ঢাকা: ভারত থেকে মাদকসহ বিভিন্ন মালামাল চোরাচালানের সময় বাংলাদেশের অনেক শিশু ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বিএসএফ’র নির্যাতনের শিকার হয়।
১৩ বছর বয়সী জামাল (ছদ্ম নাম) একজন বাংলাদেশি চোরাকারবারী।
জামাল জানিয়েছে, কয়েক মাস আগে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার সময় কাঁটাতারে তার হাত আটকে যায়।
এ সময় মরিয়া হয়ে কাঁটাতার থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা চালায় জামাল। আর তখনই বিএসএফ’র জওয়ানরা এসে তাকে ভারতীয় ভূখণ্ডে ধরে নিয়ে যায়।
ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের পায়ের শক্ত বুট জামালের হাতের তালু চেপে ধরে। তীব্র যন্ত্রণায় কুকড়ে গেলেও মুক্তির চেষ্টা করতে থাকে জামাল। এরই এক পর্যায়ে জওয়ানদের হাত থেকে ছাড়া পায় সে। জামাল চলে আসে বাংলাদেশে।
এরপর কখনই জামাল আর চোরাই চালান নিয়ে ভারতে যায়নি। এতে করে তার আয়ের পথও বন্ধ হয়ে গেছে। জীবিকা নিয়ে জামাল তাই উদ্বিগ্ন। কারণ চোরাকারবারিতে প্রতিদিন ৩শ’ (চার ডলার) টাকার রোজগার ছিল জামালের।
জামালের মতোই বাংলাদেশের অনেক শিশুই অভাবের তাড়নায় জড়িয়ে পড়ছে কোনও চোরাকারবারি দলের সঙ্গে। দৈনিক ২/৩ শ’ টাকার জন্য তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। অথচ যে সময়টায় তাদের পড়াশোনা করার কথা, সে সময়টায় তারা রাষ্ট্রীয় নিষেধ সত্ত্বেও অনৈতিক এ পেশাটিই তাকে বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
সীমান্তের দু’পাড়েই এসব শিশুর সংখ্যা নেহায়েত কম না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা চকোলেট থেকে শুরু করে মাদক দ্রব্য এমনকি গরু পর্যন্ত চোরাকারবারি করছে।
এসব শিশু ও নারী পাচার রোধে কাজ করছে ‘রাইটস যশোর’ নামের একটি এনজিও।
রাইটস যশোরের কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় জীবিকা নির্বাহের জন্য শিশুদের চরম মূল্য দিতে হয়। অনেক শিশু আবার শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। বিশেষ করে নারীরা যখন তারা চোরাকারবারীতে জড়িয়ে পড়েন। ’
তিনি আরও বলেন, ‘মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বিএসএফ’র এ নির্যাতনের সমালোচনা করা হলেও তারা নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। ’
গত ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি মানবাধিকার সংগঠন তাদের এ বিষয়ক প্রতিবেদনে বিএসএফ’র এমন অনেক নির্যাতনের এবং হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে।
এর মধ্যে কয়েকটি ঘটনার তদন্ত হলেও কাউকে কোনও শাস্তি দেওয়া হয়নি।
পশ্চিমবঙ্গের এক শিশু চোরাকারবারী রাজু ব্রাক্ষ্মণ জানায়, তাকে প্রতিদিন ৪/৫ জন ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীর চোখ এড়িয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মালামাল নিতে হয়। এজন্য প্রতিদিন সে ৭০ রুপি করে পায়।
সে জানায়, সে ভারতীয় মালামাল সেলিম নামে এক বাংলাদেশি পার্টনারের কাছে সরবরাহ করে এবং সেলিমের কাছ থেকে সে বাংলাদেশি মালামাল নিয়ে যায়।
‘আমরা মাঝে মাঝেই সীমান্ত রক্ষীদের কাছে ধরা পড়ি এবং তারা আমাদের উপর ব্যাপক নির্যাতন করে তারা। তারপরও আমরা এ কাজ করছি, কারণ আমরা গরিব। ’
বাংলাদেশ সময়: ১০৩২ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১১