ঢাকা: অন্য আরো ৮ লাখ শিশুর মতো মুক্তার হোসেন রাজা। বাবার মার বিচ্ছেদর পর ময়মনসিংহ থেকে ট্রেনে ওঠে চলে আসে ঢাকায়।
তাই মাত্র আট বছর বয়সে সে পরিবার থেকে বেরিয়ে এসেছিলো।
‘আমি কখনো স্কুলে যাবার সুযোগ পাইনি। অন্যদের স্কুলে যেতে দেখে আমি দুঃখ পেতাম। ভাবতাম আমি কি স্কুলে যেতে পারব। এর বেশি কিছু নয়। ` বলছিলো রাজা।
কিন্তু রাজা এখন স্কুলে যায়। হ্যাঁ, রাজা এখন জাতিসংঘ শিশুতহবিলের আওতায় পরিচালিত সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের জন্য শিক্ষা প্রকল্পের অধীনে `অপরাজেয় বাংলা`র একটি আশ্রয়কেন্দ্রে। আজ তার ভালো লাগে। ঠিক মতো খেতে পায়, খেলতে পারে।
রাজার জীবন বদলে যায় যখন নুসরাত ম্যাডাম সদর ঘাটে একদিন কথা বলেন। তার মতে, প্রথমে রাজি হইনি। ম্যাডামকে ভালো লেগেছিলো বলেই এখানে এসেছি। তা না হলে আজও পথে পথে ঘুরে বেড়াতে হতো।
জাতিসংঘ শিশু-তহবিলের তথ্য মতে, রাজার মতো আরো এক লাখ ৬৬ হাজার শিশু সারাদেশে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে জীবনকে বদলে দিতে চাচ্ছে। তারাও স্বপ্ন দেখতে চায়। ভালো ভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন।
জাতিসংঘের তথ্য মতে, বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ। তবে কতজন শিশু এরকম শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় এসেছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকাসহ সারাদেশে কমবেশি প্রায় সাড়ে তিন লাখ লাখ পথশিশু এভাবে নিজেকে বদলে দিতে যুদ্ধ করছে। আর হতাশার কথা বাকিরা থেকে যাচ্ছে বাইরে।
ইউনিসেফ পরিচালিত ঢাকার স্কুলগুলো লালবাগ, সদরঘাট, মোহাম্মদপুর, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড, গুলশান, বাড্ডা, মিরপুর এবং কারওয়ান বাজার এলাকায় অবস্থিত।
পথশিশুদের নিয়ে কাজ করছে `শিশু অধিকার ফোরাম`। তার সমন্বয়ক মো. মাহমুদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পথশিশু বলতে বোঝায় যারা রাস্তায় থাকে, যারা ভাসমান। এক কথায় ঠিকানাবিহীন। বাবা মার সঙ্গে বিচ্ছেদ। আজ এখানে তো কাল ওখানে। কোন জায়গাতে স্থায়ী হয় না।
তার মতে, খুব সহজে মূলধারায় নিয়ে আস যায় না। খুব বড় ধরনের উদ্যোগ দরকার। শুধু থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করলেই হবে না। তাদের খুশিমতো সব ব্যবস্থা করতে হবে। ওরা কাউকে বিশ্বাস করতে চায় না।
মাহমুদ বলেন, মাস্তানরা ওদের স্থায়ীভাবে ব্যবহার করে থাকে। ফলে তাদের মধ্যে আইন ভাঙ্গার প্রবণতা দেখা দেয়। পুলিশও তাদের ব্যবহার করে থাকে। তবে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে বাঁচতে হয় বলে তারা বেশ চালাক চতুর হয়।
এদিকে পথশিশু সংগঠন `অপরাজেয় বাংলা`র প্রকল্প পরিচালক ড. জাদু বাংলানিউজকে বলেন, এসব পথশিশুকে মূল ধারায় নিয়ে আসতে হলে আগে তাদের আস্থা অর্জন করতে হবে। তা না করতে পারলে ওরা কাউকে বিশ্বাস করতে চায় না। `
তিনি বলেন, `আমরা আমাদের আশ্রয়কেন্দ্রেগুলোতে শিশুদের থাকার ব্যবস্থা করেছি, তাদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা আছে। প্রয়োজনীয় খাবার ও কাপড় আমরা দিই। তারপর তারা যাতে আর পথে ফিরে না যায় তার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষার ব্যবস্থা। আর রয়েছে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও। `
মাহমুদ ও ড. জাদু দুজনেরই মতে, প্রায় ৮ লাখ শিশু এভাবে ঝুঁকির মধ্যে রয়ে গেছে। কিন্তু তাদের জন্য যে পরিমাণ উদ্যোগ দরকার রাষ্ট্র তা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। কিন্তু এদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে রাষ্ট্রের উদ্যোগ জরুরি।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৮ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১১।