ঢাকা: ঝুঁকি বাড়ছে শিশুখাদ্যে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অনুমোদনহীন শিশুখাদ্যে সয়লাব হয়ে আছে বাজার।
বাংলাদেশ স্ট্যার্ন্ডাড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) দাবি, লাগেজপার্টি ও বিমানবালাদের মাধ্যমে বিদেশ থেকে অবৈধভাবে এসব শিশু খাদ্য বাংলাদেশের বাজারে ক্রমেই বাড়ছে।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (সার্টিফিকেশন অ্যান্ড মার্কস) লুৎফর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘দেশের বাজারে যে কোনো পণ্য বাজারজাত করতে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন প্রয়োজন। ’
তিনি বলেন, ‘শিশুখাদ্যের ব্যাপারেও আমাদের নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি মেনে চলতে হয়। যেমন- শূন্য থেকে ছয় মাস পর্যন্ত একটি ধাপ। আবার ছয় মাস থেকে বেশি বয়সের জন্য আর একটি ধাপ রয়েছে। ’
লুৎফর রহমান বলেন, ‘যেহেতু শিশুখাদ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ পণ্য তাই এর পরীক্ষা-নিরীক্ষাও একটু জটিল। আমদানি করা পণ্য বন্দরে আসার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টম ও আমদানিকারকের সামনে নমুনা গ্রহণ করে বাকি পণ্য সিলগালা করে রাখা হয়। ’
সংগৃহীত নমুনা আণবিক পরীক্ষা ও বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় নিরাপদ প্রমাণিত হলে বন্দর থেকে ছাড় দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।
লুৎফর রহমান বলেন, ‘এর বাইরে যে সকল শিশুখাদ্য বাজারে আছে তা সাধারণত অবৈধভাবে আসে। ’
বিএসটিআইয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘ইনফ্যান্ট ফর্মুলা বা শূন্য থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুখাদ্যের ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ’
সে হিসেবে ভিটালাক ডেইরির বায়ো মিল্ক ১ ও ২, গ্যাস্ট্রো ফাইভ, প্রি বায়ো মিল্ক, বেবি ন্যাচারাল, জেস ফুড ইন্টারন্যাশনালের বেবি কেয়ার-১, বেবি কেয়ার এমএফ, নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেডের ল্যাকটোজেন ১ ও নান ১, আবুল খায়ের গ্রুপের এলডো বেবি ওয়ান ও মাদার্স স্মাইল, আজমেরী ইন্টারন্যাশনালের মাম্মী টেক ১ বিএসটিআই অনুমোদিত বলে জানান তিনি।
এর বাইরে বাজারে যে পরিমাণ ইনফ্যান্ট ফর্মুলা রয়েছে তা পরীক্ষিত নয় উল্লেখ করে রিয়াজুল হক বলেন, ‘সেগুলো নিন্মমানের, শিশুস্বাস্থ্যের জন্য ঝুকিঁপূর্ণ। ’
এছাড়া ছয় মাসের বেশি বয়সের জন্য যে শিশুখাদ্য বাজারে আছে তাকে সিরিয়াল ফুড উল্লেখ করে বিএসটিআইয়ের পরিচালক (সার্টিফিকেশন অ্যান্ড মার্কস) লুৎফর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের শিশুখাদ্য বিএসটিআইয়ের পরীক্ষা করার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও বাজারজাতের ক্ষেত্রে অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু অনেক অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে নিম্নমানের শিশুখাদ্য আমদানির মাধ্যমে বাজারকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ’
সহকারী পরিচালক রিয়াজুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিএসটিআই অনুমোদিত সিরিয়াল ফুডগুলো হলো-নেসলে বাংলাদেশের সেরিলাক ও লেকটোজেন ২, ভিটালাক ডেইরির বায়োমিল্ক রাইস, বায়োমিল্ক হুইট, বায়োমিল্ক থ্রি ফ্রুটস ও রেনুভা হেলথ কেয়ারের রেনুভা সেরি মিল্ক। ’
বিএসটিআইয়ের মাঠ কর্মকর্তা আবু সাইদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাজধানীর অভিজাত এলাকাসহ সারা দেশের বাজারগুলোতে প্রায় অর্ধশতাধিক অননুমোদিত ও নিন্মমানের শিশু খাদ্য পাওয়া যায়। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে অবৈধ পথে এসব দেশে আনে। বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের বিমান বালারাও উল্লেখযোগ্য হারে এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। ’
এছাড়া লাগেজ পার্টিও শিশুখাদ্য পাচারে ভূমিকা রাখছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহযোগী অধ্যাপক ড. সালাউদ্দিন কাউসার বিপ্লব বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাজারে থাকা শিশুখাদ্যের নাজুক অবস্থা এক কথায় প্রকাশ করা যায় না। ’
তিনি বলেন, ‘শিশুখাদ্য পরীক্ষাগারে পরীক্ষা না করে বাজারে উন্মুক্ত করা যায় না। পরীক্ষাহীন এসব পণ্যে ফ্যাট, টিস্যু, চিনি, প্রোটিন প্রয়োজনের তুলনায় কম বা বেশি থাকলে তা শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে- যার ফলাফল ভয়াবহ। ’
স্থানীয় সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১১