ঢাকা : রাজধানীর যানজট নিরসনে গত বছর ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে ও ঢাক-ঢোল পিটিয়ে চালু করা ওয়াটার বাসের ব্যাপারে সরকারি এবং বিশেষজ্ঞ মহলের কারোরই কোন পরিকল্পনা ছিলনা।
শুধুমাত্র নৌ-রুটে একটি যানবাহন চালানোর কাল্পনিক ধারণার ওপর শুরু হয় ওই প্রকল্প, চালু করা হয় ওয়াটার বাস।
কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রাথমিক পর্যায়ের অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত, যানবাহনটির নকশাগত ভুল এবং সময়মত সেবা না দেয়ার মাশুল দিতে হলেও আগামী ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যে আরও বড় আকারে ওয়াটার বাস সেবা আসছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)’র চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কামাল ওয়াটার বাস যান সম্পর্কে এবং প্রকল্পের ব্যাপারে বাংলানিউজের সাথে খোলাখুলি আলাপকালে এসব ব্যাপার উঠে আসে।
অনিয়মের শুরু, অভিযোগের পাহাড় : সেবা চালুর এক মাসের মাথায় সময়মত ওয়াটার বাস না পাওয়ার জোরালো অভিযোগ ওঠে। যাত্রীদের অভিযোগ, সময় বাঁচাতে গিয়ে সবসময়ই সময় খোয়াতে হয়।
প্রতিটি বাসের গন্তব্যে যেতে সময় লাগার কথা ৫০ মিনিট। উদ্বোধনকালে নৌ-পরিবহনমন্ত্রীও এ কথাই বলেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে সর্বনিম্ন দেড় ঘণ্টা হতে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় পার হয়ে যেতে শুরু করে।
ধীরে ধীরে অভিযোগের পাহাড়ের উচ্চতা বাড়তে থাকে। ওয়াটার বাসের নির্মাণশৈলী নিয়েও যাত্রীদের মাঝে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ ওয়াটারবাস দু’টিতে লাইফ সাপোর্ট, লাইফ বয়া, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, শৌচাগার ইত্যাদির ব্যবস্থা নেই।
এ ছাড়া তাড়াহুড়ো করে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে বাহনগুলো তৈরি করার ফলে শুরুতেই নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বুড়িগঙ্গা নামের বাসটির জানালা ভেঙে যায় যাত্রা শুরুর কয়েকদিনের মধ্যেই।
হরহামেশা ছাদেও যাত্রী বহন করার ঘটনা ঘটতে থাকে। নোঙর করার জেটির সঙ্গেও নেই এর সামঞ্জস্য। জেটি থেকে বাসটির বডি অনেকটা নিচু হওয়ায় যাত্রীদের ওঠানামা করতে হতো লাফালাফি করে।
শুরু থেকেই ছিল না লোকবল, ছিল অদক্ষতা ছাপ : খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওয়াটার বা দু’টি চালুর পর হতে এ প্রকল্পের নির্দিষ্ট কোন লোক নিয়োগ দেয়া হয়নি। কখনো অদক্ষ চালক দিয়ে চালানো হচ্ছিল ওয়াটার বাস। ফলে চালুর পর বিআইডব্লিউটিসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পালা করে দায়িত্ব পালন করতেন।
দায়িত্ব পালনকারি একাধিক কর্মচারী জানান, মন্ত্রীর নির্দেশে তড়িঘড়ি করে ওয়াটার বাস চালু করতে হয়েছিল, তাই চালুর পর অনেক সমস্যা দেখা যায়।
‘তুরাগ’ ওয়াটার বাসে কিছুদিন টিকিট কাটার দায়িত্বপালনকারি বিআইডব্লিউটিসি’র সহকারী ব্যবস্থাপক আবদুল হামিদ খান জানান, চালু করার আগে ওয়াটার বাসের জন্য বিশেষ জেটি তৈরি ও প্রয়োজনীয় দক্ষ লোকবল নিয়োগ প্রয়োজন ছিল।
বিআইডব্লিউটিসি’র সহকারী মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান স্বীকার করেন, লোকবল ও টিকিটের সংকট থাকায় নির্দিষ্ট সময়ে ওয়াটার বাস ছাড়া যাচ্ছিল না। লোকবল সংকটসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানের জন্য বিষয়গুলো যথাসময়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল।
গাবতলী ল্যান্ডিং স্টেশনে টিকিট কাউন্টার থাকলেও তা সবসময়ই থাকতো বন্ধ। কর্তৃপক্ষের অজুহাত ও যাত্রী আশানুরূপ না হওয়ায় বাসের ভেতরে টিকিট কাটার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, সবচেয়ে বড় ভয়ের ব্যাপার ছিল এ দু’টি বাস যে চালকরা চালাচ্ছিলেন, এর আগে তাদের এ ধরনের বাহন চালানোর কোন অভিজ্ঞতাই ছিল না এবং এ যানগুলো চালানোর মাধ্যমেই তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছিল।
এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় সেবা : ওয়াটার বাসের নানা অনিয়ম, সেবা প্রদানে ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতার ফলে চলতি বছরের ১০ জুন এ সেবা এক রকম বন্ধ হয়ে যায়।
যদিও রাজধানীতে যানজট কমিয়ে আনতে সরকার ওয়াটার বাস প্রকল্প চালু করেছিল; কিন্তু ওয়াটার বাস চালুর ৬ মাস না যেতেই মুখ থুবড়ে পড়ে সরকারের এ উদ্যোগ, ১১ মাসের মাথায় বন্ধ হয়ে যায় সেবা।
রাজধানীর বৃত্তাকার নৌপথে চলাচলকারী প্রথম ওয়াটার বাস প্রকল্পের অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে ভেস্তে গেছে সরকারের বৃত্তাকার নৌপথ চালুর উদ্যোগও। ওয়াটার বাসের পেছনে সরকারের গচ্চা গেেছ ১ কোটি ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
তবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল যাত্রী সংকট ও লোকসানের মুখে পড়েই ওয়াটার বাস সার্ভিস বন্ধ করা হয়। চালু হওয়ার পরে ১১ মাস যাবৎ বাহনগুলোর পেছনে মোট লোকসান হয় ৪০ লাখ টাকা।
২০১০ সালের ২৮ আগস্ট চালু হওয়ার পরে ১০ জুন ২০১১ সালে বন্ধ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই ১১ মাসে ব্যয় হয়েছিল ৬২ লাখ টাকা। আর আয় ২২ লাখ টাকা। ফলে সরকারের লোকসান গুনতে হয়েছে ৪০ লাখ টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শুরু থেকেই নানা যান্ত্রিক ও কারিগরি ত্রুতি দেখা দেয়ায় নির্ধারিত সময়ে যাত্রা করতে পারত না ওয়াটার বাস। স্থানীয়ভাবে তৈরি বাহনের ৩৫ লাখের ওপরে টাকা দাম নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান আবদুল মালেক মিয়া বলেন, ‘ওয়াটার বাস তৈরিতে কোন ধরনের অনিয়ম হয়নি। আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গেই সবকিছু করেছি। ’
ওয়াটার বাস নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান থ্রি এঙ্গেল মেরিন কনসালটেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান, সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী ওয়াটার বাসের মূল ইঞ্জিন বিমানে করে ইংল্যান্ড থেকে আনা হয়। এছাড়া সরকারি দফতর হতে যে ধরনের নকশার ব্যাপারে সম্মতি জানানো হয় সেভাবেই ওয়াটার বাস নির্মাণ করা হয়।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসি’র কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তাড়াহুড়ো করে বাস দু’টি তৈরি করা হয়। ফলে চালুর পর পরই বাহনগুলোতে নানা ত্রুটি ধরা পড়ে। এতে এক-দু’দিন পর পরই তা বন্ধ হতে শুরু করে। দেড় মাসের মাথায় একটি ওয়াটার বাস নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ওই বাসটি তখনই বন্ধ করে দেয়া হয়।
কর্তৃপক্ষ যা বললেন : ওয়াটার বাস প্রকল্পের ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে জানান, ওয়াটার বাস সার্ভিস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি। যাত্রীদের ধরে রাখতে এখনও একটি-দুটি ট্রিপ সদরঘাট-গাবতলী রুটে চলাচল করছে।
ওয়াটার বাস দু’টির নাজুক অবস্থার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, মেরামত শেষে ওয়াটার বাস ‘তুরাগ’ এখন চলাচলের জন্য প্রস্তুত আছে। কিছুদিনের মধ্যেই এ বাসটি আবারও চলাচল শুরু করবে। ‘বুড়িগঙ্গা’র অবস্থাও এখন অনেক ভালো।
তবে মাত্র ২টি ওয়াটার বাস এতবড় রুটের জন্য একেবারেই অপর্যাপ্ত বিষয়টি স্বীকার করে গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে জানান, প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্প হিসেবে তারা এই ওয়াটার বাস চালু করেছিলেন। মূলত ঢাকার রাস্তার ওপর চাপ কমাতেই তারা নৌপথের ব্যবহার জনপ্রিয় করতে চাইছেন।
তিনি বলেন, প্রকল্পটি যখন গ্রহণ করা হয় তখন সঠিক কোন পরিকল্পনা ছিলনা। পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা বাহনগুলোর ব্যাপারে কারোরই কোন ধারণা ছিল না। যাত্রীদের কাছে এই সেবার চাহিদা এবং গ্রহণযোগ্যতা, এই একটি বিষয়কে টার্গেট করেই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল। ফলে সাময়িকভাবে অসুবিধায় পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষসহ কর্তৃপক্ষকেও।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে ইজারা দেয়ার জন্য ওয়াটার বাসের লোকসান দেখানো হয়েছে এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, সর্বশেষ গত তিনমাসে ওয়াটার বাসের পেছনে শুধুমাত্র তেল খরচ বাবদ সরকারের ব্যয় ৭ লাখ টাকা। অন্যদিকে এই ৩ মাসে আয় হয়েছে মাত্র ৫০ হাজার টাকা।
তিনি আরও বলেন, নৌরুটটি জনপ্রিয় করতেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেয়ার কথা চলছে। এ ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে।
এখনও পর্যন্ত কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম আসেনি জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের কাছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দাব,ি এই রুটটিকে লাভজনক অবস্থায় দাঁড় করাতে হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠান সদরঘাট থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার বিলাসবহুল ওয়াটার বাস চালু করবে বলেও জানান তিনি।
ঢাকার চারপাশের বৃত্তাকার নৌপথ ঘিরে দু’দফায় এ ধরনের সার্ভিস চালুর চেষ্টা হলেও তা সফল করা যায়নি। কিন্তু বিআইডব্লিউটিসি’র প্রধান মনে করেন, ভুল হতে শিক্ষা নিয়ে পুনরায় এ সেবার জন্য যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে সেখানে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
তিনি বলেন, ওয়াটার বাস সেবার শুরুর দিকে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার কারণে জনগণের মাঝে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি হয়। এমনকি প্রথম কিছুদিন ৩৫ যাত্রীর স্থলে ৭০-৮০ যাত্রীও বহন করতে হয়েছিল।
চেয়ারম্যান জানান, আগামী ৬ হতে ৮ মাসের মধ্যে আরও উন্নত প্রযুক্তিতে নির্মিত, আয়তনে এবং যাত্রী ধারণ ক্ষমতার দিক থেকে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ চারটি ওয়াটার বাস এ সেবায় সংযোজন করা হচ্ছে।
নতুন চারটি ওয়াটার বাস নির্মাণের কাজ দেয়া হয়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ঢাকা ডকইয়ার্ডকে। নতুন নির্মাণ করা প্রতিটি ওয়াটার বাসের পেছনে আনুমানিক ৫০ লাখ টাকার ওপরে খরচ হবে বলেও জানান তিনি।
চেয়ারম্যান বলেন, পুরনো দু’টি ওয়াটার বাস ছিল আয়তনে অত্যন্ত ছোট। এছাড়াও নকশা এবং নির্মাণ প্রক্রিয়ায়ও যথেষ্ট অভিজ্ঞতার ছাপ ছিলনা।
তিনি বাংলানিউজকে আরও বলেন, ওয়াটার বাসের ব্যাপারে ইতোমধ্যে বিদেশি বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের সাথে আলাপ আলোচনা করা হয়েছে। এসব আলোচনা শেষে নতুন চারটি বাসে যাত্রী আসন সংখ্যা রাখা হয়েছে ৭০টি। এছাড়াও যাত্রীদের নিরাপত্তা, মালামাল বহন, শৌচাগার, বিশ্রামাগারসহ নকশায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে।
পর্যাপ্ত বাহন না থাকার কারণে ওয়াটার বাস সার্ভিসের চাহিদা থাকলেও তা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান গোলাম মোস্তফা।
তিনি আরও বলেন, একটি ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে অন্যান্য যানবাহন প্রাপ্তির ব্যাপারটি পরবর্তীতে লক্ষ্য রাখা হবে। তবে পর্যাপ্ত সংখ্যক বাহন থাকলে আপ ও ডাউন রুটে যাত্রীদের ধরে রাখা যাবে।
চেয়ারম্যান বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হল- যানজট দূর করা এবং যাত্রীদের সময় বাঁচানোর লক্ষ্যে ওয়াটার বাসের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেটি ধরে রাখাই এখন সরকারের এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান টার্গেট।
শুরুর কথা : ২০০৫ সালের শুরুতে জোট সরকারের আমলে শুরু হয়েছিল বৃত্তাকার নৌপথ। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৬ কোটি টাকা। কিন্তু মাত্র ২ মাসের মধ্যে তা বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৫ সালের ৩ মার্চ বৃত্তাকার নৌপথ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে সদরঘাট থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু শেষে তা অব্যাহত থাকেনি।
বর্তমান সরকারের সময়ে ওয়াটার বাসের পরিকল্পনাটি নতুন করে গ্রহণ করা হয়। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটি চালু করার জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকার সংস্থান হয়।
২০১০ সালের ২৮ আগস্ট গাবতলী ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ওয়াটার বাস প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। ওইদিনই সদরঘাট-গাবতলী রুটে ওয়াটার বাস চলাচল শুরু করে।
‘বুড়িগঙ্গা’ ও ‘তুরাগ’ : বিআইডব্লিউটিসি তথ্য অনুযায়ী, ১ কোটি ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে এমএল বুড়িগঙ্গা ও এমএল তুরাগ নামে দু’টি বাস নামানো হয় গাবতলী-সদরঘাট রুটে। এর প্রতিটির দাম পড়ে ৩৫ লাখ টাকার ওপরে। এছাড়া এ দু’টি বাসের ল্যান্ডিং স্টেশন এবং চলাচলের জন্য রুট উপযুক্ত করার কাজে অবশিষ্ট টাকা ব্যয় হয়।
৪ মাসের মধ্যে নির্মাণের জন্য ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল থ্রি এঙ্গেল মেরিন কনসালটেন্টকে (বর্তমান নাম থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেড) কার্যাদেশ দেয়া হয়।
তথ্য অনুযায়ী, ২ ইঞ্জিন বিশিষ্ট এসব ওয়াটার বাসের প্রতিটি ইঞ্জিন ৭৫ অশ্বশক্তির। ওয়াটার বাস প্রতি ঘণ্টায় ৩০ লিটার তেল খরচ করে ১২ নটিক্যাল মাইল বা ২২ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম।
সে অনুযায়ী সদরঘাট থেকে গাবতলী পর্যন্ত পৌঁছতে সময় লাগবে ৫০ মিনিট। সদরঘাট থেকে গাবতলীর দূরত্ব ১৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার।
৩৮ দশমিক ৩৮ ফুট দীর্ঘ, ১১ দশমিক ৪৮ ফুট প্রস্থ ও ৪ দশমিক ৬০ ফুট গভীরতার প্রতিটি ওয়াটার বাস ৩৫ যাত্রী ধারণ করতে সক্ষম।
চারটি স্টপেজের ভাড়া : সদরঘাট থেকে গাবতলী যাওয়ার পথে এই ওয়াটার বাস আরও দু’টি ঘাটে থামার নির্দেশনা দেয়া হয়। নৌপথে এই ওয়াটার বাসে সদরঘাট থেকে গাবতলী যেতে প্রায় পঞ্চাশ মিনিট সময় লাগার কথা।
সদরঘাট-সোয়ারীঘাট-খোলামোড়া-গাবতলী রুটে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা পর পর এ বাস চলাচল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
৩৫ সিটের বাসে যাত্রীপ্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয় সদরঘাট থেকে সোয়ারীঘাট ১০ টাকা, খোলামোড়া ২০ টাকা ও গাবতলী ৩০ টাকা। একইভাবে গাবতলী থেকে খোলামোড়া ১০ টাকা, সোয়ারীঘাট ২০ টাকা এবং সদরঘাট ৩০ টাকা।
বাংলাদেশ সময় : ১৪১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১১