[আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি করে ২০০৯-১০ অর্থ বছরে ২১৪ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা নানা সমস্যার পাকচক্রে ঘুরপাক খান অহরহ।
আখাউড়া: আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি করে ২০০৯-১০ অর্থ বছরে ২১৪ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। এটা বিগত যে কোনও অর্থ বছরের চেয়ে বেশি। তবে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা হলেও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিশীল এ বন্দরের ব্যবসায়ীরা নানা সমস্যার পাকচক্রে ঘুরপাক খান অহরহ।
অপরদিকে আগরতলার ব্যবসায়ীদের মতে,‘ওয়ান টাইম বিজনেস’ মনোভাবের কারণে ভারতের সেভেন সিস্টার্স বলে খ্যাত ৭টি রাজ্যের বিশাল বাজার ধরতে পারছেন না বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।
তাদের অভিযোগ, বিল নিয়ে ওপাড়ের ব্যবসায়ীদের গড়িমসির কারণে এপাড়ের রপ্তানিকারকরা পড়ে যান বিপাকে। ফলে অকারণে মানি লন্ডারিং মামলার ফাঁদে পড়ে হতে হয় পেরেশান।
এসব বাস্তবতার আলোকে আখাউড়া স্থলবন্দরের ভেতর-বাহিরের নানান সমস্যা-সংকট আর সম্ভাবনা নিয়ে বাংলানিউজের আখাউড়া প্রতিনিধি নাসির উদ্দিনের ৩ পর্বের বিশেষ প্রতিবেদনের প্রথম কিস্তি
রপ্তানি করা পণ্যের বিল নিয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের গড়িমসির কারণে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই।
আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নিয়ম অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করার কথা। কিন্তু ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার ব্যবসায়ীরা পণ্য ডেলিভারি নেওয়ার পর বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও পণ্য মূল্যের বিল ছাড়ছেন না।
এদিকে, বিল নিয়ে ওপারের ব্যবসায়ীদের গড়িমসির কারণে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা পড়ে যান বিপাকে। একই সঙ্গে মানি লন্ডারিং মামলা থেকে বাঁচতে এ দেশের ব্যবসায়ীরা আগরতলার ব্যবসায়ীদের বার বার তাগিদ দিয়ে যান বিল ছাড়ের- কিন্তু তাতে ফল তেমন একটা হয় না। এ ধরনের দোটানায় পড়ে অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীও নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন বলে ব্যবসায়ীরা জানায়।
উল্লেখ্য, আখাউড়া স্থলবন্দরটি ৯৯ ভাগ রপ্তানি মূখী। এ বন্দরে ১০৮ জন আমদানি-রপ্তানিকারক রয়েছে। এখানে অগ্রীম টেলিফোনি ট্রান্সফার (টিটি), লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) ও কন্ট্রাক্ট (চুক্তিপত্র) এ তিন মাধ্যমে আগরতলার ব্যবসায়ীরা এ দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ডলারের মাধ্যমে লেনদেন করেন।
এর মধ্যে লেনদেন টিটি ও এলসির মাধ্যমে হলে দু’দেশের ব্যাংক দায়ী থাকে। ব্যাংক পণ্যের মূল্য আদায় করে দেয়ার গ্যারান্টি দেয়। আমদানিকারক পণ্যের মূল্য না দিলেও ব্যাংক দিতে বাধ্য। কিন্তু লেনদেন কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে হলে ব্যাংক দায়বন্ধতা নেয় না। কন্ট্রাক্ট পদ্ধতিতে পণ্যের মূল্য আদায় করে নিতে এ দেশের ব্যবসায়ীদের বারবার তাগিদ দিয়ে হয় আগরতলার ব্যবসায়ীদেরকে।
মানি লন্ডারিং মামলার ফাঁড়া
অপরদিকে, পণ্যের মূল্য আদায়ে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারকদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করে। মামলা থেকে বাঁচতে রপ্তানিকারকরা আমদানি কারকদেরকে বার বার তাগিদ দিয়ে পণ্যের মূল্য আদায় করে থাকে। এতে এপারের ব্যবসায়ীরা নানান হয়রানি শিকার হন। অহেতুক নানা জন ও সংস। থকে দিতে হয় বাড়তি বখরা। বিষয়টা যেন লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাওয়ার মত। এসব কারণে এদেশের অনেক ব্যবসায়ী রপ্তানি ব্যবসাই ছেড়ে দিয়েছেন।
বিভিন্ন জটিলতার কারণে এখন আগের মতো কন্ট্রাক্ট্রের ব্যবসাটাও তেমন হয় না।
আরও জটিলতা
সাধারণত ওপারের ব্যবসায়ীরা এদেশের একাধিক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে একই পণ্য নিয়ে থাকেন। উদ্দেশ্য, বিল পরিশোধ না করার কারণে কেউ পরবর্তীতে রপ্তানি বন্ধ করে দিলে আরেকজনের কাছ থেকে একই পণ্য একই কায়দায় আমদানি করা। এতে করে আগের বিল পরিশোধ না করেই একই পণ্যের সরবরাহ তারা সহজেই পেয়ে থাকন।
এ সব কারণে এ পাড়ের রপ্তনিকারকদের ন্যায্য বিল ছাড়তে তারা গড়িমসি করেন বলে একটি সূত্র জানায়। ব্যাপারটি এখন এ বন্দরে ব্যবসায়ীদের প্রধান সমস্যা ও মুখ্য আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের মেসার্স রাব্বি এন্টারপ্রাইজের মালিক ফজলে রাব্বি ও মেসার্স ভূঁইয়া ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকার শাহাদাত হোসেন লিটন বলেন, ব্যাংক থেকে বারবার চিঠি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আগরতলার ব্যবসায়ীরা বিল ছাড়ছেন না বছরের পর বছর ধরে। মামলা থেকে রেহাই পেতে ওপারের ব্যবসায়ীদের আমরাও বারবার চিঠি দিচ্ছি। কিন্তু এতেও কাজ হচ্ছে না। এর ফলে আমরা বিপাকে পড়ছি।
তিনি হতাশা প্রকাশ করে বেলন, ‘বিল আটকে থাকার ফলে আমরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। এ কারণে আমাদের মতো অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটিয়ে বাড়িতে চলে গেছেন। ’
একটি সূত্র জানায়, কন্ট্রাক্ট প্রথায় বাংলাদেশ থেকে কয়েক বছর আগে পাথর ও মাছ রপ্তানি হয়েছিল আগরতলায়। এরপর বিভিন্ন অজুহাতে ওপারের ব্যবসায়ীরা মাছ ও পাথর রপ্তানিকারী ২০ থেকে ২৫ জন ব্যবসায়ীর বিল ঝুলিয়ে রেখেছেন বছরের পর বছর ধরে। এ পাকচক্রে পড়ে এ পাড়ের অনেক ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আখাউড়া স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন বাবুল বাংলানিউজকে বলেন, ‘নানাভাবে তদবির করে ইতিমধ্যে অনেক ব্যবসায়ীর বিল আনা হয়েছে। বাকিগুলো আনার প্রক্রিয়া চলছে। এখন আর কন্ট্রাক্টে এ বন্দরে ব্যবসা তেমন হয় না। বিল জটিলতা আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে। ’
এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ভারতের আগরতলা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনীষ বিশ্বাস (হাবুল) বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের কিছু ব্যবসায়ীর বিল আটক থাকতে পারে। তবে তার সমাধান অচিরেই হয়ে যাবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, ০২ জুন, ২০১১