ঢাকা: ‘যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে নিজের সম্পর্ককে ব্যক্তিগত স্বার্থে ‘ব্যবহার’ করছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে চাচ্ছেন তিনি।
সরকারের উচ্চ পর্যায় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমন ধারণাই পোষণ করে।
শুধু তা-ই নয়, ‘গ্রামীণব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ের খুঁটিনাটি বৃহস্পতিবার বিকেলে স্টেট ডিপার্টমেন্টকে জানানো হয়েছে। ’
সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
ড. ইঊনূসকে গ্রামীণব্যাংক থেকে অপসারণ প্রক্রিয়ার কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে টানাপোড়েনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন শেখ হাসিনা সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক নীতি নির্ধারকরা।
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক ও ড. ইঊনূস---এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সরকারের অবস্থান জানতে সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা বলেন, ‘হিলারি ক্লিনটন ওবামা প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তার ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া বা আশা থাকতেই পারে। কিন্তু এটা নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়ার অবকাশ নেই। ওবামা প্রশাসনকে এটা স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে। ’
সরকারের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারক ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একজন নেতা বলেন, ‘ড. ইঊনূস ও হিলারি ক্লিনটন সম্পর্ক এখানে (বাংলাদেশে) কিছুটা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়েই প্রচার করা হয়। ড. ইউনূস হয়তো এর সুবিধাও নিয়ে থাকেন। ’
ড. ইঊনূস হিলারির সঙ্গে সম্পর্ককে ‘ব্যবহার’ করছেন-- এমন বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্র স্টেট ডিপার্টমেন্টকে জানানো হয়েছে কী না সে সম্পর্কে সরাসরি কোনো জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, ‘কূটনীতিতে তো সব কথা সরাসরি বলা হয় না, বোঝানো হয়েছে। আশা করছি, তারা বুঝতে পারবেন। ’
‘ড. ইঊনূসের সঙ্গে হিলারি ক্লিনটনের সম্পর্ককে আমরা শ্রদ্ধা করি’, উল্লেখ করে সরকারের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে অন্যতম ভূমিকা রাখেন এমন একজন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে বিশেষ করে বর্তমান মহাজোট সরকার বা এর আগের অন্য দলের সরকারের আমলে ড. ইঊনূস কখনই কোনো ভূমিকা রাখেননি। ’
তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছরের মধ্যে বিগত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সরকার গ্রামীণব্যাংকে ড. ইঊনূসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকা নিয়ে প্রত্যক্ষ কোনো দ্বন্দ্বে যায়নি। তাকে তো সবাই সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু তিনি তা কাজে লাগাননি। ’
‘ড. ইঊনূস ও তার গ্রামীণব্যাংক নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলেই যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টকে সরকারের অবস্থান ও ব্যাংকিং বিধিমালা সম্পর্কে আবারও জানানো হয়েছে’, বলেও জানালেন সংশ্লিষ্ট ওই সূত্র।
তিনি বলেন, ‘দেশে-বিদেশে বিভিন্নভাবে শেখ হাসিনার প্রতিপক্ষ হিসেবে ড. ইঊনূসকে দাঁড় করানোর একটা চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিষয়টিকে রাজনৈতিক রঙ দেয়ার চেষ্টাও করা হচ্ছে। ড. ইঊনূস নিজের পদ ধরে রাখার জন্য এটা করার চেষ্টা করছেন বলেই আমাদের মনে হয়। ’
তিনি বলেন, ‘স্টেট ডিপার্টমেন্টকে জানানো হয়েছে, ড. ইঊনূস ব্যাংকিং বিধিমালা মেনে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ ছেড়ে তার প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটির পরামর্শদাতা হিসেবে থাকতে পারতেন। ’
‘ শুধু ড. ইউনূসের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কে অবনতি বা সম্পর্কে টানাপোড়েন কখনোই সৃষ্টি হতে পারে না; আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে এটা জানিয়েছি। কারণ আমাদের সম্পর্কের আরও অনেক বিষয় রয়েছে’, তিনি বলেন।
শেখ হাসিনার সঙ্গে গত ১০ জানুয়ারি হিলারি ক্লিনটনের ফোনালাপের পর বিভিন্ন মাধ্যমে দু’জনের ফোনালাপের বিবরণ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়ানো প্রসঙ্গে সরকারের দায়িত্বশীল ওই ব্যক্তি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ কল্পিত’।
কিন্তু এ ধরনের ফোনালাপের বিবরণ এদেশের পত্রিকাতে প্রকাশিত হলেও তার কোনো প্রতিবাদ কেন জানানো হয়নি, সে সম্পর্কেও মন্তব্য করতে চাননি সরকারের ওই নীতি নির্ধারক।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১১