ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

বঙ্গবন্ধুর ‍ডাকে ব্যারিস্টারি পড়া ছাড়েন আবদুল জলিল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৩
বঙ্গবন্ধুর ‍ডাকে ব্যারিস্টারি পড়া ছাড়েন আবদুল জলিল

ঢাকা: বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, উপদেষ্টাপরিষদের সদস্য আব্দুল জলিল এমপি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লা....রাজিউন)।

রাজধানী ঢাকায় সিঙ্গাপুর থেকে তার মৃত্যুর সংবাদ এসে পৌঁছলে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে।



এদিকে, নওগাঁয় তার জন্মভূমিতে মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছলে এলাকায় সর্বসাধরণের মধ্য শোকের ছায়া নেমে আসে। খবর বাসসের।

বুধবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর ফুপাত ভাই ইছা হক।

তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন আব্দুল জলিল। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তাকে হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

এই প্রবীণ রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

এছাড়া জাতীয় সংসদে স্পিকার আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেট, ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী, চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।

২০০২ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের ১৯তম কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান জলিল। তার আগে আওয়ামী লীগের বিগত সরকারে টেকনোক্র্যাট কোটায় বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য জাতীয় সংসদে নওগাঁ-৫ আসনের সংসদ সদস্য। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

আব্দুল জলিল ১৯৩৯ সালের ২১ জানুয়ারি নওগাঁয় শহরের চকপ্রাণ মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন নওগাঁ শহরের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। জলিল ছিলেন তাঁর পিতার একমাত্র পুত্র সন্তান। ১৯৫৭ সালে নওগাঁ কে ডি স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৬০ সালে বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স (রাষ্ট্র বিজ্ঞান) ও ১৯৬৪ সালে এম এ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে ব্যারিস্টারি (বার এট ল) পড়ার জন্য তিনি বিলেত যান।

১৯৬৯ সালে তখন দেশে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন চলছিল। এ সময় বঙ্গবন্ধু বিলেত যান এবং অধ্যয়নরত প্রাক্তন ছাত্র নেতাদের নিয়ে এক বৈঠক করেন। আর এসময় আব্দুল জলিলের পরিচয় হয় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। পরিচয়ের পর বঙ্গবন্ধুর ডাকে ৬৯ সালেই দেশে ফিরে আসেন এবং ঝাপিয়ে পড়েন স্বাধীনতা আন্দোলনে। সেই সাথে শেষ হয় তার ব্যারিস্টারি পড়ার সকল আয়োজন।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ রের্সকোর্স ময়দানে যার যা কিছু আছে তা নিয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়—এই আহ্বানে মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে নওগাঁর সর্বস্তরের লোকজন মুক্তিযোদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে এবং বাংলাদেশকে পাকিস্তানি হায়েনাদের হাত থেকে রক্ষা করে। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে আব্দুল জলিল নওগাঁ থেকে যাওয়ার সময় ৭৪ জন ছেলে ও তার দলবল নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যান এবং বালুরঘাটে আত্রাই নদীর পূর্বতীরে শ্মশানকালী মন্দিরের পার্শ্বে একটি গৃহে অবস্থান গ্রহণ করেন। সেখান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ভর্তি ও বাঙ্গালীপুর, মধুপুর, কামারপাড়া, প্যারিলাসহ ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় বেশ কয়েকটি ট্রেনিং ক্যাম্প পরিচালনা করেন।   ঐসব ক্যাম্প থেকে উচ্চতম প্রশিক্ষণের জন্য শিলিগুড়ির পানিঘাটায় পাঠিয়ে দেওয়ার বিশাল দায়িত্ব গ্রহণ করেন আব্দুল জলিল।

নওগাঁ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও পাবনার অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিলের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ সব ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশের অভ্যন্তরে জীবনবাজি রেখে দেশ মাতৃকার ডাকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

জলিলের দুই মেয়ে এবং দুই ছেলে। প্রথম মেয়ে ডা. শারমীন জলিল জেসি এবং দ্বিতীয় মেয়ে ডা. মৌমিতা জলিল জুলি উভয়ের স্বামীই পেশায় চিকিৎসক। তার দুই ছেলের প্রথম জন নিজামউদ্দিন জলিল জন ও লেভেলে পরীক্ষা দিয়েছে। দ্বিতীয় ছেলে জুমায়েত জলিল জুম্মা স্কুলে পড়ছে।

আব্দুল জলিলে মৃত্যুতে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ, বাংলাদেশ নারী মুক্তি আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৩
এসকে/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।