ঢাকা: ভাষণ একজন রাজনৈতিক নেতার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা। এর বলেই আম জনতার কাছে বেড়ে যায় নেতার গ্রহণযোগ্যতা।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের ভাষণ লিখে দিতেন টমাস জেফারসন, জেমস মেডিসন ও আলেকজান্ডার হ্যামিলটন। ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট এ কাজে ব্যবহার করতেন বিখ্যাত নাট্যকার রবার্ট শেরউডকে। জন এফ কেনেডির বেশির ভাগ ভাষণই লিখতেন তার কাউন্সিলর থিওডোর সোরেনসন ও ইতিহাসবিদ আর্থার এম. শ্লেসিঙ্গার। আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নির্বাচনী ভাষণ লিখতেন জন ফেবেরু।
আবার কোনো স্পিচ রাইটারের সাহায্য না নিয়েই ভাষণ দিয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছান গণতন্ত্রের জনক আব্রাহাম লিংকন। তার বিখ্যাত ‘গেটিসবার্গ অ্যাড্রেস’ মানবেতিহাসের অন্যতম সেরা ভাষণগুলোর একটি। বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ছিলেন অনলবর্ষী বক্তা। তার ভাষণেরও কোনো লেখক ছিলো না। এমনকি কোনো নোটের সাহায্য ছাড়াই ভাষণ দিতেন বঙ্গবন্ধু। তার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি বাঙালি জাতিকে দিয়েছিল মুক্তির প্রেরণা আর স্বাধীনতার দিকনির্দেশ। তার ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’--এই উক্তি আজ বাঙালির চিরকালের মুক্তির বীজমন্ত্র হয়ে আছে।
বাংলাদেশের বর্তমান বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার ভাষণ লেখক হিসেবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনের নাম শোনা গেলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করা হয়নি কখনোই। তবে ভাষণের কলা-কৌশল, শব্দ চয়ন ও প্রয়োগ থেকে সংশ্লিষ্ট সবারই ধারণা, ২০০১ সালের নির্বাচনী ভাষণ এবং পরবর্তী সময়ে তিনি ক্ষমতায় আসার পর তার ভাষণগুলো লিখতেন জনপ্রিয় কলাম লেখক ও সাংবাদিক শফিক রেহমান। কিন্তু তার প্রমাণ ছিলো লোকচক্ষুর অন্তরালেই। আড্ডায় আলোচনায় এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে কথা হয়েছে অনেক।
শফিক রেহমান নিজে কখনোই এ কথা স্বীকার না করলেও এর একটি প্রমাণ বাংলানিউজের হাতে এসেছে।
গত ১৪ নভেম্বর আইএসপিআর ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের সদস্যরা যখন সাংবাদিকদের সেনানিবাসে খালেদা জিয়ার ছেড়ে আসা ৬ মঈনুল রোডের বাড়িটি দেখাতে নিয়ে যান, তখন একটি কভার লেটারসহ এমন একটি ভাষণের কপি অযত্নে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
খালেদা জিয়ার শোবার ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা ওই কপিটি ছিল ২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে শফিক রেহমানের লিখে দেওয়া একটি নির্বাচনী ভাষণের প্রথম খসড়া। বাংলানিউজের আলোকচিত্রী তুলে আনেন দৈনিক যায়যায়দিনের প্যাডে লেখা সেই খসড়া ভাষণের কভার লেটারটির চিত্র।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ক্ষমতায় আসে। এরপর শফিক রেহমান জোট সরকারের কাছ থেকে তেজগাঁওয়ে শিল্পপ্লট বরাদ্দ নেন। সেখানে তিনি ২২ বছর ধরে প্রকাশ হয়ে আসা সাপ্তাহিক যায়যায়দিনকে দৈনিক হিসেবে প্রকাশ করেন। তিনি ছিলেন সাপ্তাহিক যায়যায়দিনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। এ সাপ্তাহিকে তিনি ‘দিনের পর দিন’ নামে কলাম লিখে ব্যাপক খ্যাতি লাভ করেন।
দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকাটির অফিস সে সময়ের সবচেয়ে বিলাসবহুল ‘যায়যায়দিন... মিডিয়া কমপ্লেক্স’ নামে পরিচিতি পায়।
জোট আমলেই তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে লাল গোলাপ নামে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন। বর্তমানে অনুষ্ঠানটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনে প্রচারিত হচ্ছে।
বর্তমানে শফিক রেহমান মৌচাকে ঢিল নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করছেন।
বাংলাদেশ সময় ১৮২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১০