ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

হরতাল: মঙ্গলবার ১১৯৩ তম!

সালাম ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১০
হরতাল: মঙ্গলবার ১১৯৩ তম!

ঢাকা: দেশের ব্যবসায়ী মহল থেকে ‘আইন করে হরতাল নিষিদ্ধ করা’র দাবি উঠলেও তা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সরকারি দলও মনে করছে একসময় তাদেরও হরতালের মতো কর্মসূচি দেওয়া লাগতে পারে।

তাই নিজেদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই তারা হরতাল বন্ধ করার কোনও আইন প্রণয়ন করবে না।

বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) আয়োজিত বাটেক্সপো’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমন ইঙ্গিত দিলেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।

তিনি বলেন, ‘আইন করে হরতাল বন্ধ করলে জনগণের অধিকার খর্ব করা হবে। ’

মন্ত্রীর এমন কথায় ব্যবসায়ী মহলের মনঃপুত না হলেও খুশি হয়েছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে ডাকা হয়েছে দেশের এক হাজার  এক শ’ ৯৩তম হরতাল। ৩০ নভেম্বর দেশব্যাপী এ হরতাল পালন করবে বিরোধীদল।

দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়াকে কেন্দ্র করে বিএনপির এ হরতাল। এর আগে গত ১৪ নভেম্বর একই কারণে হরতাল পালন করে দলটি।

৩০ নভেম্বরের হরতালটি হবে এ সরকারের আমলে সপ্তম হরতাল।

২০০৯ সালের ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের পর এটি হবে বিএনপির তৃতীয় দফা দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি।

এ বছরেরই ২৭ জুন প্রথম সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছিলেন বিরোধীদল নেত্রী খালেদা জিয়া। ১৯ মে পল্টন ময়দানে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশ থেকে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংকট; দখল, টেন্ডারবাজি, ছাত্রী লাঞ্ছনা, চাকরিচ্যুতি বন্ধ; ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তি বাতিল, নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, বিচার বিভাগকে দলীয়করণ এবং গণমাধ্যমের ওপর হস্তপে বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে ওই হরতাল ডাকা হয়।

এছাড়া বর্তমান সরকারের আমলে দেশব্যাপী ও জেলাভিত্তিক বিচ্ছিন্ন কিছু হরতাল হয়। নাটোরে উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সানাউল্লাহ নূর বাবুকে হত্যার প্রতিবাদে গত ১০ অক্টোবর দিনব্যাপী হরতাল পালন করে স্থানীয় বিএনপি। নেতা হত্যা ও কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে ৯ মে বিএনপি বগুড়ায় অর্ধদিবস হরতাল পালন করে। ছাত্রদল নেতা হত্যার প্রতিবাদে লালমনিরহাটে ১৩ নভেম্বর অর্ধদিবস হরতাল পালন করে বিএনপি।

তেল-গ্যাস, বিদ্যুৎ-খনিজসম্পদ ও বন্দর রা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে ঢাকা মহানগরীতে অর্ধদিবস হরতাল হয় ২০০৯-এর ১৪ সেপ্টেম্বর। এটি ছিল বিরোধীদলের বাইরে ডাকা একমাত্র হরতাল কর্মসূচি।

এর আগে ২০০৬ সালের ২১ ডিসেম্বর বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান না করতে আওয়ামী লীগ সর্বশেষ হরতাল পালন করেছিল। ১৮ ডিসেম্বর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এটি ছিল কোনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ডাকা একমাত্র হরতাল কর্মসূচি।

এরপর ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছিল।

ইতিহাস ঘেটে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে গত ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে পূর্ণদিবস ও অর্ধদিবস মিলিয়ে মোট হরতাল হয়েছে এক হাজার ১৯২টি। এর মধ্যে অর্ধদিবস হরতালের সংখ্যাই বেশি।

‘সংবাদপত্রে হরতালচিত্র ১৯৪৭-২০০০’ শীর্ষক গবেষণাগ্রন্থে সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত উল্লেখ করেছেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত (শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার) পাঁচ দিন পূর্ণদিবস আর ১২ দিন অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৮২ সালের ২৩ মার্চ পর্যন্ত (খন্দকার মুশতাক, আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, জিয়াউর রহমান ও বিচারপতি আবদুস সাত্তারের আমল) ১০ দিন পূর্ণদিবস ও ৪৩ দিন অর্ধদিবস হরতাল ছিল। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত (হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আমল) ১০৪ দিন পূর্ণদিবস আর ১৯৪ দিন ছিল অর্ধদিবস। ১৯৯০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত (বিএনপি’র আমল) পূর্ণদিবস ১৫৫ দিন, অর্ধদিবস ২২৩ দিন, ১৯৯৬ সালের ৩১ মার্চ থেকে ২০০০ সালের ১২ জুন পর্যন্ত (আওয়ামী লীগের আমল) পূর্ণদিবস ১৫৯ দিন, অর্ধদিবস হরতাল ছিল ১০৭ দিন এবং ২০০১-এর ১০ অক্টোবর থেকে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত (বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট আমল) মোট ১৭৩ দিন হরতাল পালিত হয়েছিল।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, ২৯ নভেম্বর, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।