ্যের ৪৪ নম্বর জাতীয় মহাসড়কের অনেক অংশই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারী সরঞ্জাম নিয়ে লরির চলাচলের উপযোগী নয়। এই জন্য পশ্চিম ও দণি ত্রিপুরা জেলার সড়ক প্রশস্তকরণ ও সেতু মেরামতের কাজ চলছে। ’
রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী বলেন, ‘বিজয়, হাওড়া ও গোমতী নদীর সেতুগুলোতে ওই লরি চলাচল করতে পারবে না। এজন্য সেতুর পাশে নদীগুলোর ওপর বিশেষ ধরনের বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। ’
বিদ্যুৎ মন্ত্রী জানান, নদীর ওপর শক্ত পাইপ দিয়ে এসব বাঁধ তৈরি করার কাজ শুরু করেছে রাজ্য প্রশাসন ও এবিসি ইন্ডিয়া। এছাড়া কিছু স্থানে সরকারি দপ্তর ও স্থাপনার সীমানা দেয়াল ভাঙার কাজ করছে রাজ্য পূর্ত দপ্তর। এর বাইরে পুরো পথের দু’পাশে বেশিরভাগ অংশেই সরকারি বনভূমির গাছও কাটছে রাজ্য বন দপ্তর।
মানিক দে বলেন, ‘আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের পর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সরঞ্জামবাহী লরিগুলো আগরতলা হয়ে বটতলা সেতু, সেকেরকোটের বাঁক, বিশ্রামগঞ্জ বাজার, চড়িলাম, বিশালগড় ও উদয়পুর দিয়ে প্রায় একশ’ কিলোমিটার দূরে পালাটানায় যাবে। ’
এই পথে হাওড়া, বিজয় ও গোমতি’র মতো বড় নদী পড়বে বলেও তিনি জানান।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সরঞ্জাম পরিবহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত এবিসি ইন্ডিয়ার ত্রিপুরা রাজ্য প্রধান ডি এন তিওয়ারির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘সড়ক প্রস্তুতির কাজ জোরেশোরেই চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই বাংলাদেশের আশুগঞ্জ বন্দর দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল পরিবহণ শুরু করতে পারবো। ’
তিনি বলেন, ‘ওএনজিসি জানুয়ারিতেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু করতে চায়। ’
তিওয়ারি বলেন, ‘সরকারি দপ্তরের আধিকারিকদের (কর্মকর্তা) নিয়ে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখে কাজের তদারকি করা হচ্ছে। ’
পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার ট্রান্সফরমার সরানোর কাজ শনিবার থেকেই শুরু হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
ডি এন তিওয়ারি বলেন, ‘মালামাল পরিবহণের জন্য এসব সেতু, সড়ক ও দেওয়াল ভাঙ্গা এবং বিদ্যুতের খুঁটি ও ট্রান্সফরমার স্থানান্তরণের খরচ এবিসি ইন্ডিয়া বহণ করবে। যা ওপিটিসির সঙ্গে করা চুক্তির মধ্যেই রয়েছে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারী সরঞ্জাম নিয়ে ট্রলিগুলো চলবে খুব ধীর গতিতে। দিনে সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে এগুলো। ’
বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১৩১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১০