ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে শুরু হচ্ছে আলেমদের সংঘবদ্ধ আন্দোলন

আদিত্য আরাফাত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৩
জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে শুরু হচ্ছে আলেমদের সংঘবদ্ধ আন্দোলন

ঢাকা: ‘ওলামা-মাশায়েখ জনতা, গড়ে তোলো একতা’ স্লোগানে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে অহিংস আন্দোলনে মাঠে নামছেন দেশের আলেম সমাজ।

একাত্তরে গণহত্যাকারী, মানবতাবিরোধী এবং যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে দেশব্যাপী সক্রিয় হচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের আলেমরা।

আলেমরা দেশের সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরবেন, ‘‘একাত্তর সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত জামায়াত-শিবির ধর্মীয় লেবাসে শান্তির ধর্ম ইসলামকে কুলষিত করেছে। ধর্মের নামে তারা গণহত্যা ও ধর্ষণের বৈধতা দিয়েছে। ’’

আলেমরা আরও বলছেন, ‘‘ঢালাওভাবে মানুষকে নাস্তিক, মুরতাদ বলা ইসলাম অনুমোদন করে না। অথচ জামায়াত-শিবির গোষ্ঠী ভিন্নমতের হলেই তাদের নাস্তিক ও মুরতাদ বলছে। যেমন শাহবাগে যারা আন্দোলন করছেন এবং যারা ব্লগ লেখেন তাদের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবির তৃণমূল পর্যায়ে প্রচারণা চালাচ্ছে, তারা নাস্তিক। ’’
এভাবে কাউকে নাস্তিক বলা ইসলামের দৃষ্টিতেই পাপ বলেও মনে করেন আলেমরা।  

মসজিদে মসজিদেও এসব বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আলেমরা।

জামায়াতের মুখোশ উন্মোচন করতে এসব বক্তব্য ও দাবি নিয়ে বেশ সংঘবদ্ধভাবেই রাজপথে নেমেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, আধ্যাত্মিকতা, আউলিয়া একরাম, দরগা, মাজার ও খানকা, সুফিবাদী তরিকতপন্থীসহ বিভিন্ন ইসলামী দল।

গত শনিবার চট্টগ্রামে সুন্নি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জামায়াতের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ। চলতি ও আগামী মাসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে আরও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা সম্মিলিতভাবে মিছিল-সমাবেশ এবং বিভিন্ন কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন।    

এসব ইসলামী দলগুলো শুধু জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতেই নয়, সংখ্যালঘুদের জানমাল রক্ষা এবং অধিকারের জন্যও সোচ্চার থাকবে। দেশে সকল নাগরিক যেনো সমান সুবিধা পান সে দাবি এবং এ বিষয়ে ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরবে দলগুলো। পাশাপাশি তারা প্রচার চালাবে- জামায়াত কোনো ইসলামী দল নয়, ইসলামের আসল শত্রু, এজিদের উত্তরসূরী।

সর্বজন শ্রদ্ধেয় ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম ও খতিব  আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের নেতৃত্বে আগামী ২৩ মার্চ রাজধানীতে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ ওলামা-মাশায়েখ তৌহিদী জনতা সংহতি পরিষদ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দেশবরেণ্য এ ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের নেতৃত্বে সমাবেশে অনেকেরই জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে সংহতি জানানোর কথা রয়েছে।

জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা ও যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে ওই দিন বেলা ১১টায় রাজধানীর শাপলা চত্বরে এ মহাসমাবেশ শুরু হবে।

বাংলাদেশ ওলামা-মাশায়েখ তৌহিদী জনতা সংহতি পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ঐতিকহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম ও খতিব আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ ওলামা-মাশায়েখ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে একাত্তরের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে মহাসমাবেশে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘‘জামায়াত শুধু যুদ্ধাপরাধীই নয়, এরা ইসলামেরও শত্রু। চলুন, সবাই মিলে আবারও গর্জে উঠি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই, এবার তাদের রক্ষা নাই। ইসলামের দৃষ্টিতে যুদ্ধাপরাধ জঘণ্যতম মানবতাবিরোধী অপরাধ। রাষ্ট্রের কর্তব্য হলো, এদের বিচার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা। আমরা ধর্মদ্রোহী ও রাষ্ট্রদ্রোহীদের মুখোশ উন্মোচনে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছি। ’’

৬ এপ্রিল মহাসমাবেশসহ মাসব্যাপী সিরিজ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে মহাজোটের শরিক বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটও।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী ২০ মার্চ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন, ২৫ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণে চারটি সমাবেশ এবং সবশেষে আগামী ৬ এপ্রিল ঢাকায় মহাসমাবেশ।

বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘জামায়াত-শিবির ধর্মের নাম ব্যবহার করে অনৈসলামিক কাজ করছে। দেশ এবং ইসলামের স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ’’

‘‘জামায়াত ডে- লেবার হিসেবে লোক ভাড়া করে সারাদেশে সংঘাত সৃষ্টি করছে’’ বলেও দাবি করেন তিনি।
চট্টগ্রামে বিশিষ্ট ১০ আলেম হত্যার পরিকল্পনাকারী, দলগতভাবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনে নামছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, সম্মিলিত ইসলামী জোটসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ইসলামী দলগুলোর ফ্রন্ট ‘প্রগতিশীল ইসলামী জোট’। দাবি বাস্তবায়নে দেশব্যাপী চলছে জোটের মতবিনিময় সভা। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রাজধানীতে মহাসমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার কথা জানিয়ে তরিকত ফেডারেশন।

ফেডারেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ, ১০ আলেমকে হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনে বিচারের দাবিতে আন্দোলন চলবেই। ’’

তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব লায়ন এম এ আউয়াল বাংলানিউজকে জানান, ‘‘রাজধানীতে মহাসমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ইসলামী দলগুলোর ফ্রন্ট ‘প্রগতিশীল ইসলামী জোট’। স্বাধীনতার সপক্ষের এ ইসলামী জোট জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবে। ’’
 
ইসলামী আরও অনেক সংগঠন এবং আলেমরাও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে একই দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন এবং হচ্ছেন।

এর আগে চট্টগ্রামের ১০ আলেম হত্যার পরিকল্পনাকারী জামায়াত-শিবিরের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে শনিবার চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে সুন্নি সম্মেলন। প্রগতিশীল ইসলামী জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের আয়োজনে এ সম্মেলনে যোগ দেয় তরিকত ফেডারেশন, সম্মিলিত ইসলামী জোটসহ বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠন। যোগ দেন হাজার হাজার সুন্নি, তরিকতপন্থী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনরত একটি ইসলামী দলের প্রধান বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য অহিংস আন্দোলন। শান্তিপূর্ণভাবে আমরা জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবি করে যাবো। কিন্তু এতে সরকারের টনক না পড়লে হরতালের মতো কঠোর কর্মসুচি দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। ’’

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৩
এডিএ/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর- [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।