কক্সবাজার: ‘বাজেট নামের শোষণের হাতিয়ার মাথায় নিয়ে যে এখনও বেঁচে আছি তাই যথেষ্ট। প্রতি বছর এ দৈত্য নতুন শক্তি নিয়ে আমাদের ঘাড়ে সওয়ার হয় আর ঘাড় মটকে রক্ত খেয়ে সে বেঁচে থাকে।
বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে কক্সবাজারের প্রবীণ শিক্ষাবিদ মোস্তাক আহমদ বাংলানিউজকে একথা বলেন।
রামু কলেজের সাবেক এ শিক্ষক বাংলানিউজকে বলেন, ‘উপরি কাঠামোর লোকজন তাদের অবস্থান থেকে বাজেট তৈরি করে। তারা জনগণের মুষ্টিমেয় অংশ। তাদের তৈরি ব্যঞ্জন তো তাদের ডাইনিং টেবিলে পরিবেশনের উপযুক্ত করেই তৈরি করা। সে রান্না আস্বাদনের ভাগ্য জনগণের থাকার কথা নয়। সে আশা করাও দুরাশা। ’
কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি সালামত উল্লাহ খান তার বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বাংলানিউজকে বলেন, ‘সামগ্রিক বাজেট গত বছরের বাজেটের প্রায় অনুরূপ। তবে পোলট্রি খামারে ৫শতাংশ কর বসানো ও প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি, বিচারপতি, আমলাদের কর আওতায় আনায় কিছু নতুনত্ব আছে। ‘
তিনি বলেন, ‘প্রভাবশালীদের করের আওতায় আনার বিষয়টি সাহসী হলেও পোলট্রি শিল্পে করারোপে দেশি শিল্পটি বেকায়দায় পড়বে। ফলে এ খাতে বিদেশি পণ্যের অনুপ্রবেশ ঘটবে। এমনিতে পোল্টির শিল্প বিদেশি আগ্রাসন, ঔষধ, ফিডসহ বিভিন্ন রোগ ব্যাধি এবং উপকরণের মাত্রাতিরিক্ত দামের সমস্যায় জর্জরিত। এসব কারণে অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। এমনিতে এ শিল্পে সরকারের তেমন কোনও সহযোগিতা নেই। তার ওপর ‘মড়ার গায়ে খাঁড়ার ঘা’ দেওয়ার মতো ট্যাক্সের বেড়াজালে পোলট্রিকে আবদ্ধ করা হলে চালু শিল্পগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। নিত্য প্রয়োজনীয় এ পণ্যটি সম্পূর্ণভাবে বিদেশ-নির্ভর হয়ে পড়বে। ’
সালামত উল্লাহ খান বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘কী বিবেচনায় অর্থমন্ত্রী এ কাজটি করলেন বোঝা গেলো না। ’ তিনি প্রস্তাবিত এ কর প্রত্যাহারের জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।
কক্সবাজার-রামু আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপি দলীয় সাংসদ লুৎফুর রহমান কাজল তার বাজেট ভাবনায় বাংলানিউজকে বলেন, ‘কক্সবাজারবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্র্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক কক্সবাজার সফরের সময় মহেশখালীর সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন, কক্সবাজারের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ক্রিকেট স্টেডিয়াম, দোহাজারি থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণ, চট্টগ্রাম- কক্সবাজার আঞ্চলিক মহাসড়ক, পর্যটন উন্নয়ন ও মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন।
কিন্তু এবারের বাজেটে এসবের জন্য কোনও বরাদ্দ রাখা হয়নি। ’
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর কক্সবাজার জাতীয় অর্থনীতিতে ৩৫ হাজার কোটি টাকা জোগান দেয়। কক্সবাজারের প্রায় তিন লাখ প্রবাসীর রেমিটেন্স এবং চিংড়ি, সামুদ্রিক মাছ, লবণ, পান, হোটেল-মোটেলসহ নানা খাত থেকে এ রাজস্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এ বাজেটে একশত কোটি টাকাও বরাদ্দ না দেওয়া হতাশাজনক। ’
তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারের উন্নয়নে নতুন বরাদ্দ দূরে থাক- পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে গত বছরের তুলনায় এবারের বাজেটে বরাদ্দ প্রায় ৩০ শতাংশ কমানো হয়েছে। ‘
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘কক্সবাজারে জন্য বরাদ্দ শুধু খরচ নয়। এর প্রতিটি টাকাই বিনিয়োগ। কক্সবাজারের যত উন্নয়ন হবে তা দেশের কাজে লাগবে। ’
তিনি কক্সবাজার থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের সিংহভাগ কক্সবাজারের জন্য বরাদ্দ করার আহ্বান জানান।
কক্সবাজার ব্যবসায়ী সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি মোস্তাক আহমদ তার বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘কক্সবাজার বিশ্বের অন্যতম প্রধান পর্যটন নগরী। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত এখানে রয়েছে। এটা বাংলাদেশের মুখ। অনেক জায়গায় কক্সবাজার দিয়ে বাংলাদেশ পরিচিত হয়। কিন্তু বাজেটে কক্সবাজারের সামগ্রিক উন্নয়নে কোনও বরাদ্দ নেই। ’
কক্সবাজার হোটেল মোটেল ও গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বাংলানিউজকে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘বাজেট ঘোষণা মানে জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ। গণমানুষকে কষ্টে ফেলার জন্য প্রতিবছর বাজেট আসে। বাজেট ঘোষণার সময় আসলে মানুষের মধ্যে এক ধরনের চাপা আতংক সৃষ্টি হয়। বাজেটে না জানি কী আছে। ’
আবুল কাশেম সিকদার আরও বলেন, ‘আমরা ছা-পোষা মানুষ। বাজেটের কী বুঝি। শুধু এটুকু বুঝি গত বছরের চেয়ে আমাদের কষ্ট আর এক ধাপ বাড়লো। ’
কক্সবাজার বণিক সমিতির সভাপতি মফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাজেটের মাধ্যমে জনগণের ওপর সরকার ও প্রভাবশলীদের শোষনকে আইনসঙ্গত করা হয়। এটাই বুঝি। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৪ ঘণ্টা, ১২ জুন, ২০১১