ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

‘পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্য’

জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে না ৬২ লাখ দম্পতি

সাইদ আরমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১১
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে না ৬২ লাখ দম্পতি

ঢাকা: ১৮ বছর থেকে ৪৯ বছর বয়সী ২ কোটি ৫৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৭ দম্পতি সন্তান উৎপাদনে সক্ষম। এদের মধ্যে ১ কোটি ৯২ লাখ ৬৩ হাজার ২০২ দম্পতি জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেন।



অপর দিকে ৬২ লাখ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ দম্পতি এই পদ্ধতি গ্রহণ করেন না। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাসিক ব্যবস্থাপনা তথ্য পদ্ধতি রিপোর্টে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিপুল সংখ্যক দম্পতি জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার না করায় বাংলাদেশের জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। বাড়ছে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকিও।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৬২ লাখ সক্ষম দম্পতি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি (জন্ম নিয়ন্ত্রণ) গ্রহণ করছেন না। এর সঙ্গে, প্রতি মাসেই নতুন নতুন দম্পতি যোগ হচ্ছে। হিসাব অনুযায়ী কেবল ডিসেম্বর মাসেই (সর্বশেষ তথ্য মতে) সন্তান উৎপাদনে সক্ষম এমন দম্পতির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় চার লাখ।

তথ্য মতে, বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের আওতায় এসেছে ৭৫ দশমিক ৭ শতাংশ দম্পতি। অর্থাৎ প্রায় ২৫ শতাংশ সক্ষম দম্পতি এখনও পরিবার পরিকল্পনা সেবার বাইরে।

আবার পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত নভেম্বর মাস থেকে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণকারীর সংখ্যাও কমেছে। বিশেষ করে, প্রধান পদ্ধতিগুলোতে।

নভেম্বর মাসে কনডম ব্যবহারকারি দম্পতির সংখ্যা যেখানে ছিলো ৮০ হাজার ৬১৫। ডিসেম্বর মাসে এই সংখ্যা কমে দাড়িয়েছে ৫৮ হাজার ৮১তে। খাবার বড়ি (পিল) ব্যবহার করত ২ লাখ ৩০ হাজার ২৫ দম্পতি। ডিসেম্বরে নেমে এসেছে এক লাখ ৬৮ হাজার ৯৫১ এ। স্বল্প মেয়াদী জন্ম বিরতি পদ্ধতি এব লাখ ২৯ হাজার ৮৯২ থেকে নেমে এক লাখ ৫ হাজার ৫৩৮ দাঁড়িয়েছে।  

তবে বর্তমানে দেশের সবগুলো জেলাতে পরিবার পরিকল্পনা বিদ্যমান। এবং কার্যক্রম রয়েছে ৪৮৫টি উপজেলাতেও।

তথ্য মতে, বর্তমানে মোট ২৪ লাখ ২২ হাজার ৫৫২ দম্পতি স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। যার মধ্যে পুরুষ হচ্ছে মাত্র ৫ লাখ ৮৩ হাজার ৩৮৬। সে হিসেবে পুরুষরা নারীর চেয়ে জন্ম নিয়ন্ত্রণে বেশি অনাগ্রহী বলা যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনবল সমস্যা, প্রচার, নেতৃত্বে অদক্ষতা, মাঠ পর্যায়ে কর্মীদের অসন্তোষই মূলত এই অবস্থার জন্য দায়ী। যদিও সরকারের এক্ষেত্রে যথেষ্ট সদিচ্ছা রয়েছে। এমনকি জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য উপকরণেরও কোন ঘাটতি নেই। কিন্তু  কর্মীরা তাদের নির্ধারিত টার্গেট পূরণ করতে পারছেন না। জন্ম নিয়ন্ত্রণ উপকরণ বলা যায় পড়ে থাকছে।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ে তেমন কোন প্রচার কর্মসূচি নেই। শুধু পরিবার পরিকল্পনা কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে উপকরণ বিতরণ করেন। জেলা পর্যায়ে প্রচারের জন্য একটি কমিটি থাকলেও তারা মাঠে যাননা।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার একজন ইউনিয়ন পরিদর্শক বাংলানিউজকে টেলিফোনে জানান, মানুষকে সচেতন করতে বর্তমানে কোন কর্মসূচি দপ্তর নেই বললেই চলে। জেলা কমিটিগুলোও সক্রিয় নয়। তারা দীর্ঘ ছয় মাসে একদিনও তার ইউনিয়নে যাননি।

আর মাঠ পর্যায়ে কর্মী সমস্যা অনেক দিন থেকেই। আবার চাকরি নিয়ে তো অসন্তোষ রয়েছেই। জানা গেছে, আগামী শুক্রবার মাঠ কর্মীদের জাতীয় সম্মেলনে তারা তাদের সমস্যা তুলে ধরবে।
 
এদিকে ইউনিসেফ তাদের এক প্রতিবেদনে বলছে, সঠিক পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ না করায় তা জনসংখ্যার ওপর যেমন চাপ সৃষ্টি করছে। একই সঙ্গে তা মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সাইন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম নূর-উন-নবী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম স্থিমিত হয়ে পরেছে। শুধু হার বাড়াটা দেখে খুশী হওয়ার কিছু নেই। দেখতে হবে এখনও ১৫ শতাংশ মানুষ এই সেবা নিচ্ছেন না। আবার ব্যবহারের এক বছরের মধ্যে প্রায় ৫৬ শতাংশ ঝড়ে পরছে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এম এম নিয়াজউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কর্মীরা ঘরে ঘরে যাচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অনেকে গ্রহণ করতে চায়না। এজন্য আরো আন্তরিক ভাবে কাজ করতে হবে। প্রচার বাড়াতে হবে।

জেলার প্রচার কমিটিগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ আছে তারা ঠিক মতো কাজ করছে না। তবে আমি চিঠি লিখেছি, তাদের সক্রিয় করা হবে। কর্মীদেরকে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১১।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।