কেন্দ্রের অনুমোদন পাওয়া আহ্বায়ক কমিটিতে নেই ত্যাগী নেতারা। জেলার ১৭টি ইউনিটের ১৬ সভাপতি ১৫ সাধারণ সম্পাদককে অবমূল্যায়ন করে বিতর্কিতদের আহ্বায়ক কমিটিতে রাখা হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, জেলার ১৭টি ইউনিটের মধ্যে কেবল বালাগঞ্জ উপজেলা সভাপতি কামরুল হুদা জায়গিরদারকে করা হয়েছে সিলেট বিএনপির আহ্বায়ক। অথচ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাড়ি ছাড়ার রায় দিয়েছিলেন তার ভাই বিচারপতি নুরুল হুদা জায়গিরদার। এজন্য কামরুল হুদা জায়গিরদারকে নিয়েই নেতাকর্মীর মধ্যে বেশি অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
বালাগঞ্জ উপজেলার সাধারণ সম্পাদকের নাম আহ্বায়ক কমিটিতে না থাকলেও সদস্য তালিকায় আছেন জেলা কমিটির ৩৫ নম্বর সদস্য ফখরুল ইসলাম ফারুক। যার বিরুদ্ধে রয়েছে জালিয়াতি ও চেক ডিজঅনার মামলা। এছাড়া যুক্তরাজ্য থেকেও এ কমিটির সদস্য বনে গেছেন এমরান আহমদ চৌধুরী।
আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান করে নিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী ও তার শ্বশুর আহমদুর রহমান চৌধুরী মিলু। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সদর আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে তারা প্রচারণা চালিয়েছেন, বলেও অভিযোগ রয়েছে।
দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে সিলেট সদর উপজেলার খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হন বিএনপি নেতা মাজহারুল ইসলাম ডালিম। পদত্যাগের পর দল তাকে বহিষ্কার করে। অথচ তিনিও পুনরায় দলে ফিরে আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান করে নিয়েছেন।
নুরুল হুদা বিএনপিতে আসার বেশিদিন হয়নি। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির টিকিট জুটিয়ে নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে পরাজিত হন। তার বিরুদ্ধে প্রবাসীদের বিনিয়োগের অর্থআত্মসাৎ, জালিয়াতি ও মানবপাচার মামলা থাকলেও কমিটিতে ঠিকই স্থান করে নিয়েছেন। আলোচিত হারিছ চৌধুরীর ভাই কানাইঘাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন চৌধুরী ক্ষমতাসীন দলের স্রোতে গা ভাসিয়ে চলা ও গুণকীর্তন করার অভিযোগ থাকলেও আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পেয়েছেন।
জকিগঞ্জ উপজেলা/পৌর কমিটির সভাপতি/সম্পাদক সভাপতি সম্পাদক নেই। তাদের অবমূল্যায়ন করে নারী নির্যাতন মামলার আসামি ছিদ্দিকুর রহমান পাপলু ও আইন কলেজের ভিপি মাহবুবুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে জাল সনদ দিয়ে আইন কলেজে ভর্তি হয়ে ভিপি বনে যাওয়ার। পরবর্তীতে সরকারের পালা-বদল হলে তার জাল সনদ ধরা পড়লে ভিপি পদ বাতিল হয় বলেও জানান দলের নেতাকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেটে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে জড়িয়ে থাকা নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর জন্মভূমির কাউকে রাখা হয়নি ২৫ সদস্যের কমিটিতে। ঠাই হয়নি জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের কারোরই। অথচ দলের আহ্বায়ক হওয়া কামরুল হুদা জায়গিরদার বিগত ১৫ বছরে একটি মামলারও আসামি হননি। কিন্তু তার উপজেলা বালাগঞ্জের নেতাকর্মীরা মামলা হামলায় জর্জড়িত।
সিলেট সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতিকে বাদ সম্পাদক আবুল কাশেমকে কমিটিতে রাখা হয়। দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ কমিটিতে থাকলেও সভাপতির নাম নেই।
এদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বাসায় আহ্বায়ক কমিটির বিতর্কিতদের রাখা নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন গ্রুপ-উপ গ্রুপ পৃথক বৈঠকে মিলিত হয়ে নেতাকর্মীরা পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করেন।
এ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মতিউল বারী খোরশেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমার শরীরে যতো স্প্লিন্টার আছে, আহ্বায়ক কমিটির অনেকের রাজনীতির বয়স ততদিন হয়নি।
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, দ্রুত কাজ করার জন্য ক্ষণিক সময়ের জন্য ছোট করে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় নেতারা আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছেন। তবে উপজেলার সভাপতি/সম্পাদকরা কমিটিতে থাকলে ভালো হতো। তিনি বলেন, আমরা কেন্দ্রে কোনো তালিকা দেইনি। বিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা করে আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছেন।
সিলেট জেলায় বিএনপির ১৭টি ইউনিট রয়েছে। এরমধ্যে ১৩ উপজেলা ও ৪টি পৌরসভা। এরমধ্যে কেবল গোলাপগঞ্জ পৌরসভা ছাড়া সবগুলো ইউনিটে কমিটি আছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৯
এনইউ/ওএইচ/