ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

পোড়া বস্তিতে দু’শতাধিক পরিবারের ঘুমহীন রাত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০১৩
পোড়া বস্তিতে দু’শতাধিক পরিবারের ঘুমহীন রাত

কল্যাণপুর পোড়া বস্তি: ‘মা, মাগো, মশার কামড়ে ঘুমাতে পারছি না। বাতাস আসছে, ঠাণ্ডা লাগছে।

দরজা দিয়ে দাও। ’ ‘মা রে, আল্লাহ আল্লাহ কর’।

এমনিভাবে পোড়া বস্তিতে শুক্রবার গভীর রাতে বেশ কিছু শিশু ও তাদের মায়ের মধ্যে এমন করুন কথোপকথন শোনা যায়।

২৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার রাজধানীর কল্যাণপুর নতুন বাজার পোড়া বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭ ও ১ নম্বর বস্তিতে চার শতাধিক ঘর পুড়ে যায়। এতে গৃহহারা হয় প্রায় দু’শতাধিক পরিবার।

শুক্রবার গভীর রাতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে বস্তা, অব্যবহৃত কাপড়, প্লাস্টিক, পুড়ে যাওয়া টিন দিয়ে কোন মতে ঘরের মতো করে পরিবারের সদস্যরা জড়ো হয়ে শুয়ে আছেন।

একদিকে মশার যন্ত্রণা ও বাতাসের মধ্যে মাটিতে কাগজ বিছিয়ে শুয়ে আছে সারিসারি নারী-পুরুষ ও শিশু। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ক্ষুধা।

শিশুরা খাবারের জন্য গভীর রাতেও অঝোরে কাঁদছে। শিশুদের মিথ্যা সান্ত্বনা দিয়ে বলছে, ‘এইতো সকাল হয়ে গেছে। ’

দোকান থেকে খাবার কিনে দেবো বলে মিথ্যে সান্ত্বনা দিচ্ছে বারবার।
শিশুদের পাশাপাশি বয়স্করাও ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।

কা-পয়সা, জামা-কাপড় থেকে শুরু করে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সম্বলহীন এসব মানুষের চোখে মুখে বেদনার ছাপ।

আগুনে পুড়ে যাওয়ার তিনদিন তিন রাত পার হলেও সাহায্য জোটেনি তাদের কপালে। যেটুকু জুটেছে তা অপ্রতুল্য। পুড়ে যাওয়ার পর শোককে শক্তিতে রুপান্তর করে অনেকে আবার বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন।

কথা হয় বস্তিতে সর্বস্ব হারানো বিনিদ্র রাত কাটানো চানাচুর বিক্রেতা ইয়াসিন মিয়া, রিকশাচালক গিয়াস উদ্দিন, হোটেল কর্মচারী ফয়েজ, গার্মেন্টস কর্মী মর্জিনাসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে।

তারা বাংলানিউজকে জানান, ভাত নেই, কাপড় নেই, কিছুই নেই। দিনের বেলা কোন মতে চলতে পারলেও রাতের বেলা ছেলেমেয়ে নিয়ে তিন রাত তিনদিন খোলা আকাশের নিচে। কেউ খবর নিতে আসে না।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মর্জিনা বাংলানিউজকে বলেন, ভাইরে, আল্লাহ আমার সব নিয়া গেছে। আল্লাহ শুধু গরীবদের চোখে দেখে, ধনীদের দেখে না। কিচ্ছু নাই রে, কিচ্ছু নাই। কি খামু, পোলাপাইনরে কি খাওয়ামু তা ভেবে অস্থির। কেউ যদি আমাগোরে ঘর উঠাবার সাহায্য করতো তাহলে খুবই উপকার হতো।

বস্তির সবচেয়ে বয়স্ক সত্তোর্ধ হালিমা খাতুন বাংলানিউজকে জানান, মরার আগে আল্লাহ একি দেহাল। আজ তিনদিন তিন রাত এক কাপড়ে। ঘুম তো দূরের কথা, দুই বেলা পর্যন্ত উপোস রয়েছি। সরকার যেন আমাগরে একটা ঘর করে দেয়। ’

বস্তি পুনর্বাসন ঐক্য পরিষদ চেয়ারম্যান ইসকান্দার আলী মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, “আগুনে গোডাউন, দোকানসহ প্রায় তিন শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে। এতে প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ”

তিনি বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পুড়ে যাওয়ার তিনদিন পর আজ (শুক্রবার) বিকেলে প্রত্যেক পরিবারকে তিন হাজার টাকা ও বিশ কেজি চাউল দেওয়া হয়। ঢাকা-১৪ এর সংসদ সদস্য আসলামুল হক উপস্থিত থেকে ত্রাণ বিতরণ করেন। কিন্তু এ টাকা দিয়ে তো ঘর হয় না।

তিনি জানান, কল্যাণপুর এলাকায় নয়টি বস্তি আছে। ৭ নম্বর পোড়া বস্তি সবচেয়ে বড়। এত মানুষ গৃহহীন, অভুক্ত ও বিনিদ্র রাত কাটালেও সমাজের কোন বিত্তবান এগিয়ে আসেনি। বস্তির নারী পুরুষ ও শিশুরা না খেয়ে রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৩
আরইউ/সম্পাদনা: জনি সাহা, নিউজরুম এডিটর/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।