ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

৪২ সেক্টরে পথ চিত্রাঙ্কনে স্বাধীনতা ও গণহত্যা

মেহেদী হাসান পিয়াস ও রহমত উল্যাহ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৩
৪২ সেক্টরে পথ চিত্রাঙ্কনে স্বাধীনতা ও গণহত্যা

ঢাকা: স্বাধীনতা ও গণহত্যা দিবসকে স্মরণ করে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনউয়ে ৪২টি সেক্টরে ভাগ হয়ে পথ চিত্রাঙ্কন করছে ইউনিভার্সিটি অব ডেভলপমেন্ট অলটারনেটিভের (ইউডা) চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা।

সোমবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া ইউডার আয়োজনে অংশ নিচ্ছে ইউডার প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীরা।



৫৬ হাজার বগমাইলকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল।

তরুণ প্রজন্ম সে মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। কিন্তু সেই ১১ সেক্টরের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামকে তুলে ধরেছেন ৪২ সেক্টরে ভাগ করা পথচিত্রে।

ইউডা চারুকলা অনুষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আহমেদ বিকাশ বাংলানিউজকে বলেন, “পথচিত্র সবসময়ই গণমানুষের একটি শিল্পকর্ম। এর সাথে সাধারণ মানুষের সংশ্লিষ্টতা থাকে। তাই গত ১০ বছর ধরে আমরা এই পথচিত্রের আয়োজন করে আসছি। ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসকে স্মরণ করে আমরা এই আয়োজন করি। এর মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞকে তুলে ধরার চেষ্টা করি। ”

তিনি আরও বলেন, “বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চারুকলার প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষার্থী ছাড়াও আয়োজনে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে এ চিত্রকর্ম আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর শহীদের উৎসর্গ করি। ”
 
গোটা চিত্রকর্টিকে কেন ৪২টি সেক্টরে ভাগ করা হলো জানতে চাইলে ইউডা চারুকলার ফাইন আর্স অনুষদের সাবেক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, “আমরা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪২ বছর পার করছি। এই ৪২ বছরকে ধরেই ৪২টি সেক্টরে ভাগ করে এ পথচিত্র আঁকা হয়েছে। এখানে চারুকলার শিক্ষার্থী ছাড়াও অংশ নিয়েছে সাধারণ মানুষ। ”

“২৬ মার্চ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এ আয়োজনের সমাপ্তি ঘটবে। এরপর এর ওপর দিয়ে হেঁটে যাবে হাজারো মানুষ। চলাচল করবে অসংখ্য যানবাহন। প্রতিদিন হাজারো মানুষের চলাচলের সময় তারা চিত্রকর্মগুলো দেখবে। ” এমনটাই বলছিলেন ১৮ নম্বর সেক্টরে পথচিত্র অঙ্কনরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের সাবেক শিক্ষার্থী দীপ্তি দত্ত।

তিনি বলেন, “ক্যানভাসের আঁকা ছবিগুলো বিভিন্ন গ্যালারিতে তুলে নেওয়ার সুযোগ থাকলেও পথচিত্রটির বেলায় সে সুযোগ নেই। এর ওপর দিয়ে হাজারো মানুষ হেঁটে গেলেও তাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোনো অবমাননা হবে না। কারণ, ২৫ মার্চের গণহত্যার পর অসংখ্য লাশ মাড়িয়ে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা কাঙ্ক্ষিত বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন। তাই এই চিত্রকর্মের ওপর দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ হেঁটে গেলেও এর কোনো অবমাননা হবে না বলে আমি মনে করি। ”  

ব্যতিক্রমী এ পথ চিত্রাঙ্কন করা হয়েছে সংসদ ভবনের সামনের গোটা রাস্তা জুড়েই। ৪২টি সেক্টরের খণ্ড খণ্ড এসব চিত্রকর্মে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট। সেখানে ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যার বীভৎসতা তুলে ধরার পাশাপাশি সম্ভ্রম হারানো নারী মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকার চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে স্বাধীনতাবিরোধীদের ভূমিকাও।
 
১ নম্বর সেক্টর থেকে মুক্তিযুদ্ধের শুরু এবং ৪২ নম্বর সেক্টরে বিজয়ের চিত্রও আঁকা হয়েছে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায়।

ইউডা, সোডা ও কোডা’র আয়োজনে সোমবার সূর্যাস্ত থেকে পথচিত্র আঁকা শুরু হয়। মঙ্গলবার সূর্যোদয় পর্যন্ত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে। রাতভর এ অনুষ্ঠানে শুরু থেকেই অংশ নিয়েছে হাজার হাজার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। আয়োজক প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের প্রায় সবার পরনেই ছিল সাদা কালো পোশাক। ছেলেরা কালো পাঞ্জাবি এবং মেয়েরা কালো পাড়ে সাদা শাড়ি।
 
রাতভর অনুষ্ঠান চলার পর মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে কালো পতাকাগুলো নামিয়ে উত্তোলন করা হবে জাতীয় পতাকা। আর এর মধ্য দিয়েই সমাপ্তি ঘটবে এ অনুষ্ঠানের। কিন্তু যে চেতনায় শাণিত হয়ে এই তরুণেরা ফুটিয়ে তুলেছেন আমাদের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামকে, অনুষ্ঠান শেষ হলেও সে চেতনা বয়ে চলবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।

বাঙালির শাণিত চেতনায় গড়ে উঠবে শোষণ-বঞ্চনাহীন স্বপ্নের বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৩
এমএইচপি/আরইউ/সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।