ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

মুক্তিযোদ্ধা শনাক্তের মানদণ্ড সংশোধনে দৌড়ঝাঁপ!

উবায়দুল্লাহ বাদল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১০
মুক্তিযোদ্ধা শনাক্তের মানদণ্ড সংশোধনে দৌড়ঝাঁপ!

ঢাকা: নতুন সনদ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সনদ অক্ষুণ্ণ রাখতে সরকারের শীর্ষ মহলে তদবির শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত ৭ নভেম্বর জারি করা জরুরি চিঠির আদেশ সংশোধনে উঠেপড়ে লেগেছেন তারা।

প্রভাবশালী এসব কর্মকর্তা যে কোনো  মূল্যে নিজেদের সনদ সঠিক প্রমাণ করতে রীতিমতো দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সরকারের ওই উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তদবিরের সত্যতা নিশ্চিত করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘একটি মহল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিপত্র সংশোধন করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। ’

তিনি বলেন, ‘তবে এ মুহূর্তে যাদের গেজেট হচ্ছে তারা বয়স বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন না। সরকারের বেঁধে দেওয়া চার মানদণ্ড অনুযায়ীই গেজেট হবে। ’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকার মনে করলে যাদের গেজেট জারি হয়েছে তারা চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ পেতেই পারেন। সেটা সরকারের বিবেচনার বিষয়। তবে পরিপত্র সংশোধন প্রধানমন্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি দেশে ফিরলে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। ’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের আমলে সনদ নেওয়া এসব মুক্তিযোদ্ধা চাকরির ক্ষেত্রে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তারা যে কোনো মূল্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিপত্র সংশোধন করতে চান।

গত ৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামান সাক্ষরিত এক জরুরি চিঠি জারির পর থেকেই নতুন সনদ পাওয়া কর্মকর্তারা এ তৎপরতা শুরু করেন। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা চার ধরনের মানদণ্ডের বিপরীতে সরকারের প্রভাবশালী মহলে নানা ধরনের যুক্তি উপস্থাপনের চেষ্টা করছেন তারা।

প্রধানমন্ত্রীর সচিব সাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিতে প্রবেশের সময় বা আবেদন করার সময় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করেননি বা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষরযুক্ত সার্টিফিকেট নেননি বা মুক্তিবার্তায়/গেজেটে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি-তবে বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন বা সার্টিফিকেট নিয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে ৫৭ বছরের চাকরিকাল পরবর্তী অতিরিক্ত দুই বছর বর্ধিত চাকরিকাল প্রযোজ্য হবে না।

সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের আমলে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বর্তমানে একজন ওএসডি সচিব, মৎস্য ও পশুসম্পদ সচিব, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, আনসার ও ভিডিপি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অনেকেই বর্তমান সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন। তারা এরই মধ্যে নিজেদের অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটির তারিখ পরিবর্তন করেছেন।

তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিপত্র জারি হওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন তারা।

এছাড়াও চাকরির মেয়াদ দু’বছর বাড়ানোর পর এ পর্যন্ত শতাধিক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা প্রত্যয়নপত্র নিতে সক্ষম হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্রে জানা গেছে। এদের মধ্যে প্রকৌশলী, সাব-রেজিস্ট্রার, বন বিভাগের কর্মকর্তাসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা রয়েছেন। কোনো কোনো কর্মকর্তার আবেদন মন্ত্রণালয় একবার নাকচ করে দেওয়ার পরও আবারো দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মকর্তার প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার বিষয়ে সরকারের একাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রীসহ সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে প্রধানমন্ত্রী সাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধা সনদ জমা দিলেও তা ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে।

সূত্র জানায়, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে প্রধানমন্ত্রী সরল বিশ্বাসে মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে বেশকিছু মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র সাক্ষর করে দিয়েছিলেন। যেখানে মুক্তিযোদ্ধার নাম ও ঠিকানা ছিল না। পরবর্তী সময়ে এসব সনদপত্র মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করার ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি এরকম কয়েকটি সনদপত্র মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হাতেও পৌঁছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা,  ডিসেম্বর ২, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।