ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

পড়ে আছে ৬১ কোটি টাকার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকক্ষ

মহিবুব জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১১

ঢাকা: কারিগরি ত্রুটির কারণে চালু করা হচ্ছে না রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে ৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিজিটাল ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকক্ষ। পড়ে থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান সরঞ্জামাদি।



প্রকল্পটি প্রাথমিক পর্যায়ে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হওয়ার পরে কিছু ত্রুটি থাকায় পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য এটি গ্রহণের (ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে) ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না পুলিশ। এ কারণে প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শেষ হওয়ার দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও সর্বাধুনিক এ ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা যাচ্ছে না।
 
প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রকল্পটির ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এতো বড় প্রকল্পের দায় কেউ নিতে চাচ্ছে না। প্রকল্প চালু না হওয়ায় এর মূল্যবান যন্ত্রপাতি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে পুরো প্রকল্পই ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের টেলিকম বিভাগের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্পের প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যা থাকায় তা সমাধানের জন্য বলা হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে। সমাধান করা হলেই এর মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আমরা প্রকল্পটি গ্রহণ করবো। ’

জানা যায়, পুলিশের কাজকে সহজতর ও গতিশীল করতে ১৯৯৮ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নিয়ন্ত্রণকক্ষ আধুনিকায়নের এ প্রকল্প অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। শুরুতে এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৮ কোটি ৮ লাখ টাকা, পরে তা বেড়ে ৬১ কোটি ৪১ লাখ টাকা হয়।

প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন ও কেন্দ্রীয়ভাবে অপরাধ, ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ; ট্রাফিক ডিসপ্লে বোর্ডের মাধ্যমে রাস্তার যানজট পরিস্থিতি উন্নয়ন এবং পুলিশের বেতার যোগাযোগ ডিজিটাল করা।
 
প্রকল্পের অংশ হিসেবে গত বছরই ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ৫৯টি মোড় আর প্রবেশমুখে ১৫৫টি সিসি ক্যামেরা ও ৩১টি ট্রাফিক ডিসপ্লে বোর্ড লাগানো হয়। নগরীর আবদুল গনি রোডে স্থাপিত হয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ (কমান্ড, কন্ট্রোল, কমিউনিকেশন)।
 
এছাড়া প্রকল্পের অংশ হিসেবে পুলিশকে দেওয়া হয় ১০২৩টি আধুনিক টেটরা পদ্ধতির (টেরিস্ট্রিয়াল ট্রাংকড রেডিও) রেডিও। থানা পুলিশের ৩০টি টহল গাড়িতে লাগানো হয় স্বয়ংক্রিয় যান সনাক্তকরণ যন্ত্রপাতি। এর মাধ্যমে ওই গাড়িগুলো কোথায় থাকছে তা নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসেই দেখা যায়।

প্রায় দেড় বছর এ প্রযুক্তিগুলো পরীক্ষমুলকভাবে ব্যবহার করেছে পুলিশ। পরে বিভিন্ন অজুহাতে এগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ সমস্যাকেও অজুহাত হিসেবে দেখানো হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এ প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু হলে আব্দুল গনি রোডে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ৩৫টি পর্দায় শহরের ৫৯ স্থানের অবস্থা সার্বক্ষণিকভাবে দেখা যাবে। কর্মকর্তারা সেসব দৃশ্য দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে কোনো কর্মকর্তা এক বা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। শহরের কোথাও গোলযোগ বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের যাতায়াত কেন্দ্রে বসেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
 
ব্রুনাইভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফলেক কমিউনিকেশনস এসব যন্ত্রপাতি স্থাপন করে। অবকাঠামো উন্নয়নসহ প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শেষে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকল্পটি পুলিশের কাছে হস্তান্তরের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুলিশকে চিঠি দেয়। পুলিশ প্রকল্প গ্রহণের জন্য পরীক্ষামুলক ব্যাবহার করতে গিয়ে জানতে পারে, এতে বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে। এর মধ্যে ক্যামেরা ও ডিসপ্লে বোর্ড মাঝে মাঝে অকেজো থাকে, ভবনের ভেতরে বা গলিতে যোগাযোগ যন্ত্রপাতি কাজ করে না ইত্যাদি।
 
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পুরো ব্যবস্থাটি চলে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে। ক্যামেরাগুলোতেও কোনো তারের সংযোগ নেই। এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সময় রাজধানীতে বহুতল ভবন ছিল হাতেগোনা। এখন প্রচুর উঁচু ভবন হওয়ার কারণে বেতর তরঙ্গ বাধা পাচ্ছে। ফলে অনেকগুলো ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে প্রায়ই বিচ্ছিন্ন থাকে, ওয়্যারলেসও কাজ করছে না ঠিকমতো। এসব সচল করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেজ স্টেশন বাড়ানো ও রেডিও ব্যবস্থার বদলে ফাইবার অপটিক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়।
 
সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে এ প্রকল্পের পরিচালক ও পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (টেলিকম) এওয়াইএম বেলালুর রহমান মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠান এবং প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা উল্লেখ করে সেই প্রকল্প গ্রহণ করা হবে কি না সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের মতামত চান।

প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, সবগুলো ক্যামেরা ও ডিসপ্লে বোর্ডকে একসঙ্গে সক্রিয় পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আলাদা আলাদভাবে পাওয়া যায়। এজন্য তরঙ্গ বাধাগ্রস্ত হওয়া ও বিদ্যুৎ সমস্যার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এসব সমস্যার কারণে পুলিশ সদরদপ্তর প্রকল্পটি গ্রহণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।

এ পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় গত মার্চে এক চিঠিতে অচল যন্ত্র¿ প্রতিস্থাপন ও দুই বছরের ওয়ারেন্টির বিষয়ে ঠিকাদারের অঙ্গীকার সাপেক্ষে এসব যন্ত্রপাতি গ্রহণের মতামত দেয়।

পুলিশ সদরদপ্তরের কর্মকর্তারা স্বীকার করেন, এতকিছুর পরও এ নিয়ে পুলিশ টেলিকম কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্প গ্রহণের পর থেকে দুই বছর পর্যন্ত এর যন্ত্রপাতি সচল রাখবে। প্রত্যেকটি যন্ত্রপাতির ওয়ারেন্টিও দুই বছর।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।