ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

মনমোহনের সফরে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি সই হচ্ছে

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১১
মনমোহনের সফরে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি সই হচ্ছে

ঢাকা: ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সফরে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি স্বাক্ষর হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একটি সূত্র।

সূত্রটি বাংলানিউজকে জানিয়েছে, মন্ত্রীসভার ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির সদস্যরা খসড়া চুক্তির বিষয়ে পৃথক পৃথকভাবে সম্মতি দিয়েছেন।



এ বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) আবুল কাশেম বাংলানিউজকে জানিয়েছে, আমি এখনও নিশ্চিত নয় তবে শুনেছি মন্ত্রীসভা অনুমোদন দিয়েছে।

এর আগে গত ২০ জুলাই বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তির খসড়া অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভায় উপস্থাপন করা হলে, মন্ত্রীসভা চুক্তির খসড়া কপি রিভিউ করার জন্য ফেরৎ পাঠায়।

ওইদিন মন্ত্রীসভার বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, চুক্তির কিছু ধারা পর্যালোচনা করার জন্য ফেরৎ পাঠানো হয়েছে। তবে সেপ্টেম্বরে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে।

তিনি আরও বলেছিলেন, ২৫ বছর মেয়াদী এই চুক্তি হবে। এই দীর্ঘ সময় পরে আমাদের বিদ্যুৎ আমদানির প্রয়োজন নাও পড়তে পারে। সে কারণে বেশি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

গত জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে ভারত থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তির বিষয়ে সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর করা হয়। এরপরে কয়েক দফা সময় পেছানোর পর গত ৭ মার্চ দুই দেশের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে চলতি মাসেই (মাচের্র)  দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করার ঘোষণা করা হয়।  

বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, ‘মূল সমস্যা ছিল চুক্তি পরবর্তী আইনী জটিলতা। ভারত দাবি করেছিল সে দেশের আদালতে বিচার করতে আর বাংলাদেশ প্রস্তাব ছিল আন্তর্জাতিক আদালতের বিষয়ে। সর্বশেষ আর্ন্তজাতিক আদালত হিসেবে সিঙ্গাপুরের বিষয়ে মধ্যস্থতা হয়েছে। ’

সূত্র জানিয়েছে, ‘এখনও কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে সে বিষয়েও জটিলতা নিরসন হয়নি। এর সাথে জড়িত রয়েছে দামের বিষয়টি। কারণ ভারতের একেকটি কেন্দ্রে বিদ্যুতের দাম একেক রকম। ’

বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘যে চুক্তি হতে যাচ্ছে, তাতে বর্তমানে শুধু আমদানি হলেও এই লাইন দিয়ে পরবর্তী সময়ে বিদ্যুৎ রফতানি করা হবে। খুলনায় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সেখান থেকে ভারত এই লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ আমদানি করবে। ’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এ ধরনের চুক্তির পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, তাই এখানে ঝুঁকির পরিমান কিছুটা বেশি। তাই চুক্তি করার আগে আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। ’

পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, ভারতের অন্যান্য রাজ্যে যে দরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় একই দরে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যাপারে ভারত সম্মত হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, গত বছর প্রথম যখন এ নিয়ে আলোচনা হয়, তখন জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা ছিলো ভারতের। তবে সমঝোতা স্মারকের আগেই সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলে ভারতের জাতীয় বিদ্যুৎ সংস্থা ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন (এনটিপিসি)।

এরপরে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বহরামপুর থেকে বাংলাদেশের ভেড়ামারা পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ সঞ্চালন লাইন স্থাপন কাজ শুরু করা হয়।

ধারণা করা হয়েছিলো, বহরামপুরের কাছাকাছি কোন প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে এনটিপিসি। কিন্তু পশ্চিম বঙ্গের বর্তমান বিদ্যুৎ পরিস্থিতির কারণে এ নিয়ে অনিশ্চয়তার তৈরি হয়েছে।

এর আগে গত জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফরকালে এ চুক্তি সম্পাদন করার বিষয়ে জোর চেষ্টা চালানো হয়। তখনও মন্ত্রীসভার অনুমোদন না পাওয়ায় চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের জনসংযোগ পরিদফতরের পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে এই বিদ্যুৎ আমদানি করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে বিদ্যুতের লাইন স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। চুক্তি স্বাক্ষরে বিলম্ব হলেও কোন সমস্যা নেই।

বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে চেষ্টা চলছে তবে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এর বেশি কোন মন্তব্য করতে তিনি রাজি হননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।