ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো দুই মেরুতে

শামীম খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৭ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১১

ঢাকা : তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল নিয়ে রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে অবস্থা নিলেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অবস্থান এর সম্পূর্ণ বিপরীতে।

অর্থাৎ তারা দুই মেরুতে অবস্থান করছে ।

আবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের কারো কারো বক্তব্য আওয়ামী লীগের কাছাকাছি হলের কেউ কেউ এ ব্যাপারে ভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন।

আদালতের রায় অনুসরণ করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, বিসমিল্লাহ ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল করার অধিকারও বাতিল করার পক্ষে মত দেন। তাদের মতে, আদালতের রায়েই এগুলো বাতিল হয়ে গেছে।

আওয়ামী লীগের জোটের বাইরের রাজনৈতিক দলগুলো আরো দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন।

তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির ডাকা হরতাল অযৌক্তিক বলে তারা মনে করছেন। এব্যাপারে জাতীয় সংসদ ও সংবিধান সংশোধন বিশেষ কমিটিতে এসে তাদের বক্তব্য তুলে ধরার জন্য তারা বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা ঐকমত্যের ভিত্তিতে স্দ্ধিান্ত গ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগের প্রতিও আহ্বান জানান।
   
এ ব্যপারে ওয়ার্কাার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বাংলানিউজকে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে। এটাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে। হরতাল দিয়ে রাজপথ উত্তপ্ত করে তো এর সমাধান হবে না। তারা যদি মনে করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখতে হবে তবে সংসদে এসে বলুক, আলোচনা করুক। এখন এ ব্যাপারে ঐক্যমতের প্রয়োজন আছে এ জন্য সংসদে এসে কথা বলতে হবে। তাদের তো সংবিধান সংশোধন বিশেষ কমিটি থেকেও আহ্বান জানানো হয়েছে তাদের মতামত দেয়ার জন্য।

জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুও চান বিরোধী দল বিএনপি সংসদে এসে এবং বিশেষ কমিটিতে তাদের মতামত দিক।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আদালতের রায়ের আলোকে কথা বলেছেন। সংবিধান সংশোধন বিশেষ কমিটি এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিভাবে নিরপেক্ষ ব্যবস্থায় নির্বাচন করা যায় সেটা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করার সুযোগ রয়েছে। ’

‘হরতাল দিয়ে সমস্যার সামাধান হবে না। আদালতের রায়ের পর সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সরকার তো আলোচনার দ্বার খোলা রেখেছে। হাইকোর্টের রায়ে দুই মেয়াদ রাখা যেতে পারে বলা হয়েছে। আবার যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবৈধ বলেছে সেহেতু সেক্ষেত্রে নির্বাচন করতে গেলে কেউ তা বন্ধ করে দেয় কিনা সে বিষয়টিও ভাবতে হবে। তাই এটা রাখা যাবে কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে। সব কিছুর সমাধানই একমাত্র আলোচনা। ’ বললেন ইনু।

ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন,‘নির্বাচন কমিশনসহ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো সুসংহত হয়নি। নির্বাচন কমিশনকে আরো স্বাধীন ও শক্তিশালী হওয়া দরকার। তাছাড়া আওয়ামী লীগ যদি আদালতের রায়কে ভিত্তি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা না রাখতে চায় তবে পঞ্চম ও অষ্টম সংশোধনী নিয়ে আদালত যে রায় দিয়েছে তাতে তো বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও ধর্মীয় রাজনৈতিক দলও তো বাতিল হয়ে যায়। ’

তিনি বলেন,‘এ জন্য সবার সঙ্গে আলোচনা ও ঐক্যমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এজন্য বিএনপিকে সংসদে যেতে হবে, কথা বলতে হবে, মতামত দিতে হবে। হরতাল দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। ’

একই ধরণের মন্তব্য করেন গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিম। তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের আলোকেই প্রধানমন্ত্রী তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের কথা বলেছেন। সেটা যদি হয় তবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের অধিকার থাকে কী করে? আদালত তো অবৈধ ক্ষমতা দখলকারিদের বিচারের কথাও বলেছে। তাহলে এসব বিষয়েও আদালতের রায় অনুসরণ করা উচিত।   আদালত যেহেতু আরো দুই টার্ম রাখা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে সেহেতু এ বিষয়ে সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই ঐকমত্যে আসা উচিত। ’

১৪ দলের বাইরে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)র সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত মানা উচিত। আবার আদালতের পরামর্শও গ্রহণ করা উচিত। আগামী দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার সুপারিশ করা উচিত সংবিধান সংশোধন বিশেষ কমিটির। তবে বিএনপি যে হরতাল ডেকেছে এই হরতাল জনগণের পক্ষের হরতাল না। এর কোনও যৌক্তিকতা নেই। ’

বাসদের আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়কর সরকার রাখা এবং বাতিল করা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ক্ষমতাকেন্দ্রিক ব্যাপার। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ও বিশ্বাসের অভাব থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। যে কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছিলো তা এখনো বিদ্যমান। এটা এখনই বাতিল করলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক সংকট জন্ম হবে। ‘

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছে আইনের শাসন বিশ্বাস করলে সে রায়কে অনুসরণ করতে হবে। এ রায়কে মানা আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো। আন্দোলন, হরতাল করা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পক্ষে না। আদালতের রায়কে অপমান, অবমাননা করা হয়। ‘  

বাংলাদেশ সময় ২২০০ঘন্টা, জুন ০১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।