ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

ইউএসএ টুডের সম্পাদকীয়

মার্কিন ক্রেতাদের আচরণ মূর্খের মতো

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৬ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৩
মার্কিন ক্রেতাদের আচরণ মূর্খের মতো

ঢাকা: রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় বাংলাদেশের পোশাকশিল্প নিয়ে বিশ্বজুড়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিশ্বের প্রভাবশালী সব দৈনিকে প্রতিদিনই লেখালেখি প্রকাশিত হচ্ছে।

এরই ধারাবাহিকতায় পোশাকশিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে করুণ মানবিক বিপর্যয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক ইউএসএ টুডে শুক্রবার সম্পাদকীয় লিখেছে। এতে দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তে মার্কিন কোম্পানিগুলোর ব্যাপক সমালোচনা করা হয়েছে। বাংলানিউজের পাঠকের জন্য তা তুলে দেওয়া হলো।

তিন সপ্তাহ আগে রানা প্লাজার পোশাক কারখানায় ১১২৭ জনের নিহত হওয়ার ঘটনায় আমেরিকানরা ক্ষুব্ধ হওয়া শুরু করেছে, আর এটা বিশ্বায়নের স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকেই দেখা গেছে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। এই দেশে রয়েছে চরম দারিদ্র্য, ধনী দেশগুলোর জন্য পোশাক তৈরির কারাখানাগুলোয় কম বেতন এবং কাজের বিপজ্জনক পরিবেশ। গত নভেম্বরেই ১১২ জন শ্রমিক আগুনে নিহত হয়। সপ্তাহ খানেক আগে আরেকটি আগুনে ১২ জন মারা যায়।

এভাবে চলতে থাকার কোনো যুক্তি নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলোয় ছিল কম-বেতনের শ্রমিক ও পশ্চিমাদের তুলনায় বাজে মানের কর্মপরিবেশ। আজ তারা অর্থনৈতিক সাফল্যের গল্প।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি রাতারাতি ঠিক হয়ে যাবে তা বলা ঠিক হবে না। তবে সঠিক অবস্থার অধীনে এসব ক্রমেই পরিবর্তিত হবে--স্থিতিশীল সরকার, অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা এবং বিদেশি কোম্পানিগুলোর অব্যাহত বিনিয়োগেই এটা সম্ভব হবে।

এই কারণে বিষয়টির ওপর আমাদের হাত দিতে হলো। পশ্চিমা পোশাক ক্রেতাদের বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জীবনমান উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে অন্য যেসব দেশে যাচ্ছে, সেসব স্থানে নিশ্চিতভাবেই আইনকানুন মেনে চলা হয় না। এর আগেও তারা সস্তা শ্রমের খোঁজে এমন কাজ করেছে। সাধারণের চাপে তারা এখন সেটা করতে পারে।

কোম্পানিগুলোর জন্য উত্তম জবাব হচ্ছে বাংলাদেশে থেকে যাওয়া এবং কাজের পরিবেশ উন্নত করা। দেশটির তৈরি পোশাক খাত থেকে আয় হয় মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ, সুতরাং পশ্চিমা ক্রেতাদের এতে ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। অথবা তারা চাইলে এটাকে ব্যবহার করতে পারে।

এ পর্যন্ত অনেকেই আচরণ দেখিয়েছেন এমনভাবে যে, তারা যাদের চেনেন না, তাদের আঘাত করতে পারেন না। তারা এমন সব কোম্পানির সঙ্গে যুক্তি করেছে যারা তথ্য দেয় না। তাদের পোশাক কোথায় ও কোন পরিবেশে তৈরি হচ্ছে সেসব কিছুই জানায় না। অবশ্য রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে তাদের লেবেল বের করার আগ পর্যন্ত কিছুই জানা যায়নি। এখন অবশ্য কোন কোন পশ্চিমা কোম্পানি পোশাক সেখানে তৈরি হতো তা জানা গেছে।

অবশ্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে চলতি সপ্তাহে। কয়েকটি তৈরি পোশাকের খুচরা বিক্রেতা জানিয়েছে, তারা একটি চুক্তি করতে যাচ্ছে যাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কারখানায় স্বতন্ত্র পরিদর্শন, কর্মপরিবেশের ওপর উন্মুক্ত প্রতিবেদন এবং কারখানার প্রয়োজনীয় উন্নতি করতে অর্থ দেবে। এদের মধ্যে এইচঅ্যান্ডএম রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে যাদের ব্যবসা দ্রুত বাড়ছে। এছাড়া ক্যালভিন ক্লেইন ও টমি হিলফিগার রয়েছে, এরা ট্র্যাজেডির আগেই চুক্তি সই করেছে।

এই চুক্তিটি আগের যে কোনোটির চেয়ে বিস্তৃত ও পুঙ্খানুপুঙ্খ। এতে পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর পক্ষে তাদের দায়দায়িত্বের সরাসরি রাস্তা তৈরি হবে। তাদের ঠিকাদারদের কাছ আরো জবাবদিহিতা চাওয়ার প্রয়োজনীয় তৈরি হবে।

তবে মার্কিন খুচরা বিক্রেতারা হাস্যকরভাবে এ চুক্তিতে নিজেদের জড়াচ্ছে না। এদের মধ্যে আছে জেসি পেনি, ওয়াল-মার্ট। তাদের আচরণে ব্র্যান্ড মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। তাদের পণ্য সতর্কর্কীকরণ  বার্তা লিখে রাখা উচিৎ এভাবে: এই পোশাকটি তৈরিতে মৃত্যু হতে পারে।

তাদের আচরণ মূর্খের মতো, দুঃখজনক। কেন তারা আরেকটি লেবেলে এটা লেখার অধিকার পাবে না: আমরা বাংলাদেশে নিরাপদ পরিবেশ সমর্থন করি। জীবন রক্ষায় কিছু করপোরেট মূল্যবোধ থাকা উচিৎ, নেওয়ার জন্য নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৩
আরআর/জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।